বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোজা-লকডাউনে ফলের বাজারে ‘আগুন’

  •    
  • ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ১১:১৯

কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ফলের ক্ষেত্রে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন এমন বিধান রয়েছে। তবে তরমুজের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা আছে। কেজি প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন না। আর কেজি বা পিস যেভাবেই কিনবে সেভাবে বেচতে হবে। কিন্তু ফলের বাজারে এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।

পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ব্যবসায়ীরা চড়ামূল্যে ফল বিক্রি করছেন। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে লকডাউন। এ কারণে ফলের সরবরাহও কম। অনেকটা বাধ্য হয়েই আগুনদামে ফল কিনছেন ক্রেতারা।

রমজান উপলক্ষে যেসব ফল বেশি বিক্রি হয় মূলত সেসব ফলের দামই চড়া। বিদেশি ফল আপেল, আঙুর তো বটেই বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে পেয়ারা, আনারস, তরমুজ, পেপের মতো দেশি ফলও। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুরের দাম অনেকটা কম।

কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ফলের ক্ষেত্রে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন এমন বিধান রয়েছে। তবে তরমুজের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা আছে। কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৫ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন না। আর কেজি বা পিস যেভাবেই কিনবে সেভাবে বেচতে হবে। কিন্তু ফলের বাজারে এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।

মধ্য বাড্ডার ফল বিক্রেতা মো. জাহিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোজা শুরুর পরই বেড়েছে ফলের দাম। রমজানের আগে ১৪-১৫ কেজির পার কার্টন মাল্টার ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা। সোমবার মাল্টার দাম ছিল ১৯০০ টাকা কার্টন। আজ (মঙ্গলবার) কার্টুন কিনলাম ২১০০ টাকায়।’

সবুজ রঙের আপেলের দাম আরও চড়া। রোজা শুরুর আগে প্রতি ১৮ কেজির কার্টনের দাম ছিল ২৬০০ থেকে ২৭০০ টাকা। এখন দাম ঠেকেছে ৩২০০ টাকায়।

রমজানের আগে সবুজ আঙুরের কেজি ছিল ১৭০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি কেনা পড়ে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, খুচরা পর্যায়ে দাম দাঁড়ায় ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা।

১২ মাসি ফল কলার দামও বেড়েছে, হালিতে ৫ থেকে ১০ টাকা।

বেশি দামে কিনতে হচ্ছে দেশি ফলও। ছবি: নিউজবাংলা

কলা বিক্রেতা সামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, রোজার আগে সবরি কলা কেনা পড়ত ২৫ টাকায়, এখন কেনা পড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সাগর কলার কেনা পড়ত ২৮ থেকে ৩০ টাকা বর্তমান কিনতে হয় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। আগে চাপা কলা ৮ থেকে ১০ টাকা হালি কিনতাম রোজায় দাম বেড়ে হয়েছে ১৬ থেকে ১৭ টাকা।

মধ্য বাড্ডা লিংক রোডের একটি দোকানে ফল কিনতে আসা সোহান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রমজানের কারণে অনেকটা বিপদে পড়েই এই বাড়তি দাম দিয়ে ফল কিনতে হয়। আমরা নিরুপায়। খাওয়া লাগবে। অন্যা দেশে রমজানে সবকিছুর দাম কমে, আর আমাদের দেশে বাড়ে। এসব ছোটখাটো ব্যবসায়ীকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। রাঘব বোয়ালদের কাজ হচ্ছে দাম বাড়ানো।

তরমুজের সিজন শেষের দিকে। তীব্র গরম আর রোজা মিলে গ্রীষ্মকালীন এই ফলের দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তরমুজ বিক্রেতা মো. রফিক বলেন, ‘রমজানের পূর্বে তরমুজের কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনতাম, বিক্রি করতাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আজকে ৫০ থেকে ৫২ টাকা করে তরমুজ কিনেছি। বিক্রি করছি ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। রমজানের আগের দিন পেপের কেজিও ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি কিনে আনি ১২০ টাকা; বিক্রি করি ১৪০ থেক ১৫০ টাকা কেজি।’

তরমুজের দাম বাড়ার কারণ উল্লেখ করে এই ফল বিক্রেতা জানান, এখন প্রতিদিন দাম বাড়তেই আছে কমছে না। দাম বাড়ার কারণ হচ্ছে কিছু কিছু পণ্যের আমদানি কম। আবার কিছু কিছু পণ্যের বেলায় রাস্তায় অতিরিক্ত টোল দিতে হয়। এ ছাড়া, দুই-তিন দিন হলো তরমুজের পরিমাণ কমে গেছে। বরিশাল ও ভোলার তরমুজ কমে গেছে। আছে খুলনা ও নাটোরের কিছু তরমুজ। সব মিলিয়ে তরমুজের দাম বেশি।

