টানা সপ্তম দিনের মতো উত্থানে শেষ হলো পুঁজিবাজারের লেনদেন। এই অবস্থায় পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগ আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এই সময়ে মঙ্গলবার ডিএসইতে গত তিন মাসের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজারের এমন অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগ আগ্রহী হতে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের।
চলমান লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ২১ এপ্রিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউন বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। এই সময়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন বর্তমান নিয়মেই পরিচালিত হবে বলে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
করোনার এই সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীদের ব্রোকার হাউজে না গিয়ে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করার পরামর্শ দেন। ফলে গত ৫ এপ্রিল থেকে অদ্যবধি বিনিয়োগকারীরা ডিজিটাল প্লাট ফর্মে লেনদেন করে আসছেন।
লেনদেনের চাপ মোবাইল অ্যাপে
লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই বিনিয়োগকারীরা ডিজিটার প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করে আসছেন। বুধবার অতিরিক্ত লেনদেন চাপে ডিএসই মোবাইল অ্যাপ যথাযথভাবে কাজ করেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে শেয়ার কেনা বেচার জন্য অর্ডার দেয়া হলেও তা ছিল ধীরগতির। অনেক অর্ডার কার্যকর হয়নি বলেও বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ থেকে অভিযোগ এসেছে।
একই সঙ্গে ব্রোকার হাউজগুলো থেকে শেয়ার ক্রয়ের লিমিট নেয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা হয়েছে।
এ বিষয়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, এ সংক্রান্ত কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। করোনার এই সময়ে যেহেতু ডিএসইর প্রি ওপেনিং সেশন নেই, তাই ব্রোকার হাউজগুলোকে আগের দিন লিমিট নেয়া উচিত। লেনদেন শুরু হওয়ার পর লিমিট নিতে গেলে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এবং তা কার্যকর হতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগছে।
তিনি বলেন, মোবাইল অ্যাপ নিয়ে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি লেনদেন হচ্ছে। ফলে লেনদেন সংখ্যা বেড়ে গেছে। এটা নিয়ে কমিশন কাজ করছে। যাতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি অর্ডার দিতে পারে।
কী বলছেন বিশ্লেষকরা
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজারে টানা সূচক ও লেনদেন বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। এ ছাড়া সামনে রমজানের ঈদের কারণে এমন বাজারে নতুন বিনিয়োগ করলে মুনাফা পাবে, প্রত্যাশায় বিনিয়োগে যাচ্ছে।
লকডাউনের শুরুতে বিনিয়োগকারীরা এতটা আশ্বস্ত হতে পারেনি। কিন্তু যখন দেখছে পুঁজিবাজার স্বাভাবিকভাবে লেনদেন চলছে তখনই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দরই এখন বাড়ছে। তবে সবচেয়ে বেশি যেসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে সেগুলোকে ফান্ডামেন্টালি বিবেচনা করা যায় না। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে দর বাড়ছে দেখে শেয়ার না কেনা। বরং এ সময়ে ভালো মানের শেয়ার কেনা। তাহলে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগেও লাভবান হবে। আর দর কমে গেলেও খারাপ কোম্পানির মতো বড় অংকের লোকসান দিতে হবে না।
পুঁজিবাজারে আগ্রহের খাত
গত তিন কার্যদিবসে তালিকাভুক্ত মিচ্যুয়াল ফান্ড খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেলেও বুধবার সিংহভাগ ইউনিটের দর কমেছে। গত বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র দুটি ফান্ডের দর কমেছিল। একটির দর পাল্টায়নি। বাকি ৩৪টির দর বেড়েছিল। দুদিন সরকারি ছুটির পর রোববারও একইভাবে দর উত্থানে ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। মাঝে সোমবার কিছুটা কমে আসলেও আবার উত্থান হয় মঙ্গলবার। সেদিন ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে একটির দর কমেছিল, দুটির দর পাল্টায়নি। বাকি ৩৪টি ফান্ডের দর বেড়েছিল।
বুধবার তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে বেড়েছে তিনটির। কমেছে ২৫টির। আর দর পাল্টায়নি ৯টির।
এ বিষয়ে আবু আহমেদ বলেন, প্রতিদিন দর বাড়লেই কী ভালো। দর বাড়লে শেয়ার বা ইউনিট বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা উত্তলন করবে এটাই পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক বিষয়।
এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে বুধবার দর বেড়েছে ১৭টির। দর কমেছে ২৮টির। দর পাল্টায়নি দুটির। আর লেনদেন হয়নি ৩টির।
ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বুধবার পাল্টায়নি। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে সাতটির। দর কমেছে ১১টির। আর দর পাল্টায়নি ১৩টির।
লেনদেন কমলো ৬৭ শতাংশ
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২৩ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস দশমিক ০৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক দশমিক ৬২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৩ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ১৫৭টির। দর পাল্টায়নি ৬৭টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৭৭৬ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। ফলে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৫২৩ কোটি টাকা বা ৬৭ শতাংশ।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭১১ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির। কমেছে ৯৬টির। দর পাল্টায়নি ৪৪টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৩৩ কোটি টাকা।