লকডাউনের মধ্যে ব্যাংক কর্মীদের যাতায়াত-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রত্যেক ব্যাংকে কর্মীদের নিজস্ব পরিবহনে আনা-নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কোনো ব্যাংক যাতায়াত-ব্যবস্থা না করতে পারলে কর্মীদের যাতায়াত ভাতা প্রদানের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়।
এ সার্কুলার সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউন ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মঙ্গলবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১২ এপ্রিল করোনাভাইরাসজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধে জারি করা প্রজ্ঞাপনে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সেটি এখানেও বহাল থাকবে।
ওই বিধিনিষেধ ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা স্ব-স্ব ব্যাংক করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংক সেটা পরিপালন করেনি।
বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
রূপালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাদল মিয়া বলেন, ‘চলমান বিধিনিষেধে কোনো যানবহনের ব্যবস্থা না থাকায় অফিসে পৌঁছাতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এভাবে আর কয়েক দিন চলতে থাকলে বেতনের বড় অংশ যাতায়াতেই খরচ হয়ে যাবে।
‘প্রধান কার্যালয়ে কর্মরতদের যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকলেও শাখা পর্যায়ে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই।’
অগ্রণী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘লকডাউনে ব্যাংকের শাখা খোলা; সেটা সমস্যা না। তারা সেবা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু লকডাউনে জরুরি সেবাদানকারী ব্যাংকারদের সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধা হিসেবে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা জরুরি।’
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মাসুম আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু আমাদের যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। ঠিকমতো রিকশা পাওয়া যায় না।
‘রিকশা পাওয়া গেলেও পুলিশের বাধায় আর রিকশা নিয়ে আসা যায় না। আবার রিকশার সংখ্যা কম থাকায় ভাড়াও অনেক বেশি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই কিলোমিটারে একটি ও জেলার প্রধান শাখা সপ্তাহে পাঁচ দিন এবং উপজেলা পর্যায়ে একটি শাখা রবি, মঙ্গল বৃহস্পতিবার খোলা থাকছে।
সবশেষ সার্কুলারে বলা হয়, ‘১৩ এপ্রিল জারিকৃত সার্কুলারে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্ব-স্ব অফিসে আনা-নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, সরকারঘোষিত বিধি-নিষেধ চলাকালে ব্যাংক সকল ক্ষেত্রে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
‘সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম চালু রাখার জন্য ব্যাংকে আসা-যাওয়ার জন্য গণপরিবহনের অপ্রতুলতার কারণে ব্যাংক কর্মকর্তা/কর্মচারীরা অধিক ব্যয় ও ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। যাতায়াত সমস্যা নিরসনে ব্যাংক তার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব পরিবহনসুবিধা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হলো।’
সার্কুলারে আরও বলা হয়, ‘কোনো কারণে যাতায়াত-সুবিধা নিশ্চিত করতে অসমর্থ/ব্যর্থ হলে ব্যাংকে আসা-যাওয়ার জন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরকারি বিধিনিষেধ চলাকালে যাতায়াত ভাড়ার প্রকৃত ব্যয় অধিক বিধায় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃক যৌক্তিক হারে ব্যবস্থা যাতায়াত ভাতা প্রদান করবে। ব্যয়ের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে স্ব-স্ব ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের কার্যোত্তর অনুমোদন গ্রহণ করবে।’
এ নির্দেশনা ১৪ এপ্রিল থেকে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ চলাকালে প্রযোজ্য থাকবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার সময়সীমা প্রাথমিকভাবে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল এবং পরবর্তী সময়ে ২১ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
এ সময় ব্যাংক লেনদেনে চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। আর আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে আড়াইটা পর্যন্ত।