করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি।
কঠিন পরিস্থিতিতেও এই প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক মনে করে উন্নয়ন সংস্থাটি বলেছে, মহামারি সামাল দিতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের গতি বাড়ায় এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচক ইতিবাচক হওয়ায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিও দ্রুত বাড়বে।
‘এর ফলশ্রুতিতেই ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।’
কোডিড-১৯ মহামারির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির হালচাল নিয়ে বুধবার প্রকাশিত এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের দেয়া প্রণোদনার সুফল মেলার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।
আর বিশ্ব অর্থনীতির টেকসই পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানির গতি বাড়লে আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে প্রক্ষেপণ করেছে এডিবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রেমিট্যান্সের শক্তিশালী প্রবাহ অব্যাহত থাকায় ব্যক্তিখাতে ভোগব্যয় বাড়বে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও গতি আসবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও মহামারীর বাস্তবতায় পরে তা কমিয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
মহামারীর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে, যা আগের অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ধীরে ধীরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ধারায় ফিরবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অঞ্চল হিসাবে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া হবে সবচেয়ে দ্রুত। ২০২০ সালে যেখানে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ৬ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল, এবার তা ৯.৫ শতাংশ হারে বাড়বে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ ভারত যদিও মহামারিতে নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারপরও এ বছর সেখানে ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে এডিবি। গত বছর ভারতের অর্থনীতি ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সোয়াদা বলেন, ভারত যে গতিতে টিকাদান চালিয়ে নিচ্ছে, তাতে আগাস্টের মধ্যে সেখানে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ২০২২ সালেই হয়ত ভারত ‘হার্ড ইমিউনিটিতে’ পৌঁছে যাবে।
এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর গতি যতটা হবে বলে আগে ভাবা হয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে বেশি হবে বলেই এডিবির ধারণা।
তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়লে এবং টিকাদানের গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো না গেলে অঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানো যে কঠিন হবে, সে কথাও এডিবি মনে করিয়ে দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকার ২৩টি প্যাকেজের আওতায় সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল। যার সিংহভাগ ইতোমধ্যই বাস্তবায়ন হয়েছে।
অন্যদিকে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে নতুন প্রণোদনা ঘোষণা করতে শুরু করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ৩৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আড়াই হাজার করে টাকা দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।