বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৯ দিন পর কমল সূচক

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ১৪:০০

ডিএসইর একটি সূচক সোমবার কমেছে ১২ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট। তবে অন্য দুই সূচক আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।

লকডাউনের মধ্যে টানা ৯ দিন উত্থানের পর সোমবার সূচক কমল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)।

ডিএসইর একটি সূচক কমেছে ১২ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট। তবে অন্য দুই সূচক আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।

১২ এপ্রিল থেকে সূচক বাড়ছিল ডিএসইতে। এরপর ১২ কর্মদিবস সূচকের উত্থানের পর সোমবার তা থামে।

গত ৯ দিনে সূচকে যোগ হয়েছিল মোট ৩২৯ পয়েন্ট। লকডাউনের আগে সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি।

গত ফেব্রুয়ারিতে ৫ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট ওঠার পর পুঁজিবাজারে দীর্ঘ দর সংশোধন শুরু হয়। এর মধ্যে সাম্প্রতিক এই উত্থানে আবার পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

গত এক বছরে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাত দিন টানা উত্থান দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারপর মূল্য সংশোধনের মাধ্যমে দুই-চার দিন পর আবার স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরেছে পুঁজিবাজার।

পুঁজিবাজারে সূচক কয়েক দিন বাড়তে থাকলে সাধারণত পরে কমে, যাকে বাজার সংশোধন বলা হয়। লডকাউনেও টানা তিন থেকে চার দিন সূচকের বড় ধরনের উত্থানের পর বাজারে পড়তির প্রবণতাও এক-দুই দিন দেখা গেছে। তবে শেষ বেলায় আবার অল্প হলেও সূচক বেড়েছে।

গত বছরে যখন করোনার কারণে পুঁজিবাজার ২৫ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয় তার আগেও সূচকের উত্থান-পতন ছিল। টানা পতন বা টানা উত্থান দেখা যায়নি। তবে ৩১ মে পুঁজিবাজার খোলার দিন সূচক পতন হয়েছিল ৬১ পয়েন্ট। তারপর ১ জুন থেকে সাপ্তাহিক ছুটিসহ ৭ জুন পর্যন্ত পাঁচ কার্যদিবস সূচক টানা বেড়েছিল।

তারপর আবার ৬ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ৫ কার্যদিবস টানা সূচক বেড়েছিল। এ ছাড়া গত বছরের ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ৫ কার্যদিবস সূচক বাড়ার রেকর্ড পাওয়া গেছে।

কিন্তু এবারের লকডাউনে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসার আগেই পতন শুরু হয় পুঁজিবাজারে।

৫ এপ্রিল লকডাউনে পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাবে- এমন গুজবে ৪ এপ্রিল সূচকের পতন হয় ১৮২ পয়েন্ট। আতঙ্কে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দেন বিনিয়োগকারীরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে ব্যাংকে লেনদেন চলবে লকডাউনেও। আর পরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানায়, লেনদেন চলবে স্টক এক্সচেঞ্জেও।

লকডাউন শুরু হওয়ার পর ৫ এপ্রিল সূচক বাড়ে ৮৯ পয়েন্ট। তারপর ভালো চলছিল পুঁজিবাজার। এর মধ্যে ৭ এপ্রিল বিএসইসির পক্ষ থেকে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন দর উঠিয়ে দেয়া হয়। এতে ধাক্কা লাগে সূচকে।

৮ তারিখ সূচকের পতন হয় ৮৩ পয়েন্ট। দুই দিন সরকারি ছুটির পরবর্তী লেনদেন ১১ এপ্রিল সূচকের পতন হয় ৯০ পয়েন্ট।

কিন্তু কঠোর লকডাউন শুরুর আগের দুই কার্যদিবস ১২ ও ১৩ এপ্রিল শুরু হয় সূচকের উত্থান। প্রথম দিন বাড়ে ২৩ পয়েন্ট। পরের দিন বাড়ে ৭০ পয়েন্ট।

কঠোর লকডাউন শুরুর দিন ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের ছুটি থাকায় পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন হয় ১৫ এপ্রিল। সেদিন সূচক বাড়ে ৫১ পয়েন্ট।

এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ১৮ এপ্রিল রোববার সূচক বাড়ে ২১ পয়েন্ট। পরদিন বাড়ে ১৮ পয়েন্ট।

২০ এপ্রিল আবার বড় উত্থান দেখে পুঁজিবাজার। সেদিন বাড়ে ৭১ পয়েন্ট।

টানা কদিন সূচক বাড়ার পর ছেদ পড়ার অবস্থা তৈরি হয় ২১ এপ্রিল। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর দেড় ঘণ্টা সূচক কমে যায়। তবে শেষ এক ঘণ্টার উত্থানে শেষ পর্যন্ত এক পয়েন্ট যোগ হয় সূচকে।

২২ এপ্রিল সূচক বাড়ে আরও ১১ পয়েন্ট। এরপর দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ২৫ এপ্রিল বাড়ে ৬৩ পয়েন্ট।