গরমের আরাম তরমুজের দামও বেশি। ছবি: নিউজবাংলা

ধানমন্ডিতে মো. আসাদুজ্জামান ভ্যানে করে ফল বিক্রি করেন। তার অভিযোগ ফল বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয় তাই দাম বেশি। তাই আগের মতো ক্রেতাও পাচ্ছেন না।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বেল ৬০ টাকা কিনে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি করি। বাঙ্গি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কিনে ৫০ টাকার ওপরে যা বিক্রি করতে পারি। ছোট আনারস ২২ টাকা কিনে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করি। রমজানের আগে পেয়ারার পাইকারি মূল্য ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বিক্রি করতাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এখন পাইকারি কিনি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা করে। বিক্রি করি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।’

এই ফল বিক্রেতা জানান, লকডাউন আর রোজা মিলিয়ে দাম বাড়ছে। কিন্তু বিক্রি তেমন নাই। লকডাউনে সবার হাতের অবস্থা খারাপ।

সব ফলের দাম বাড়লেও খেজুরের দাম কমেছে এবার। বিক্রেতারা বলছে আমদানি ভালো। তাই হয়তো দাম কম।

মোহাম্মদপুরের ফল বিক্রেতা ইলিয়াস মোল্লা বলেন, অন্য ফলের দাম বাড়লেও গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুরের দাম অনেক কম। রমজানের আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনি আছে।

‘গত বছর মিডিয়াম আজোয়া খেজুর বিক্রি করছি সাড়ে ১১শ টাকা। এ বছর ভালোটাই বিক্রি করি ৬৫০ টাকা। গত বছর মরিয়াম রয়্যাল খেজুর বিক্রি করেছি ৮০০ টাকা এখন বিক্রি করি ৬৫০ টাকা। এ ছাড়া, বাকি সকল খেজুরের দাম অনেক কম। একমাত্র খেজুরের দাম কম বাকি সব ফলের দাম বাড়তি।’

অন্য বছরের তুলনায় খেজুরের দামটা তুলনামূলক কম। ছবি: নিউজবাংলা

বাজারে কমলা না থাকায় মাল্টার ওপরে চাহিদা বেড়েছে। করোনার কারণে অন্যান্য ফলের তুলনায় ভিটামিন সি জাতীয় ফলের চাহিদা একটু বেশি। তবে দাম সহনীয় আছে বলে দাবি রামপুরার ফল বিক্রেতা মেহেদি হাসানের।

তিনি বলেন, ‘গত রমজানে মাল্টার কেজি ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। সে তুলনায় এ বছর মাল্টার দাম কম আছে। আমরা বিক্রি করি ১৬০ টাকা। কমলা না থাকার কারণে মাল্টার দাম বাড়ার কথা থাকলেও এখনও গত বছরের মতো বাড়ে নাই। করোনার কারণে ক্রেতাও কম।’

এই ফল বিক্রেতার দাবি, করোনার কারণে চলমান লকডাউনে শ্রমিক শ্রেণির লোকেরা ফল কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। চলমান পরিস্থিতিতে অনেক চাকরিজীবীও এখন ফল কিনছে না।

খুচরা ফল বিক্রেতাদের অভিযোগ বেশি দামে বিক্রি করছে পাইকাররা। তাই তাদের থেকে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করা লাগে।

খুচরা ফল বিক্রেতাদের এমন অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন রাজধানীর বাদামতলীর পাইকারি ফোনের দোকান ওবাইদুল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আওলাদ হোসেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে মাল কম আসছে। এই কারণে মালের দাম বাড়তি। এ ছাড়া, রমজানের কারণে ফলের ওপরে প্রভাব পড়ে। ইন্ডিয়ায় মাল্টাসহ তেমন কোনো ফলেরই সিজন না এখন। এখন যে মাল্টা আছে বাজারে এটা মিশরের মাল্টা। আপেল চায়না, সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে আসতেছে।’

পাইকাররা সিন্ডিকেট করে ফলের দাম বাড়ান-এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আওলাদ বলেন, ‘কিছুটা তো আছেই। অনেকে মাল স্টক করে রাখে। মাল স্টক করে রাখলে তো মালের দাম বাড়বেই। তবে সবাই এক না।’

এ বিভাগের আরো খবর