বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনায় ছোট ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি

  •    
  • ২২ এপ্রিল, ২০২১ ০৮:৩২

এক দিন দোকান বন্ধ থাকলেই ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা। বৈশাখ, রমজান ও ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় মোট পুঁজি বিনিয়োগ হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা। লকডাউনের কারণে সব ব্যবসা এখন ধসের পথে।

পড়ালেখা শেষ করে প্রযুক্তি যন্ত্রাংশের ব্যবসায় দুই মাস ধরে যুক্ত আরিফ খান। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। কিন্তু লকডাউন এসে স্বপ্নভঙ্গের মতো অবস্থা। দোকান খোলা যাচ্ছে না। মানুষজনও নেই। এভাবে আর দুই সপ্তাহ চললে কঠিন সংকটে পড়তে হবে তাকে।

লকডাউনে রাজধানীতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় নিয়োজিত লাখ লাখ ব্যবসায়ীর একই হাল। দোকানপাট বন্ধ থাকায় একদিকে বিপাকে মালিকেরা, অন্যদিকে কর্মচারীদেরও ত্রাহি অবস্থা।

প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, বিপণিবিতান। ফলে দোকানকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের বাড়ছে লোকসান। করোনাভাইরাস মহামারিতে এক বছর ধরেই ব্যবসায় মন্দা।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ৫ এপ্রিল থেকে চলাচলে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে ১৪ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফা এবং সবশেষে ২১ এপ্রিল থেকে তৃতীয় দফা লকডাউন আরোপ করা হয়। দোকানপাট, শপিং মল ও বিপণিবিতান বন্ধ থাকায় পয়লা বৈশাখ, রোজাকেন্দ্রিক বাণিজ্য থেকে বঞ্চিত লাখ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিপর্যয়

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি। প্রতি প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৪ জন কর্মচারী ধরা হলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২ কোটি ১৪ লাখ। বলা হচ্ছে, কর্মচারীদের এপ্রিলের বেতন মে মাসে দিতে হবে। আর ঈদের কারণে মের বেতন মে মাসেই দেয়ার দাবি জোরালো হয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে ঈদ বোনাস।

দোকানমালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, একজন কর্মচারীর ন্যূনতম বেতন ১৫ হাজার টাকা ধরলেও এপ্রিল-মে মাসের বেতন এবং বোনাস একসঙ্গে দিতে হবে। শতভাগ বোনাস ধরে হিসাব করলে একজনকেই পরিশোধ করতে হবে ৪৫ হাজার টাকা। সে ক্ষেত্রে ২ কোটি ১৪ লাখ ব্যবসায়ীর এটা পরিশোধ করতে প্রয়োজন ৯৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

ব্যবসায় ক্ষতি কত?

এক দিন দোকান বন্ধ থাকলেই ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা। বৈশাখ, রমজান ও ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় মোট পুঁজি বিনিয়োগ হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা। লকডাউনের কারণে সব ব্যবসা এখন ধসের পথে। কারণ, এই বিনিয়োগের কোনো টাকাই এখন আর ফেরত আসবে না। পাইকারি ব্যবসা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

দোকানমালিক সমিতির সভাপতি হেলালউদ্দিন জানান, সাধারণ ছুটিতে কেনাবেচা বন্ধ থাকায় দোকানগুলোর দিনে ক্ষতি হচ্ছে মোট ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একেকটি দোকানে গড়ে দিনে বিক্রি ধরা হয় ২০ হাজার টাকা। আর এই বিক্রির ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ধরা হয় ১০ শতাংশ। এতে দৈনিক লাভের ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৭৪ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা।

আত্মহত্যার হুমকি

লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকায় বাড়ছে দীর্ঘশ্বাস। গত বছর ব্যবসায় মন্দা প্রকট আকার ধারণ করে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এবারও যদি এমন হয়, তাহলে আর বাঁচার উপায় নেই। ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এত খারাপ অবস্থা যে আগামী সপ্তাহ থেকে তাদের খাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ব্যবসায়ী নেতা হেলালউদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি প্রায় ১০০ ব্যবসায়ী বলেছে তারা আত্মহত্যা করবে, যদি ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে।’

এমন অবস্থায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিলে কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

২৫-২৬ এপ্রিল দোকান খুলে দেয়ার ইঙ্গিত

২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে লকডাউনের সময়সীমা। তবে এর আগেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি করেছে ব্যবসায়ীদের কয়েকটি সংগঠন।

দোকানমালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘লকডাউনে গার্মেন্টস, শিল্প-কারখানা, ব্যাংক, বিমা, পুঁজিবাজার সবকিছু খোলা। কিন্তু দোকান কেন বন্ধ, সেটা বোধগম্য নয়। বড় ব্যবসায়ীদের সব খোলা আছে, কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সবকিছুই বন্ধ।’

তিনি বলেন, ‘২৫ এপ্রিল থেকে দোকান খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি।’

হেলাল উদ্দিন জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ঋণ নিয়ে তারা বিনিয়োগ করেছেন। এখন খুললে আগের মতো ব্যবসা না হলেও কিছুটা তো ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।

এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ অথবা ২৬ এপ্রিল সীমিত পরিসরে সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করে দোকান খুলে দেয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে দোকানপাট খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট সুরক্ষা’ ব্যবস্থা পরিপালন করতে হবে।

নিউমার্কেট দোকানমালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, দোকানপাট খুলে দেয়ার সুযোগ দেয়া হলে সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব ব্যবসায়ী ব্যর্থ হবে, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।

ঢাকা মহানগর দোকানমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিপু নিউজবাংলাকে বলেন, ব্যবসায়ীদের এখন আর কোনো উপায় নেই।

পেটে ভাত নেই। তাই যেকোনো সময় তারা রাস্তায় নামতে পারে। এত বড়সংখ্যাক মানুষকে বুঝিয়ে রাখা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, কঠোর তদারকির মাধ্যমে দোকানপাট খুলে দেয়া হোক। তা না হলে বিপর্যয় তৈরি হবে।

এ বিভাগের আরো খবর