সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে উত্থানে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। করোনা পরিস্থিতিতে তৃতীয় পর্যায়ের চলমান বিধিনিষেধ নতুন করে বেড়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। দ্বিতীয় পর্যায়ের বিধিনিষেধের পুরো সময়টিতে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
তৃতীয় পর্যায়ের বিধিনিষেধের প্রথম দিনে লেনদেনে এসেছে চমক। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় লেনদেন পৌঁছেছে হাজার কোটি টাকায়। এদিন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল তালিকাভুক্ত বিমা খাত ও মিউচুয়াল ফান্ড।
লেনদেন বেশি বিমা ও মিউচুয়াল ফান্ডের
বৃহস্পতিবার লেনদেনে বিনেয়াগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে বরাবরেরর মতোই তালিকাভুক্ত বিমা ও মিউচুয়াল ফান্ডে। ফলে এ দুই খাতের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। লেনদেনে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ১১টির। দর পাল্টায়নি ২টির। আর লেনদেন হয়নি ১টির। বাকি ৩৬টির দর বেড়েছে।
এদিন লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে বিমা খাতের ছিল ৫টি। এর মধ্যে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এ ছাড়া তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের ৭ দশমকি ৪৫ শতাংশ, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ দর বেড়েছে।
এ ছাড়া ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির। দর কমেছে ৯টির। আর দর পাল্টায়নি ২টির।
গত সপ্তাহের শুরু থেকে পুঁজিবাজারে পালাক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে তালিকাভুক্ত এই দুই খাত। গত বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে দর বেড়েছিল ৩৬টির। তারপর রোববার দর বাড়ে ১৩টির। মাঝে দুদিন নেতৃত্বে ছিল বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। তারপর আবারও বুধবার ওর বৃহস্পতিবার উত্থানে ফিরেছি মিউচুয়াল ফান্ড। সঙ্গে পাল্টা দিয়ে বেড়েছে বিমা খাতের কোম্পানির শেয়ারদর।
এ সময়ে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দিলেও তাতে খুব বেশি আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১০টির। দর পাল্টায়নি ১২টির আর দর কমছে ৯টির।
বাজার বিশ্লেষক
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজার যেহেতু ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, সেহেতু এ সময়ে খারাপ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ারও সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা যেন দ্রুত মুনাফার লোভে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে।
তিনি বলেন, খারাপ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ে মূলত যাদের হাতে এসব শেয়ার আছে সেগুলো বিক্রি করার জন্য। সচরাচর দেখা যায়, এসব কোম্পানির শেয়ারদর একবার বাড়লে আর বাড়ে না। দীর্ঘ সময় পর আবার বাড়ে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগকরলে ঝুঁকি কম থাকবে।
সূচক ও লেনদেন
লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টায় পুঁজিবাজারের প্রধান সূচকে ছিল উত্থান-পতন। তারপর আর সূচকে পতন দেখা যায়নি। লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত ছিল উত্থানে।
দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৩ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৩৭ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৪ দশমিক ০৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৮৭ পয়েন্টে।
এ সময়ে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৩টির, কমেছে ১৩৫টির। দর পাল্টায়নি ৭৬টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৮৮৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১২ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭২৩ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ৯৫টির। দর পাল্টায়নি ৫১টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৩৬ কোটি টাকা।