এমন উত্থানের শেষ মূল্য সংশোধনে ২৬ এপ্রিল, সোমবার সূচক কমল। তবে লেনদেন আগের দিনের মতো হাজার কোটি টাকায় অবস্থা করছে।

দর কমেছে বিমা খাতের

বিমা খাতের শেয়ারদর সোমবার কমেছে। পুঁজিবাজারের উত্থানের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাড়ছিল এ খাতের শেয়ারদর। সোমবার এ খাতের মুনাফা উত্তোলনের চাপে শেয়ারদর কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির।

লেনদেন হওয়া ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৪০টির। দর বেড়েছে ৬টির। আর দর পাল্টায়নি ৪টির।

এর আগে ১৮ এপ্রিল তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর কমেছিল মাত্র একটির। আর একটির দর পাল্টায়নি। সেদিন মোট ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছিল। তারপরের কার্যদিবসে দর বেড়েছিল ১৩টির। এরপর ১৯ এপ্রিল একইভাবে ৩৪টি ফান্ডের দর বেড়েছিল। এর পাশাপাশি দর বেড়েছিল বিমা খাতেরও।

২২ এপ্রিল লেনদেনে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ১১টির। দর পাল্টায়নি দুটির। আর লেনদেন হয়নি একটির। বাকি ৩৬টির দর বাড়ে।

২৫ এপ্রিলও একইভাবে বিমা খাতের উত্থান ছিল। সেদিন লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে বিমা খাতের ছিল পাঁচটি।

বাজার বিশ্লেষকের বক্তব্য

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ৯ দিন টানা বাড়ার পর এমন পতন স্বাভাবিক। এ সময়ে সেসব কোম্পানির শেয়ারদর অতিমূল্যায়িত হয়েছে সেগুলোর দর কমা উচিত। আর যেসব কোম্পানির শেয়ারদর এখন কম আছে, সেগুলোর দর বাড়া উচিত। তাহলেই পুঁজিবাজার গতিশীল হবে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ক্রমাগত ভালো থাকলেই বরং বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি বাড়ে। এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ভুল শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকে।

সর্বোচ্চ দর বেড়েছে এএফসি এগ্রো

৭ এপ্রিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বাতিল করে। এই ৬৬ কোম্পানির মধ্যে একটি এএফসি এগ্রো বায়োটেক লিমিটেড।

গত বছর করোনা মহামারির আগে যখন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর ক্রমাগত কমছিল তখন প্রতিটি কোম্পানির জন্য শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়া হয়, যা ফ্লোর প্রাইস হিসেবে পরিচিতি পায়। সে সময় কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭ টাকা। গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হয়েছে। এরপর জুলাই মাসে হঠাৎ করে শেয়ারদর বেড়ে ১৭ টাকা থেকে হয় ২২ টাকা। তারপর আবার ফ্লোর প্রাইসে। এভাবে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে কোম্পানিটির।

বিএসইসি কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ার পর প্রথম দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমে হয় ১৫ টাকা ৩০ পয়সা। পরবর্তী সময়ে বিএসইসি ৬৬ কোম্পানির শেয়ারদর কমার ক্ষেত্রে ২ শতাংশ নির্ধারণ করার পরও পর্যায়ক্রমে কমেছে কোম্পানিটির শেয়ার দর।

সোমবার হঠাৎ করে এই কোম্পানির শেয়ারদর দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়ে ১৫ টাকা থেকে হয়েছে ১৬ টাকা ৫০ পয়সা। এদিন ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭৭টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যার বাজারমূল্য ছিল ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এ ছাড়া এদিন ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ দর বেড়েছে আনোয়ার গ্যালভালাইজিং লিমিটেডের। শেয়ারদর ১১০ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২১ টাকা ২০ পয়সা।

ন্যাশনাল ফিড মিলস লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া অলিম্পিক এক্সেসরিজ লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস ছিল ৬ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৭ টাকা ১০ পয়সা।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৮৫ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৭ দশমিক ০৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬২ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৮ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৫ পয়েন্টে।

লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ১৯১টির। দর পাল্টায়নি ৬২টির।

লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৮ দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮২৮ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৩টির, কমেছে ১৩৪ টির। দর পাল্টায়নি ৪৮টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৭১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারঘোষিত চলমান তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউনে সোমবারসহ তিন দিনে লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেছে।

সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ দফা স্বাস্থ্যবিধির পরামর্শ দেয়। তখন থেকেই পুঁজিবাজারের লেনদেনের সময় পরিবর্তন করা হয়। ব্যাংকের লেনদেনের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজারের লেনদেন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা করে। তখন ব্যাংকের কার্যক্রম আধা ঘণ্টা বাড়ানো হলে পুঁজিবাজারের লেনদেনও আধা ঘণ্টা বাড়ানো হয়।

তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউনে ব্যাংকের লেনদেন কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলছে পুঁজিবাজারের লেনদেন।

এ বিভাগের আরো খবর