ভারতে ছড়িয়ে পড়া করোনার স্ট্রেইনের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হলেও এই নিষেধাজ্ঞা কেবল ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
ভারত থেকে পণ্য পরিবহন এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে না বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চিকিৎসা বা অন্য কোনো কাজে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভিসার মেয়াদ যদি ১৫ দিনের কম থাকে, সেক্ষেত্রে ১৪ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ থাকলেও তারা দেশে ফিরতে পারবেন।
নয়াদিল্লি, কলকাতা এবং আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের অনুমতি নিয়ে বেনাপোল, আখাউড়া এবং বুড়িমারী হয়ে তারা দেশে আসতে পারবেন। তবে অবশ্যই তাদের পিসিআর টেস্টের মাধ্যেমে করোনা নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে। সেই পরীক্ষার সময়সীমা বাংলাদেশে প্রবেশের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হতে হতে।
অনলাইনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে রোববার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
২৬ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ৯ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত দিয়ে মানুষের সাধারণ চলাচল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শর্ত মেনে যেসব বাংলাদেশি নাগরিকে দেশে ফিরবেন তাদের অবশ্যই ১৪ দিনের জন্য আইসোলেশনে থাকতে হবে।
বেনাপোল, আখাউড়া এবং বুড়িমারী- এই তিন স্থলবন্দর ছাড়া অন্যসব সীমান্ত দিয়ে মানুষের সাধারণ চলাফেরায় দুই সপ্তাহ স্থগিত থাকবে।
তবে পণ্যবাহী যান চলাচলের সুযোগ রেখেছে সরকার। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী যানবাহনগুলো বাংলাদেশের সীমানায় ঢোকার আগে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যানবাহনের চালক ও সহায়তাকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
তবে এই দুই সপ্তাহে, পণ্য পরিবহনে সড়কের চেয়ে রেল যোগাযাগকে উৎসাহিত করছে সরকার।
দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আলোকে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া এই সিদ্ধান্তগুলো ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছে দিতে নয়াদিল্লি, কলকাতা এবং আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার।
উপরোক্ত সিদ্ধান্তগুলো দুই সপ্তাহ কার্যকর হবে এবং যথাসময়ে সংশোধন করা হবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে বাংলাদেশ সেসব দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রস্থান করার সুবিধার্থে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন এবং সিঙ্গাপুরের জন্য বিশেষ বিমান পরিচালনা করছে।
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারসহ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব), মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের, বর্ডার গার্ড এবং কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধিরা।
ভারতে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের ব্যাপারে শনিবারই পরামর্শ দিয়েছিল দেশে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটি।
কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন ভেরিয়েন্ট আমাদের দেশে যাতে প্রবেশ করতে না পারে, এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি।
‘ভারতসহ অন্য দেশ থেকে যারা আসছে যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারে তাহলে অবশ্যই আমাদের দেশে এ ধরনের সংক্রমণ প্রবেশ করবে না।’
দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে বেশি। গত বছর দেশে যে ভ্যারিয়েন্ট এসেছিল তার চেয়ে এই দুই ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রামক। পাশাপাশি মানুষকে বেশি ভোগাচ্ছে, দ্রুত অক্সিজেন সাপোর্ট এমনকি আইসিইউ লাগছে।
এর মধ্যে ভারতের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। টানা চার দিন সেখানে তিন লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এর আগে কখনও বিশ্বে দেখা যায়নি।