দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। বেড়েছে সূচকসহ লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে চলছে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন। এ অবস্থায় গণপরিবহনসহ জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরামর্শে গত ৫ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা ব্রোকারেজ হাউজে না গিয়ে ডিজিটাল প্লাটফর্মে লেনদেন পরিচালনা করছেন।
লকডাউনে পুঁজিবাজারে লেনদেন মন্দাসহ শেয়ার দর কমে আসার ইতিহাস ছিল গত বছর। করোনার কারণে গত বছরের ২৫ মার্চ লেনদেন শেষে বন্ধ ঘোষণা করা হয় পুঁজিবাজারের কার্যক্রম। তার আগে লেনদেন ১৯ মার্চ ৪৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। এ ছাড়া, ১৫০ কোটি টাকা লেনদেন ছিল অহরহ।
এমন অভিজ্ঞতাতে এ বছর যখন করোনা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছিল তখন গুজব ওঠে পুঁজিবাজার আবারও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যেখানে পুঁজিবাজারে হাজার কোটি টাকা লেনদেন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। সেখানে আবারও লকডাউনের গুজবে লেনদেন নেমে আসে তিনশ কোটি টাকায়।
কিন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগেই জানিয়েছিল ব্যাংকের কার্যক্রম চালু থাকলে এবার বন্ধ হচ্ছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এমন বক্তব্যেও আশ্বস্ত হয়নি বিনিয়োগকারীরা। বরং লকডাউনের আগের দিন আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করলে সেদিন সূচকের পতন হয় ১৮২ পয়েন্ট।
লকডাউন শুরু হওয়ার পর দেখা যায় পুরো উল্টো চিত্র। এ সময়ে টানা নয়দিনের সূচকের উত্থান দেখেছে বিনিয়োগকারীরা। আর উত্থানের পর মূল্য সংশোধনের নামে মাত্র দুদিন সূচকের পতন হলেও লেনদেন ছিল হাজার কোটি টাকার ঘরে। তারপর আবারও উত্থান সূচকে, যা এখনও অব্যাহত আছে।
লকডাউনে গত ৮ কার্যদিবসে ৫ কার্যদিবসই হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেছে। বেড়েছে খাতভিত্তিক বেশির ভাগ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর।
রোববার ডিএসইর লেনদেনের সার্বিক চিত্র
২৫ কোম্পানির দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ
রোববার ২৫ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ শতাংশ পর্যন্ত। সার্কিট ব্রেকার বা শেয়ারের দর বৃদ্ধির ঊর্ধ্বসীমা বিবেচনায় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দর বাড়তে পারে যেকোনো কোম্পানির। একইভাবে কমতেও পারে।
এমন অবস্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের প্রায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে তিনটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। ১৩টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত। বাকিগুলোর দর বেড়েছে ৯ শতাংশ করে।
মূলত এসব কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা থাকলেও শেয়ার বিক্রি করতে আগ্রহী হন না বিনিয়োগকারীরা। শেয়ার ধরে রাখলে আরও মুনাফা হবে, কোম্পানির প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ভালো, ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে বা দেবে এমন খবরে মূলত বিনিয়োগকারীরা সেসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রিতে অনাগ্রহ দেখায়। এ ছাড়া, কোম্পানি ভিত্তিক বিভিন্ন গুজবেও দর বাড়ে দিনের সর্বোচ্চ।
এ তালিকায় আছে জেড ক্যাটাগরির জেনারেশন নেক্সট, যার শেয়ার দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। ৩ টাকার শেয়ার দিন শেষে দর বেড়ে হয়েছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। আছে মতিন স্পিনিং মিলস, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মোশাররফ হোসেন স্পিনিং মিলসের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে দর বৃদ্ধির এই তালিকায় গত ৭ এপ্রিল বিএসইসি যে ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ার দরের প্রান্তসীমা উঠিয়ে দিয়েছে সে কোম্পানিগুলোর উত্থান দেখা গেছে।
বিশ্লেষকের বক্তব্য
ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজার ভালো থাকলেই তো ভালো। আর সামনে ঈদ আছে। বিনিয়োগকারীরা এখান থেকে কিছুটা মুনাফা নিতে পারবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার এখন যেভাবে যাচ্ছে তাতে আতঙ্কের কিছু নেই। বরং কেউ যাতে কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঠকাতে না পারে সে বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিশ্চিত করলেই হবে। এ ছাড়া, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। বেশি লাভের আশায় অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পর ডিএসইএক্স সূচক আবারও সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টে উঠেছে। এর আগে গত ১৬ মার্চ এই সূচক ছিল ৫ হাজার ৫১৬ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৫ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৫ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১২ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৩ পয়েন্টে। মোট লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮০টির, কমেছে ১০৪টির। দর পাল্টায়নি ৭৭টির। লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এর আগে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১২৮ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৭৩ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৫টির, দর কমেছে ৮২টির। দর পাল্টায়নি ৪০টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৩১ কোটি টাকার।