করোনাভাইস মহামারিতে ‘ধর্মভিত্তিক মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ জাতীয় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক ওয়েবিনারে মন্তব্য করা হয়েছে।।
শনিবার দুপুরে ঢাকার ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয় থেকে ‘ধর্মভিত্তিক মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি: শোভন সমাজের অশোভন প্রতিপক্ষ’ শিরোনামে এ ওয়েব সেমিনার হয়।
এতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আল কাদেরী জয়। সভা সঞ্চালনা করেন অর্থনীতি সমিতির সহসম্পাদক শেখ আলী আহমেদ টুটুল।
অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ গবেষণা গ্রন্থটির বিষয়বস্তু ঘিরে ১৩ সিরিজের আলোচনা সভার এ সপ্তম পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়েবিনারে ইনু বলেন, ‘অধ্যাপক বারকাতের এই বই অনেক তথ্যসমৃদ্ধ, তার উপস্থাপিত তথ্য ও ব্যাখ্যা আমি সমর্থন করি। তিনি ঠিকই বলেছেন যে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় মানুষ ধর্মান্ধ হয়ে পড়ে...রাজনীতির মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে মৌলবাদ ব্যবহৃত হয়।’
বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশ বিনির্মাণ উল্টোপথে হাঁটা শুরু করে।...বর্তমানে মূলধারার রাজনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থায় মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।...রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে মৌলবাদীদের ঔদ্ধত্যে একটা হুমকির মুখে আমরা পড়ে গেছি।...করোনাভাইরাস মহামারিতে হতাশাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করতে পারে মৌলবাদীরা।’
ইনু বলেন, ‘সংবিধানের চার নীতি যারা মানে না তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ফুলের বাগানে শুকরকে ঢুকতে দিলে ফুলের বাগান তছনছ করে দেবে। তেমনই গণতন্ত্রে জঙ্গিবাদী মৌলবাদীদের আশ্রয় দিলে সব তছনচ হয়ে যাবে। এখানে মাঝামাঝি কোনো তত্ত্ব নেই, একাত্তরে যেমন পাকিস্তানিদের আমরা পরাজিত করেছি, তেমনি এখন জঙ্গি ও মৌলবাদীদের তাড়াতে হবে।’
আওয়ামী লীগের ভেতরে ধর্মব্যবসায়ী ও মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে অভিযোগ করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও বড় কোনো বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবীদের রক্ষা করা হয়নি, কারণ প্রতিবিপ্লবীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা হয়নি।
‘মৌলবাদীদের উত্থানের বড় কারণ হলো আর্থিক সাহায্য। এটা শুরু করেছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, এখনও বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আর্থিক সহায়তা আসে পাকিস্তান ও তার দোসরদের কাছ থেকে।’
আল কাদেরী জয় বলেন, ‘হেফাজত ২০০৯ এর নারী নীতিমালার বিরোধিতা করেছিল। সেই হেফাজতের সঙ্গে আমাদের শাসকগোষ্ঠী অতীতের শাসকগোষ্ঠীর মতো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। হেফাজতের দাবি মেনে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এনেছে। হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমিসের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান দেয়া হয়েছে। কৃষক-শ্রমিক-ছাত্রদের তাদের অধিকার থেকে দূরে সরিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।’
জয় বলেন, ‘অধ্যাপক আবুল বারকাত যে শোভন সমাজের কথা বলেছেন তাকে আমরা আমাদের প্রত্যাশার জায়গা থেকে দেখি। আর তা পূরণের সামাজিক ভিত্তি উপাদান হতে পারে মৌলবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করা, শোষণমুক্তির লড়াই করা।’
শেখ আলী আহমেদ টুটুল জানান, আগামী ৮ মে দুপুর ২টায় ‘বিশ্বায়ন প্রসঙ্গে: শোভনসমাজের সন্ধানে’ শীর্ষক অর্থনীতি সমিতির অষ্টম ওয়েবিনার হবে।
এতে আলোচক হিসেবে থাকবেন- সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ডিসটিংগুইস ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. আব্দুল হান্নান।
ওয়েবিনারটির সঞ্চালকের দায়িত্বে থাকবেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ড. মো. লিয়াকত হোসেন মোড়ল।
আবুল বারকাতের ২০ বছরের গবেষণার ফসল ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র: ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা।
৭১৬ পৃষ্ঠার এ বইটিতে বড় দাগে ১২টি অধ্যায়ে আছে- শোভন সমাজের তত্ত্ব-কাঠামো, প্রচলিত মূলধারার অর্থনীতি শাস্ত্রের অপরাগতা ও নতুন অর্থনীতি শাস্ত্রের যৌক্তিকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক অর্থনীতি: শোভন জীবনব্যবস্থার ভিত্তি, ধনী-দরিদ্র-শ্রেণিবৈষম্য ও অসমতা: শোভনসমাজ বিনির্মাণে প্রধান দুর্ভাবনার বিষয়, ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ:শোভন সমাজের অশোভন প্রতিপক্ষ, বিশ্বায়নের স্বরূপ, দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের কাঠামোতে ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ কেন হচ্ছে কতদূর হবে, কোভিড-১৯ এ ক্ষতির বিশ্লেষণ এবং মোকাবিলার ভাবনা, শোভন সমাজ-অর্থনীতি বিনির্মাণের প্রস্তাবিত মডেল, সমাজ সমগ্রকের রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং কেমন হওয়া উচিত শোভন সমাজ বিনির্মাণের জাতীয় বাজেট?