বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লাভের গুড় পিঁপড়ে খাচ্ছে

  •    
  • ২১ এপ্রিল, ২০২১ ০৮:১৪

চার শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করেছে সরকার। উদ্দেশ্য ভোক্তারা যাতে সহনীয় দামে ভোজ্য তেল কিনতে পারে। কিন্তু বাজারে তেলের দাম এক টাকাও কমেনি; বরং বেড়েছে।

জনগণ যাতে সহনীয় দামে রমজানে ভোজ্য তেল খেতে পারেন, সে জন্য কর সুবিধা দিয়েছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১১ এপ্রিল এক আদেশ জারি করে আমদানি পর্যায়ে ভোজ্য তেলের (সয়াবিন ও পামওয়েল) ওপর থেকে ৪ শতাংশ ‘অগ্রিম কর’ প্রত্যাহার করেছে।

কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। বরং করোনা মহামারির মধ্যে দুর্ভোগে পড়া সাধারণ জনগণ বেশি দামেই তেল খাচ্ছেন।

রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করায় এ খাত থেকে প্রায় একশ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হবে। রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে এ ছাড় দিয়েছে সরকার। কিন্তু লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে ফেলছে।

রাজস্ব বোর্ড বলেছে, অগ্রিম কর প্রত্যাহার করায় এখন আমদানি পর্যায়ে শুধু ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিয়ে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি করা যাবে। অন্য কোনো শুল্ক-কর দিতে হবে না।

অগ্রিম কর প্রত্যাহার করায় তাদের কোনো লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে: ভোজ্যতেলের ‘মূল্য নির্ধারণের’ সঙ্গে অগ্রিম করের সম্পর্ক নেই। এটা আগে কেটে নেয়া হতো। এখন বছর শেষে আয়কর রিটার্নে সমন্বয় করা হবে। ফলে তাদের খরচ কমবে না।

তবে এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, অগ্রিম কর প্রত্যাহার করায় ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে। ফলে আগের চেয়ে কম দামে ভোজ্যতেল খেতে পারবেন ভোক্তারা।

দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর ৯০ শতাংশ তেল আমদানি করতে হয়। সয়াবিনের চাহিদা ১১ লাখ টন, পাম অয়েল ৩ লাখ টন এবং সরিষার তেলের চাহিদা ১ লাখ টন।

কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত (কাঁচামাল) ভোজ্যতেল আমদানি করার পর কারখানায় পরিশোধন করে তা বাজারজাত করে। বোতলজাত ও খোলা দুই ভাবে বাজারজাত করা হয়। তবে বেশির ভাগই বোতলজাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অস্থির বাজার

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে দেশীয় মিল মালিকেরা দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষায় দুই দফায় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তেলের দাম বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি ভোজ্যতেলের বাজার।

সর্বশেষ রমজান মাস উপলক্ষে গত ১৫ মার্চ ভোজ্যতেলের খুচরা মূল্য বাড়ানো হয়। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লিটার প্রতি ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পাঁচ লিটার বোতলের দাম ৬৬০ টাকা।

কিন্ত সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের তালতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে ব্র্যান্ডভেদে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ১৪২ টাকায়। পাঁচ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৬৬৫ টাকায়।

রোজা শুরুর আগে এপ্রিলের প্রথম দিকে প্রতি লিটার বোতালজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হতো ১৩০-১৩২ টাকায়। পাঁচ লিটার ৬৩০ টাকায়। দুই সপ্তাহে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা, বা সাত শতাংশ।

এ বছরের জানুয়ারিতে পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন বিক্রি হয়েছিল ৫৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৬০ টাকায়। আর এক লিটার ১২৫ টাকায়।

আগারগাঁওয়ের মুদি দোকানদার আমজাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, লকডাউনে সরবরাহ কম। রোজায় চাহিদা একটু বেশি। তাই দাম বেড়েছে। মিল মালিকেরা দাবি করেছেন, বাজারে পর্যাপ্ত তেল আছে। সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। খুচরা বিক্রেতারা ফায়দা লুটছেন।

যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের সাবেক সদস্য আলী আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, সরবকারের রাজস্ব ক্ষতি হলেও দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে শুল্ক-করে ছাড় দেয়া হয়। দুর্বল তদারকির কারণে অনেক ক্ষেত্রে এর লক্ষ্য পূরণ হয় না। মাঝখান থেকে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা এর সুফল ভোগ করে।

ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, অগ্রিম কর প্রত্যাহার করায় কোনো লাভ হয়নি। কারণ, উৎপাদন খরচের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারের কাছে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা অগ্রিম কর বাবদ পাওনা থাকলেও তা ফেরত দিচ্ছে না এনবিআর। এতে করে তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তা মানতেই হবে। আমরা শুরু থেকে নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি করছি। কাজেই, বেঁধে দেয়া দামে তেল বিক্রি হচ্ছে না, এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’

এদিকে, তেলের বাজার অস্থিরতার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করেন মৌলভীবাজার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা। পাইকারি বাজারে দাম বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির জন্য আমরা দায়ী হতে পারি না।’

এ ক্ষেত্রে বাজার তদারকির দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সরকারি নীতি নির্ধারকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুটি কয়েক কোম্পানি দেশের ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এগুলো হলো সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি কিছু পরিমাণে সয়াবিন তেল আমদানি করলেও বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে না সংস্থাটি।

বাণিজ্য সচিব ড. জাফরউদ্দীন বলেন, নির্ধারিত দরেই ভোজ্যতেল বিক্রি করতে হবে। বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক টিম কাজ করছে।

তিন স্তর কর কাঠামো চান ব্যবসায়ীরা

বর্তমানে আমদানি, উৎপাদন এবং সরবরাহ: তিন স্তরে কর আরোপ রয়েছে ভোজ্যতেলে। এর মধ্যে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদনে ১৫ শতাংশ এবং সরবরাহে ৪ শতাংশসহ মোট ৩৪ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপