টানা ১১ দিন পর রোববার দোকান-শপিং মল খুলে দিলে সকালের চিত্র ছিল ক্রেতাশুন্য। কিন্তু বিকেল থেকে ক্রেতারা যেতে শুরু করেন মার্কেট-শপিং মলে। দ্বিতীয় দিনে সেই পরিস্থিতি কিছুটা কিছুটা বদলেছে। এ দিন বেড়া বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়তে দেখা গেছে।
অন্য বছরগুলোয়ে যেখাকে রমজানের শুরুই ক্রেতার ঢল নামে সেটি গত বছর থেকে দেখা যায়নি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে।
দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লে ৫ এপ্রিল থেকে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। প্রথম সপ্তাহে দোকানপাট খোলা থাকলেও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তা বন্ধ করে দেয় সরকার। টানা ১১ দিন পর খুলেছে এসব।
ক্রেতা না থাকায় এখনি হতাশ হচ্ছেন না দোকান মালিকরা। প্রথমে বিকেল পাঁচটার মধ্যে বন্ধ করার কথা বলা হলেও তা পরে বাড়িয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত করা হয়।
বিক্রেতারা বলছেন, সামনে ঈদ। রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকলে ক্রেতা আসবেনই। বেচাকেনা হবেই।
ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, নতুন করে করোনার অঘটন না হলে এবার রোজার বেচাকেনা দিয়ে আগের দুইটি ঈদ ও পহেলা বৈশাখের বেচকেনা না হওয়ার ক্ষতি কিছুটা হলেও উঠিয়ে নিতে পারবেন তারা।
সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজধানীর মৌচাক মার্কেট, সেন্টার পয়েন্ট, ফরচুন শপিংমল, আনারকলি মার্কেট ও নূরজাহান শপিংমলসহ বেইলি রোডের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দোকানীদের সঙ্গে কথা বলে ক্রেতাদের সম্পর্কে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সরজমিন দেখা গেছে, গণপরিবহণ না থাকায় ক্রেতারা মার্কেটমুখী হচ্ছেন রিকশা অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও অনেককে আসতে দেখা গেছে। ক্রেতারা মার্কেটের গেইটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে রিকশা ও গাড়িগুলোকে বাঁশি ফুঁকিয়ে দ্রুত সরিয়ে দিচ্ছেন। এরপর আগুন্তুক ক্রেতাদের মার্কেট কর্তৃপক্ষ জীবানুনাশক গেট দিয়ে প্রবেশ করার তাগিদ দিচ্ছেন। এভাবে ধীরে ধীরে মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়ছে। মার্কেটের ভেতরের চিত্র বেচাকেনায় গড়ালেও স্বাভাবিক যে কেনাবেচা সেটা দেখা যায়নি।
সেন্টার পয়েন্ট মার্কেটের ফাহিম ম্যানশনের বিক্রেতা ফাহিম বলেন, ক্রেতা কম। তবে গতকালের চেয়ে ভালো। এখনকার এই পরিস্থিতি বিকেলের পর বদলে যাবে। বিশেষ করে ইফতারির পর শেষ দুই ঘণ্টা ভালো বেচাকেনার আশা করেন তিনি।
কেন এমন মনে হচ্ছে জানতে চাইলে এই দোকানি দীর্ঘবছরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেন, ‘ক্রেতাদের বেশিরভাগই রোজা রেখেছেন। অনেক ক্রেতা ১১টা-১২টা পর্যন্ত ঘুমান। এরপর দিনের কর্মসূচিতে বের হন। তার ওপর এখন চলছে তীব্র দাবদাহ। মাথার ওপর প্রখর রোদ। এসব কারণে বেশিরভাগ ক্রেতাই বিকেলে বের হন। আর এখন দোকান খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানোয় অনেক ক্রেতা ইফতারির পর মার্কেটমুখী হবেন।’
ফরচুন শপিংমলেও দেখা গেল একই চিত্র। মার্কেটের প্রথম ফ্লোর থেকে পঞ্চম ফ্লোর পর্যন্ত সবকটিতেই বিক্রেতারা পসরা সাজিয়েছেন। আছে ক্রেতারাও। তবে চাপ কম। বেচাকেনা কমবেশি হতে দেখা গেছে। অনেককেই দেখা গেছে, শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে মার্কেট ছাড়তে।
আনারকলি মার্কেটে আসা মগবাজারের গ্রিনওয়ের বাসিন্দা বিলকিস সুলতানাকে দেখা গেল কাজের মেয়েকে নিয়ে শপিং করতে।
প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসা কাছেই ছিল। বিকেলে আসলেও পারতাম। কিন্তু বাসায় মেহমান আছে। তারা চলে যাবে। আবার লকডাউনের মুখে যদি মার্কেট বন্ধ হয়ে যায় এমন আশঙ্কায় আসা।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখলাম বেশিরভাগ বিক্রেতাই মুখে মাস্ক পরছেন। নিজেরা তো পরেই এসেছি। বিক্রেতাদেরও সচেতন দেখলাম। আবার মার্কেটে ক্রেতার চাপও কম।’
সার্বিক বেচাকেনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দোকান খুলেছে। খোলা রাখার সময়ও চার ঘণ্টা বেড়েছে। এই বার্তা ক্রেতাদের কাছে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। সে অনুযায়ী তারাও মার্কেটে আসার দিনক্ষণ ঠিক করতে শুরু করেছেন। আশা করছি, আগামী দুই-চারদিনের মধ্যেই বেচাকেনায় চাপ বাড়বে।’
চাকুরিজীবীদের বেতন-বোনাস হাতে পেলে কেনাকাটা আরও বাড়বে। সঙ্গে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করার পরামর্শও দেন তিনি।