প্রথম রোজা থেকেই শুরু হয়েছে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন। এতে বাড়তি বিক্রির চাপে দাম বেড়ে যায় সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজারে। তবে ১০ দিনের মাথায় পরিস্থিতি পাল্টেছে। বাজারে কমেছে ক্রেতা, বিক্রির চাপও কমেছে। এতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমে এসেছে। সবজির পাশাপাশি দাম পড়ে গেছে মুরগিরও।
করোনার কারণে মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট জামে মসজিদের সামনের মাঠে বসেছে অস্থায়ী বাজার। সেখানে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে দেখা যায়, মাঠের চারপাশ ও মাঝে বেশকটি দোকান থাকলেও ক্রেতা ছিলেন হাতে গোনা। ক্রেতা কম থাকায় আগের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করছেন বলে জানান বিক্রেতারা। ইফতারে ব্যবহৃত সবজির দামও সপ্তাহের চেয়ে বেশ কম।
সবজি বিক্রেতা নুর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাঁচা বাজারে দামের কোনো ঠিক নেই। কোনো কাস্টমারের কাছে ১০ টাকা বেশি নিই, কারও কাছে ৫ টাকা কম রাখি। আবার কিনা দামের কমেও বেচা লাগে।
‘কাঁচামাল এক-দুই দিনের বেশি রাখন যায় না, নষ্ট হই যায়। নষ্ট না করি কম দামে বেচলেও কিছু টাকাতো উঠে। তাই আগের দিনের মালের দাম কম থাকে। তবে কেনা দাম থেকে বেশি লাভ করি না। কাস্টমার কম, তাই এমন দাম কই, কেউ যাতে ফিরত না যায়।’
সবজি বিক্রেতারা জানান, রোজায় ইফতারে ব্যবহারের লেবু ও মরিচ ছাড়া সবজির মধ্যে রয়েছে শসা, বেগুন, টমেটো, গাজর। রোজার শুরুতে এসব সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। কাঁচা মরিচ বেড়ে হয়েছিল ৮০ টাকা, শসা বাজার ভেদে ৮০-১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ও ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, লেবুর হালিও ৩০ থেকে ৮০ টাকায় উঠেছিল। তবে এখন তা প্রায় আগের দামের কাছেই।
এ বাজারে প্রতিকেজি শসা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, টমেটোও ১০ টাকা কমে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালিও নেমেছে ১৫ থেকে ৪০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
সবজি বিক্রেতা মো. মজিবর বলেন, ‘বেচা-বিক্রি বেশি ভালা না, আগের মতো কাস্টমার নাই। তাই দামও কম। আগে যে লেবু ৪০ টাকায় বেচছি, তা ১৫ থেকে ২০ টাকায় নামছে, রসও ভালো আছে। বেগুন, শসার দামও কমছে। মরিচের পোয়া ১৫ টাকা, কারও কাছে ১২ টাকায়ও বেচতাছি।’
করোনার সময় অস্থায়ী এই বাজরে স্বামীকে নিয়ে ব্যবসায় বসেছেন শিল্পী বেগম। অন্য সময় আশপাশের সড়কে ভ্যান নিয়ে বসলেও লকডাউনের শুরু থেকেই বসেন এই বাজারে। পেঁয়াজ, আলু, রসুন ও আদা রয়েছে তার দোকানে।
শিল্পী বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম একটু কমছে। তবে কত মাল নেবে তা বুঝি দাম রাখি। যে ১ কেজি নিব, তার দাম তো যে ৫ কেজি নিব তার মতো ওইব না। ৫-১০ কেজি নিলে কেজিতে ২ টাকা কমেও দিয়ে দিই।
‘যেমন পেঁয়াজ এক কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা। ৫ কেজি নিলে ১৯০ টাকা। লাল আলুও এক কেজি ২০ টাকা, ৫ কেজি ৯০ টাকা। তবে সাদা আলুর দাম কম আছে। এক কেজি নিলে ১৮ টাকা, ৫ কেজি নিলে ৮৫ টাকা। আদা-রসুনের দাম একটু বাড়ছে, এখন দেশি আদা ১২০ টাকা, দেশি রসুন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় এবং বিদেশি রসুন (বড়, আমদানি করা) ১২০ টাকায় বেচতেছি।’
এদিকে বাজারে কমেছে মুরগির দাম। কেজি ৩০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে সোনালি মুরগি; ব্রয়লার ১৫০ টাকার নিচে। বাজার ও আকার ভেদে সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, ব্রয়লার ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি বিক্রেতা মো. মিরাজ বলেন, ‘আগের চেয়ে দাম একটুতো কমছে। তবে যে রকম কমার কথা ছিল তা কিন্তু কমেনি। আগে মুরগি ঠিকমতো পাইতাম না, এখন ঠিকমতো পাইতেছি। পাইকাররা দাম ছাড়তাছে না। আমরা আর কী করুম, সারা দিনে ৫-৭ হালি মুরগি বেচি, তা দিয়াই সংসার চালাই। আমগো জন্য দাম বাইড়লেও যা না বাইড়লেও তা। শুধু বেচা-বিক্রি অইলেই অয়।’
মাংসের মধ্যে খাসি প্রতিকেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা এবং গরু ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের হালি ৩০ থেকে ৩২ টাকা।
মুদি দোকানে প্রতিকেজি ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, সরু দানার মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, মোটা দানা ৬৫-৭০ টাকা, চিনি ৬২-৬৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ১২৩ থেকে ১২৫ টাকা, ১ লিটারের বোতল ১৩৫ টাকা।