করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষতি সামলে উঠতে রপ্তাকিারকদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রাকজাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল (প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম) গঠন করেছে, সেই ঋণের সুদের হার কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন থেকে এই তহবিল থেকে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন রপ্তানিকারকরা। এতদিন এই ঋণের সুদের হার ছিল ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার সুদের হার কমানোর এই ঘোষণা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে।
তাতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর ক্ষতি পুষিয়ে দিতে গত বছরের ১৩ এপ্রিল এই ঋণের জন্য যে নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছিল, এ তহবিলের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩ শতাংশ সুদ হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।
‘বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, গ্রাহক পর্যায়ে এই ঋণের সুদের হার হবে ৫ শতাংশ। আর ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২ শতাংশ সুদে ঋণ নেবে।’
করোনাভাইরাসের অভিঘাতে অর্থনীতির ক্ষতির মধ্যেও সব খাতের রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ এপ্রিল মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন তারমধ্যে এই পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণাও ছিল।
নীতিমালায় বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নজিরবিহীন নীরবতা দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে অন্যান্য খাতের মতো রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং অনেক রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ায় বিদেশি মুদ্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে।
রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রি-শিপমেন্ট ঋণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রেখে বিদেশি মুদ্রা অর্জন এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে এই পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে।
নতুন এই তহবিলের নাম দেয়া হয়েছে প্রি-শিপমেন্ট রিফাইন্যান্স ক্রেডিট পুনঃ অর্থায়ন স্ক্রিম। তহবিলের পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই জোগান দেয়া হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিন রপ্তানিমুখী শিল্পে শুধুমাত্র প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে এ ঋণ বিতরণ করতে হবে।
বাংলাদেশের কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংক এই পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পুনঃঅর্থায়নকারী ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিলটি পরিচালনা করবে। স্ক্রিমের মেয়াদ হবে তিন বছর। এই সময়ের মধ্যে তহবিলটি আবর্তনযোগ্য।
যে কোনো খাতের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে।
একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে এই তহবিলের আওতায় একাধিকবার ঋণ দেয়া যাবে। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ আদায়ের সব দায়-দায়িত্ব বিতরণকারী ব্যাংককে নিতে হবে।
এর আগে করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে দিতে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের ২ শতাংশ সুদে ঋণ জোগান দিচ্ছে সরকার।
এছাড়া ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের (এলসি) আওতায় বাকিতে আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ঋণসুবিধা পাবেন রপ্তানিকারকেরা।