বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লকডাউনেই পুঁজিবাজারে নতুন আশা

  •    
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ১৭:৩২

এই কয় দিনে সূচকে যোগ হয়েছে মোট ৩২৯ পয়েন্ট। লকডাউনের আগে সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি। গত ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট উঠার পর পুঁজিবাজারে দীর্ঘ দর সংশোধন শুরু হয়। এর মধ্যে সাম্প্রতিক এই উত্থানে আবার পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশা করছে বিনিয়োগকারীরা।

লকডাউন দিলে কী হবে, এই আশঙ্কায় পুঁজিবাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, তার পুরো বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে লকডাউনে। গত ১২ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন বাড়ছে সূচক।

টানা ৯ কার্যদিবসে এক দিনের জন্যও সূচক পড়েনি। গত কয়েক বছরে এমন প্রবণতা বিরল।

এই কয় দিনে সূচকে যোগ হয়েছে মোট ৩২৯ পয়েন্ট। লকডাউনের আগে সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি।

গত ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট উঠার পর পুঁজিবাজারে দীর্ঘ দর সংশোধন শুরু হয়। এর মধ্যে সাম্প্রতিক এই উত্থানে আবার পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশা করছে বিনিয়োগকারীরা।

গত এক বছরে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাত টানা উত্থান দেখেছে বিনিয়োগকারীরা। তারপর মূল্যসংশোধনের মাধ্যমে দু-চারদিন পর আবার স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরেছে পুঁজিবাজার।

পুঁজিবাজারে সূচক কয়েকদিন বাড়তে থাকলে সাধারণত পরে কমে, যাকে বাজার সংশোধন বলা হয়। লডকাউনেও টানা তিন থেকে চার দিন সূচকের বড় ধরনের উত্থানের পর বাজারে পড়তির প্রচণতাও এক দুই দিন দেখা গেছে। তবে শেষ বেলায় আবার বেড়ে অল্প হলেও সূচক বেড়েছে।

সংশোধনের দিনও এক পয়েন্ট সূচক বেড়েছে একদিন। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন গত ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা যে পতন হয়েছে, সেখান থেকে বের হওয়া গেছে কি না, সেটি বোঝা যাবে আরও কিছু দিন পর।

সিদ্ধান্তে আসতে আরও বিলম্বের কারণ হচ্ছে, যখন বাজার পড়েছে, তখন ভালো মন্দ সব শেয়ারের দাম কমেছে। সব খাতের শেয়ারই দর হারিয়েছে।

তবে লকডাউনে উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান বিমা খাতের। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে সাধারণ বিমার শেয়ার।

বিমা খাতের সব শেয়ারের দর এর আগেও গত বছরের শেষে দেখা যায়, এই খাতের এমন কোনো শেয়ার ছিল না যার দাম দ্বিগুণ হয়নি। কোনো কোনোটির দাম বেড়ে আট থেকে ১০ গুণও হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারির পর ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ দাম কমে যাওয়ায় শেয়ারধারীরা আবার ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।

এখন ব্যাংক, ওষুধ, প্রকৌশল খাতের শেয়ারগুলোর দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে একদিন ১০ বা ২০ পয়সা বাড়লে পরের দিন আবার কমে, এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে ব্যাংক খাত। অথব বাজার মূলধন সবচেয়ে বেশি এই খাতের। আর লভ্যাংশ দেয়ার দিক দিয়েও অন্য সব খাতের চেয়ে এই খাত এগিয়ে।

লকডাউনের কারণে ব্রোকারেজ হাউজে না দিয়ে অ্যাপ বা ফোনে অর্ডার দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজাবারে সূচকের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয় লকডাউনে গত ১২ এপ্রিল থেকে। এরপর ১৩, ১৫, ১৮, ১৯, ২০ ২১, ২২ এবং সবশেষ রোববার ২৫ এপ্রিল বাড়ল সূচক।

উত্থান অব্যাহতের সাম্প্রতিক ধারা

গত বছরে যখন করোনার কারণে পুঁজিবাজার ২৫ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয় তার আগেও সূচকের উত্থান পতন ছিল। টানা পতন বা টানা উত্থান দেখা যায়নি। তবে ৩১ মে পুঁজিবাজার খোলার দিন সূচক পতন হয়েছিল ৬১ পেয়েন্ট। তারপর ১ জুন থেকে সাপ্তাহিক ছুটিসহ ৭ জুন পর্যন্ত পাঁচ কার্যদিবস সূচক টানা বেড়েছিল।

তারপর আবার ৬ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ৫ কার্যদিবস টানা সূচক বেড়েছিল। এছাড়া গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ৫ কার্যদিবস সূচক বাড়ার রেকর্ড পাওয়া গেছে।

কিন্ত এবারের লকডাউনে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসার আগেই পতন শুরু হয় পুঁজিবাজারে।

৫ এপ্রিল লকডাউনে পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাবে- এমন গুজেবে ৪ এপ্রিল পুঁজিবাজারে সূচকের পতন হয় ১৮২ পয়েন্ট। আতঙ্কে কমে দামে শেয়ার বিক্রি করে দেন বিনিয়োগকারীরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে ব্যাংকে লেনদেন চলবে লকডাউনেও। আর পরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানায়, লেনদেন চলবে স্টক এক্সচেঞ্জেও।

