টানা ৯ দিন সূচকের উত্থানের পর দ্বিতীয় দিনের মতো মূল্য সংশোধনে কমেছে সূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। লেনদেনেও ছিল ভাটার টান।
পুঁজিবাজারের এমন অবস্থাতেও জয়জয়কার তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানির শেয়ারদর। দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া র্শীষ ১০ কোম্পানির মধ্যে বিমা খাতের ছিল সাতটি।
এই প্রবণতাকে মোটেও স্বাভাবিক বলছেন না পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ।
গত ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লডকাউন শুরু হলে বিমার এই দাপট দেখা দেয়। গত বছরও করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, তারপর যেমন ঢালাও দাম বাড়তে থাকে, এবারও সেই প্রবণতা দেখা দেয়।
কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারদর এই কয়দিনে দ্বিগুণ হয়েছে, কোনোটির ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এভাবে ঢালাও দাম বৃদ্ধির প্রবণতায় পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বিনিয়োগকারীদের সতর্কও করছেন। তবু পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটছে দাম।
গত বছর থেকেই বিমা খাত নিয়ে নানা সংবাদ এই দাম বৃদ্ধিতে প্ররোচনা জুড়িয়েছে। বিমা খাতের জন্য এর আগে এজেন্ট কমিশন ১৫ শতাংশ নির্ধারণ, পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের নির্দেশনা বড় প্রভাব ফেলে এ খাতের শেয়ারে।
সব শেষ সোমবার বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) পক্ষ থেকে জারি করা আরেক নির্দেশনা এই খাত দিয়ে আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী ১ অক্টোবরের পর থেকে কোনোভাবেই প্রিমিয়াম জমার বিপরীতে হাতে লেখা রশিদ দেয়া যাবে না।
এতে বলা হয়েছে, বিমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে বিমাকারী ও বিমা পলিসি গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ডিজিটাল সুবিধা প্রদান, বিমাকারীর বিমা পলিসি গ্রাহকদের প্রিমিয়াম রশিদ প্রদান (ডাক, কুরিয়ার) বাবদ খরচ সাশ্রয়, এ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি রোধ, বিমা পলিসি গ্রাহকগণের টাকা আত্মসাৎ বন্ধ, গ্রাহক হয়রানি রোখ এবং গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে বিমাখাতের ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো ১ জুন থেকে প্রিমিয়াম রশিদ হিসেবে কাগজে ছাপা রশিদের পাশাপাশি ইউনিফাইড ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম (ইউএমআর) এর মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ই-রিসিপ্ট প্রদান করতে হবে।
মঙ্গলবার ক্রিস্ট্রাল ইন্স্যরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ। কোম্পানিটি ২০২০ সালে তার শেয়ারধারীদের জন্য ১০ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ফলে মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ার দরে কোনো লিমিট ছিল না।
দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। লেনদেনে ৪৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে দর বেড়ে হয়েছে ৫৩ টাকা ৩০ পয়সা।
অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বেড়েছে ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির। দর কমেছে ১৫টির। আর পাল্টায়নি পাঁচটির।
ব্যাংক খাতের ৩১টির কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র তিনটির। পাল্টায়নি ১৪টির। কমেছে বাকি ১৪টির।
বাজার বিশ্লেষকের বক্তব্য
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমা খাত নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এটা অনেক আগে থেকেই। কারণ, পুঁজিবাজারে অনেকগুলো খাত থাকলেও এ খাতের শেয়ারে কেন বিনিয়োগকারীদের এত আগ্রহ থাকবে? এটি শক্তভাবে মনিটরিং করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সবাই লাভবান হয় না। অনেকে লাভবান হন, আবার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্ত কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যদি কেউ ক্ষতির সম্মুখীন করে তাহলে সেটি অবশ্যই আইনে ব্যত্যয়। এক্ষেত্রে কারা বিমার শেয়ার কিনছে, কোনো কারসাজি আছে কি না সেটিও যাচাই করে দেখা খুবই জরুরি।’
সোমবারের নির্দেশনা কেন শেয়ার দরে প্রভাব কেন ফলবে সেটি বোধগম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৩ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২২ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৭ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩৩ দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯২ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির। কমেছে ২৩১টি। দর পাল্টায়নি ৬২টির।
লেনদেন হয়েছে মোট ৮২৪ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৫৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৭০ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৯টির। কমেছে ১৫১টির। দর পাল্টায়নি ৩১টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৪১ কোটি টাকা।