লকডাউনের মধ্যেও সাপ্তাহিক ছুটির দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর মার্কেট ও শপিংমলে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কিছু শপিংমলে স্বাস্থবিধি মানতে দেখা গেলেও কিছু মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
ভিড়ের কারণে আশেপাশের রাস্তায় যানজটও দেখা গেছে।
রাজধানীর গুলশানের আড়ংয়ের প্রবেশ মুখে সিকিউরিটি গার্ড বলেন, ‘আপনারা গাড়ি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবেন না। ভেতরে গাড়ি রাখার জায়গা আর ফাঁকা নাই।’
এখানে মাস্ক ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
ভেতরে ঢোকার আগে একজন স্যানিটাইজার দিচ্ছেন সবার হাতে। আরেকজন শরীরের তাপমাত্রা মেপে ভেতরে ঢুকাচ্ছেন।
ভেতরে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে বেশি ভিড় কিড জোনে।
আড়ংয়ের গুলশান শাখায় মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না, হাতে দেয়া হয় স্যানিটাইজার
কেনাকাটা করতে আসা একজন মো. শাহীন। তিনি তার ছোট দুই বাচ্চা ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন।
শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের ঈদে বাচ্চাদের কিছু কিনে দিতে পারি নাই। ওদের ঈদের আনন্দ নষ্ট হয়েছিল। তাই এই বছর শপিং এ আসা। বেশি কিছু না, অল্প কিনেই চলে যাব। আমরা তো আমাদের জন্য শপিংয়ে আসি নাই। বাচ্চাদের জন্য এসেছি।’
ভেতরে একজনকে দেখা যায় সবাইকে সচেতন করছেন। কাউকে এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দিচ্ছেন না। কেউ মাস্ক খুলে ফেললে তাকে পড়তে বলছেন।
তিনি গুলশান আড়ং এর সেলস এক্সিকিউটিভ সানজিদ হোসেন। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারে মানুষের ভিড় বাড়ে। সপ্তাহের অন্য দিন কম আসে মানুষ। আজকে বন্ধের দিন তাই মানুষের এত ভিড়। তাছাড়া কখন আবার শপিংমল বন্ধ হয়ে যায় তাই মানুষ আগেভাগেই ঈদের শপিং করে নিচ্ছে। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে কঠোর। না মানলে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’
বসুন্ধরায় ভিড়ের তুলনায় বিক্রি কম
একই রকম ভিড় দেখা যায় বসুন্ধরা সিটিতে। বাইরে মাইকে সবাইকে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। ভেতরে ঢোকার আগে সবার হাতে স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে। এর পরে জীবাণুনাশক টানেলের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে শরীরের তাপমাত্রা মেপে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে।
সেখানে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য সোহেল বলেন, ‘সপ্তাহে অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্র, শনি ও বুধবারে ভিড় বেশি হয়।’
বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে দিনভর ভিড় দেখা গেলেও বেচাকেনায় খুশি নন বিক্রেতারা
শপিংমলে সব চেয়ে বেশি ভিড় কাপড়, জুতা ও মোবাইলের দোকানে। ভেতরে ঢুকে অনেকেই মাস্ক খুলে ফেলছেন।
কাপড় ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, ‘মার্কেটে লোক দেখলেও বেচাবিক্রি তেমন নাই। সবাই আসছে ঘুরতে। ঘুরে-ফিরে চলে যাবে।’
লেভেল-৮-এ খাবারের দোকানে চেয়ার টেবিল উঠিয়ে ফেললেও মানুষ খাবার নিয়ে ফ্লোরে বসে খাচ্ছে।
লুসিয়াস পিৎজা ফাস্ট ফুড দোকানের জামাল হোসেন বলেন, ‘দুপুরে তেমন ভিড় হয় না খাবারের এই পাশে। ইফতারির আগেই ভিড় হয়। দুপুরে যাদের দেখছেন গোল হয়ে বসে আছে, এখানে বাচ্চারা খাচ্ছে। আর তাদের পরিবার বসে আছে।’
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা নিউমার্কেটে
নিউমার্কেট যাওয়ার পথে সায়েন্সল্যাব থেকে নিলক্ষেত পর্যন্ত গাড়ি তীব্র যানজট দেখা যায়। নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেটের ভেতরের সবখানেই উপচে পড়া ভিড়। নিউমার্কেট ওভারব্রিজে ধাক্কাধাক্কি করে কে কার আগে যাবে।
সামাজিক দূরত্ব দেখা যায়নি। কেউ মাস্ক পরলেও ঠুতনিতে নামিয়ে রেখেছেন। কেউ মাস্ক না পরেই দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
নিউমার্কেটে ক্রেতাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে অনীহা দেখা গেছে
নিউ সুপার মার্কেটের তিনতলার কাপড়ের দোকানি মো. রাসেল বলেন, ‘করোনার আগে অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর ফিফটি পারসেন্ট বেচাকেনা কম। তবে ঈদের কারণে এখন মোটামুটি বেচাকেনা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্যবিধির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো বলি। কাস্টমাররা যদি না শোনে আমরা কী করতে পারি?’
কেনাকাটা করতে আসা মানিক মিয়া বলেন, ‘করোনা তো তাড়াতাড়ি যাচ্ছে না। তাই বলে কি কাপড়-চোপর পড়া বাদ দেবো? একে তো ঈদ তার উপরে দীর্ঘ দিন হলো প্যান্ট-শার্ট-জুতা কেনা হয় না। ঈদের কেনাকাটা করতে আসছি বিষয়টা ঠিক এমন না। আমার কাপড়ের দরকার তাই আসছি।’
ফুটপাতে মানুষের ভিড় বেশি দেখা গেছে
নিউমার্কেটের ফুটপতের গেঞ্জি বিক্রেতা মো. বাপ্পি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের লাইগা ব্যাচা-বিক্রি মোটামুটি। তয় যেইরোম ভিড় দেখতাছেন, ওইরম ব্যাচা-বিক্রি হচ্ছে না।’
স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘বাঙালিগো নিয়ম মাননের কথা কইয়া লাভ নাই। কত কইছি ভাই মাস্ক পরেন। কেডা কার কথা শুনে?’
হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ক্রেতাসমাগম ব্যাবসায়ীদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না বলে মনে করেন নিউ সুপার মার্কেটের সভাপতি শহীদ উল্লাহ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যতটুকু সম্ভব আমরা ক্রেতাদের সচেতন করছি। পরিবারে সবাইকে এবং শিশুদের মার্কেটে না আনার অনুরোধ করছি। এছাড়াও মার্কেটে আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার করতে বাধ্য করছি। দোকানদারদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে কড়াকড়ি আরোপ করেছি।’
কেনাকাটা করতে আসা মানুষের চাপে নিউমার্কেট এলাকায় সড়কে যানজটও দেখা গেছে
স্বাস্থবিধি মানা হচ্ছে বললেও আসলে তা চোখে পড়ে না। কোন দোকানে স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে না। আপনারা কেমন স্বাস্থবিধি মানছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি তো সবাইকে বলেছি। তারা যদি না মানে এটা দুক্ষজনক। আমি এখনি আমার বলে দিচ্ছি।