লকডাউন শুরু হওয়ার পর ৫ এপ্রিল সূচক বাড়ে ৮৯ পয়েন্ট। তারপর ভালো চলছিল পুঁজিবাজার। এরমধ্যে ৭ এপ্রিল বিএসইসি পক্ষ থেকে ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন দর উঠিয়ে দেয়া হয়। এতে ঠাক্কা লাগে সূচকে।

৮ তারিখ সূচকের পতন হয় ৮৩ পয়েন্ট । দুদিন সরকারি ছুটির পরবর্তী লেনদেন ১১ এপ্রিল সূচকের পতন হয় ৯০ পয়েন্ট।

কিন্ত কঠোর লকডাউন শুরুর আগের দুই কার্যদিবস ১২ ও ১৩ এপ্রিল শুরু হয় সূচকের উত্থান। প্রথম দিন বাড়ে ২৩ পয়েন্ট। পরের দিন বাড়ে ৭০ পয়েন্ট।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে পড়তি বাজারে লকডাউন নিয়ে আসে নতুন আতঙ্ক। শুরুর আগেই ধস নামে পুঁজিবাজারে

কঠোর লকডাউন শুরুর দিন ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের ছুটি থাকায় পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন হয় ১৫ এপ্রিল। সেদিন সূচক বাড়ে ৫১ পয়েন্ট।

এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ১৮ এপ্রিল রোববার সূচক বাড়ে ২১ পয়েন্ট। পরদিন বাড়ে ১৮ পয়েন্ট। ২০ এপ্রিল আবার বড় উত্থান দেখে পুঁজিবাজার। সেদিন বাড়ে ৭১ পয়েন্ট।

টানা কয়দিন সূচক বাড়ার পর ছেদ পড়ার অবস্থা তৈরি হয় ২১ এপ্রিল। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর দেড় ঘণ্টা সূচক কমে যায়। তবে শেষ এক ঘণ্টার উত্থানে শেষ পর্যন্ত এক পয়েন্ট যোগ হয় সূচকে।

২২ এপ্রিল সূচক বাড়ে আরও ১১ পয়েন্ট। এরপর দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আবার ২৫ এপ্রিল বাড়ল ৬৩ পয়েন্ট।

উত্থানে বিমা ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড

পুঁজিবাজারের এই উত্থানে আকড়ে আছে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত। ব্যাংক ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সময় সময় বাড়লেও তা স্থায়ী হয়নি একদিনের বেশি।

১৫ এপ্রিল থেকে পালাক্রমে একদিন বিমা খাত আরেকদিন মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের উত্থান হয়েছে। তবে গত সপ্তাহের ২০ এপ্রিলের পর থেকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাপট কমলেও বিমার গতি এখনও বিদ্যমান।

১৮ এপ্রিল তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর কমেছিল মাত্র একটির। আর একটির দর ছিল পাল্টায়নি। সেদিন মোট ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছিল। তারপরের কার্যদিবসে দর বেড়েছিল ১৩টির। এরপর ১৯ এপ্রিল একই ভাবে ৩৪টি ফান্ডের দর বেড়েছিল। এর পাশাপাশি দর বেড়েছিল বিমা খাতেরও।

বিমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএ কার্যালয়। সাম্প্রতিক উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান এই কর্তৃপক্ষের আওতাধীন বিমা খাতের

২২ এপ্রিল লেনদেনে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ১১টির। দর পাল্টায়নি দুটির। আর লেনদেন হয়নি একটির। বাকি ৩৬টির দর বাড়ে।

এদিন লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে বিমা খাতের ছিল পাঁচটি। দুদিন ছুটির পর ২৫ এপ্রিলও একই ভাবে লেনদেন আগ্রহের খাত হিসেবে ছিল বিমা। এদিন লেনদেনে দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া দশ কোম্পানির মধ্যে সাতটি ছিল বিমা খাতের।

কী বলছেন বিশ্লেষকরা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজারের উত্থান সূচক দিয়ে নয় বরং লেনদেন দিয়ে পরিমাপ করা উচিত। লেনদেন ভালো হলে সূচক কমে গেলেও তাতে আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্ত সূচক ভালো কিন্ত লেনদেন কম তাহলেই সেটি আতঙ্কের।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘সূচক বাড়ছে এটা আতঙ্কের নয়। তবে যে খাতগুলোর উপর ভর করে সূচক ও লেনদেন বাড়ছে সেটি আতঙ্কের। ঢালাও ভাবে বিমা খাতের উপর যেভানে বিনিয়োগ হচ্ছে সেটি কতদিন স্থায়ী হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

তিনি বলেন, ‘লকডাউনের এই সময়ে মার্জিন ঋণধারীরা বেশি বিনিয়োগ করছে। আর পুঁজিবাজারে যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে তারা কখনও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে না। তারা সর্বোচ্চ সাত দিনের জন্য বা ডে ট্রেডিংয়ে বিশ্বাসী। এখন যেভাবে লেনদেন বাড়ছে তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা তাদের বেশি সতর্ক হতে হবে। কারণ তারা যে খাতের শেয়ারের দর বাড়ে সে খাতেই বিনিয়োগ করে।’

এ বিভাগের আরো খবর