বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাপ সামলানোর বিশাল বাজেট আসছে

  •    
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ২১:৫৮

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আভাস, এবার বাজেটের আকার ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে এটি হবে প্রায় ৮ শতাংশ বড়। এত অর্থের যোগান হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ঠিক তখন সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছরের জুনে এক কঠিন সময়ে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে হয়েছিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে।

টিকে থাকার ওই বাজেটি ছিল অর্থমন্ত্রীর জন্য অগ্নিপরীক্ষা। গত এক বছরে নানা অভিঘাতের মধ্যে অর্থনীতিকে সঠিক পথেই এগিয়ে নিতে সক্ষম হন তিনি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজ ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে’ সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এ জন্য দেশ -বিদেশে প্রশংসিতও হন প্রধানমন্ত্রী।

অর্থনীতিবিদসহ সরকারি নীতি নির্ধারকদের ধারণা ছিল, অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা আগের চেহারায় ফিরে যাবে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় সেই স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে গেছে। আশাবাদের আকাশে জমেছে কালো মেঘ। নতুন করে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ পথের সামনে কী অপেক্ষা করছে, কেউ জানে না। তৃতীয় ঢেউ যে আসবে না, তা কি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে?

এমন প্রতিকূল পরিবেশে নতুন বাজেট তৈরির কাজে হাত দিয়েছেনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রণয়নে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এরই মধ্যে প্রাক-বাজেট আলোচনা প্রায় শেষ করে এনেছেন তিনি। এসব আলোচনায় তিনি আগামী বাজেটে কৃষি, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

করোনায় চাকরিহারা বা আয় কমে যাওয়া বিপুল সংখ্যক মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে কর্মসংস্থান

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩ জুন আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করতে পারেন কুমিল্লা-৯ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ। বর্তমান সরকারের আমলে এটি হবে তার তৃতীয় বাজেট, যিনি আগের মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।

করোনা শেষ হয় নি। সহসাই চলে যাবে না বলে জনস্বাস্থ্যবিদদের অভিমত। ফলে একদিকে জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রাখা, অন্যদিকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার – এ দুটিকে মাথায় রেখে সামনে চলতে হবে অর্থমন্ত্রীকে।

গতানুগতিক পথে না হেঁটে আগামী বাজেটে চারটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। এক. করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ নজর দেয়া। দুই. কর্মহীনদের পুনর্বাসন করা। তিন. কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ক্ষুদ ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) ‘বাড়তি’ প্রণোদেনা দেয়া। চার. প্রণোদনার টাকা সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে নতুন করে প্রণোদনা, সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোসহ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে আসন্ন বাজেটে। এছাড়া কৃষি, খাদ্য ও রপ্তানিতে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে।

অর্থনীতিতে স্বস্তি এবং অস্বস্তি দুটোই আছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি আয় শক্তিশালী অবস্থানে। উদ্বেগের বিষয় রাজস্ব আয়ের গতি শ্লথ। সরকারের আয় কম, ব্যয় বেশি হ্ওয়ায় ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ধার বেড়েছে। ফলে কঠিন চাপে অর্থনীতি। এসব কারণে অর্থমন্ত্রীর সামনে বড় ঝুঁকি। আছে চ্যালেঞ্জও।

গত বছর নিজের প্রথম পেশ করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল

পরিস্থিতির কারণে এবার এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চাপ কম আসছে সাংসদদের তরফ থেকে। কিন্তু করোনা-পরবর্তী স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সামাজিক সুরক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বেড়েছে। তার সঙ্গে আছে বেতন-ভাতা ভতুর্কিসহ নিয়মিত রুটিন ব্যয়। করোনাকালীন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ‘অতিরিক্ত’ প্রণোদনার চাপ।

এসব চাপ সামলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা করতে আরেকটি বিশাল ব্যয়ের নতুন বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। আসন্ন বাজেটের আকার ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রেখে বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ছয় শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য মূল বাজেট থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছেটে ফেলা হয়। সম্পদের সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে প্রতিবছরে মতো এবারও সংশোধন করা হয় এডিপি। ফলে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।

অর্থের জোগান দেয়াই বড় চ্যালেঞ্জ

বিশাল বাজেট বাস্তবায়নে টাকার জোগান নিশ্চিত করাই সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। কারণ, প্রতি বছর রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, বাস্তবে তা তার ধারেকাছেও থাকে না।

এ বছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয় ৪০ শতাংশ। এনবিআরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৬ শতাংশ।

এই সময়ে আহরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে আছে। ফলে রাজস্বে বিশাল ঘাটতির কারণে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করছে সরকার। এতে করে আর্থিক চাপ বাড়ছে।

যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, রাজস্ব বিভাগে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, করোনা কোন দিকে মোড় নেয়, কেউ বলতে পারবে না। ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বছরজুড়ে ভ্যাকসিন কর্মসূচি চালাতে হবে। ফলে আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

করোনায় শিল্প উৎপাদন ও সেবাখাতের ব্যাপক ক্ষতি হলেও কৃষির বাম্পার ফলন সরকারের জন্য স্বস্তিকর হয়েছে

শিল্প খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ অব্যাহত রেখে শুধু এসএমই খাতে বাড়তি প্রণোদনার কথা বলেন তিনি। একই সঙ্গে কোভিডের কারণে যারা কর্মহীন হয়েছেন, তাদের কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পৃথক ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে একটি ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অর্থনীতিবিদ।

অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো ঠিক আছে বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর চেয়ে কোভিড প্রতিরোধে যেসব কর্মসূচি চলছে, সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।

ড. জায়েদ বখত মনে করেন, অর্থনীতি মোটামুটি সঠিক পথে আছে। একে আরও গতিশীল করতে হবে। এ জন্য বিদ্যমান প্রণোদনার অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তার প্রত্যাশা, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বেশি স্থায়ী হবে না। ফলে অর্থনীতি দ্রুতই পুরোপুরি সচল হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘মানুষের জীবন ও জীবিকার দিক থেকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি সংকট চলছে। আয় নেই। বেকারত্ব বাড়ছে। বাড়ছে বৈষম্য। এ সব সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতানুগতিক পথে না হেঁটে আসন্ন বাজেটে এসব বিষয়ে বেশি নজর দিতে হবে অর্থমন্ত্রীকে।’

এ বিভাগের আরো খবর