করোনা অতিমারির কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণ চুক্তিও সই করেছে। একই সঙ্গে ঋণ বিতরণে নীতিমালা ও নির্দেশিকা ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদের সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের ৪ শতাংশ সুদে এই ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হবে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা এবং আগামী অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে।
এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংক ও ননব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। বিভিন্ন এসএমই ক্লাস্টার (বিশেষ খাত), সরকারি বেসরকারি সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা এসএমই উপখাত, ট্রেডবডি এবং গ্রুপের তালিকাভুক্ত ছোট উদ্যোক্তা এবং সিএমএসএমই খাত এই ঋণ পাবে। সরকার ঘোষিত প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লি ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদেরও ঋণ দেয়া হবে। মোট ঋণের ২৫-৩০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
গ্রাহক পর্যায়ে এ ঋণের পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪টি সমান মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে। সাধারণভাবে একক ও যৌথ মালিকানাধীন উদ্যোগের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করা হবে।
তবে প্রান্তিক ক্ষুদ্র, বিশেষ করে নারী-উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনার লক্ষ্যে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পাঁচজন উদ্যোক্তার অনুকূলে গ্রুপভিত্তিক ঋণ বিতরণ করা যাবে।
এখন পর্যন্ত করা চুক্তি অনুযায়ী, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথ-ইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স এবং লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স এসএমই ফাউন্ডেশনের এ ঋণ বিতরণ করবে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
এ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পূর্ব মাদারবাড়ী-চট্টগ্রাম, হাজারীবাগ-ঢাকাসহ সারা দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ক্লাস্টার, পিরোজপুরের বলদিয়া ও যশোরের নরেন্দ্রপুরের ক্রিকেট ব্যাট ক্লাস্টার, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের হোসিয়ারি ক্লাস্টার, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, বেলকুচি, উল্লাপাড়া টেক্সটাইল ক্লাস্টার, মানিকগঞ্জের ঘিওর হস্তশিল্প ক্লাস্টার, জামালপুরের হস্তশিল্প ক্লাস্টার, সাতক্ষীরার ব্যান্ডেজ ও গজ ক্লাস্টার, যশোরের ঝিকরগাছা ফুল প্রসেসিং ক্লাস্টার, নীলফামারীর সৈয়দপুর ঝুট গার্মেন্টস ক্লাস্টার, মৌলভীবাজারের বড়লেখা আগর-আতর ক্লাস্টার, ঝিনাইদহের হস্তশিল্প (বাঁশজাত পণ্য) ক্লাস্টার।
পিরোজপুরের নাজিরপুর হস্তশিল্প (হোগলা পাটি, মোড়া) ক্লাস্টার, কুষ্টিয়ার কুমারখালী টেক্সটাইল ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের, যশোর, নাটোর, পাবনা, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ সারা দেশের হালকা প্রকৌশল শিল্প ক্লাস্টার, ঢাকার ইসলামবাগ প্লাস্টিক ক্লাস্টার, টাঙ্গাইলের পাথরাইল, দেলদুয়ার, বল্লা, বেলতা, কালিহাতি হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, গৌরিপুর ঝুট গার্মেন্টস ক্লাস্টার, ময়মনসিংহের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী উদ্যোক্তা, মুদ্রণ শিল্প সমিতির সদস্য উদ্যোক্তা, ঢাকার শ্যামপুর, জুরাইন ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্টস ক্লাস্টার, বগুড়ার আদমদীঘির শাঁওইল হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার।
মুন্সীগঞ্জ ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ক্লাস্টার, ঢাকার কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক শিল্প ক্লাস্টার, নরসিংদীর টেক্সটাইল ক্লাস্টার, পাবনার হোসিয়ারি ক্লাস্টার, সাথিয়া হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ মনিপুরি হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার, নরসিংদী টেক্সটাইল ক্লাস্টার, নারায়ণগঞ্জ জামদানি ক্লাস্টার, রাজশাহীর হস্তশিল্প ক্লাস্টার, কালুহাটির ফুটওয়্যার ক্লাস্টার, রাজশাহী হস্তশিল্প ক্লাস্টার, বেসিস ও বাক্য-এর সদস্য উদ্যোক্তা, রংপুর শতরঞ্জি (কার্পেট) ক্লাস্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ নকশীকাঁথা ক্লাস্টার এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)-এর সদস্য উদ্যোক্তাদের ঋণ দেবে।