বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ মিলগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাড়াভিত্তিক বা ইজারা (লিজ) পদ্ধতিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় বুধবার দুপুরে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা জানান।
মিল চালু করা নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞপ্তির আওতায় দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা লিজ গ্রহণের সুযোগ পাবে।
‘এ ক্ষেত্রে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকে (এফডিআই) অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকলগুলো চালু করা হলে অবসায়নকৃত শ্রমিকেরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবে বলেও জানান তিনি।
‘একই সঙ্গে এসব মিলে কর্মক্ষম ও দক্ষ শ্রমিকদের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সকল শ্রমিককে পর্যায়ক্রমে অবশ্যই পুনর্বাসন করা হবে।’
বেসরকারি পাটকলগুলোর উৎপাদনশীলতা ও ব্যবস্থাপনা কৌশলের কারণে দেশের অর্থনীতিতে পাট খাতের অবদান আরও বাড়বে বলে আশাবাদী মন্ত্রী।
তিনি বলেন, উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি মিলের মধ্যে ৪টি মিলের (জাতীয়, খালিশপুর, দৌলতপুর ও কেএফডি) শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে।
‘অবসরপ্রাপ্ত ও অবসায়নকৃত ৩৪ হাজার ৭৫৭ জন স্থায়ী শ্রমিকের ২ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে পাওনার ক্ষেত্রে অর্ধেক নগদে ও অর্ধেক তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধের সিদ্ধান্ত আছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১টি মিলের সবগুলোতে নগদ অংশ পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ হতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।’
এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ৭৫৭ শ্রমিকের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে ১ হাজার ৬৬২ কোটি ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, যা বরাদ্দের প্রায় ৯৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মামলাজনিত সমস্যা, অডিট আপত্তিজনিত সমস্যা, শ্রমিকদের নামের সঙ্গে এনআইডির গরমিল, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাব না থাকার কারণে কিছুসংখ্যক শ্রমিকের পাওনাদি পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি জানান, এসব সমস্যা নিরসনে শ্রমিক ও মিল বা সংস্থা থেকে মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির চেষ্টা নেয়া হয়েছে এবং শ্রমিকদের নামের গরমিল সংশোধন করে ও ব্যাংক হিসাব খোলার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, সমস্যা নিরসন করে শিগগিরই নগদ অংশের শতভাগ পারিশোধের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। বাকি অর্ধেক সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ইস্যু সার্ভার নির্ভর হওয়ায় বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানসহ পাট খাতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল গেল বছরের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয়া হয়।
গোটা দুনিয়ায় পাটের কদর ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাটচাষিরা বর্তমানে কাঁচাপাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চলতি পাট মৌসুমে কাঁচা পাটের গড় দর ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। ফলে পাটচাষিরা এ মৌসুমে অধিক পরিমাণে পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছে।’
এতে দেশের অর্থনীতিতে পাট খাতের অবদান আরও সুসংহত হবে বলে আশা করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৯৫৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
‘এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। আর তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।’
সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান, অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা যুক্ত ছিলেন।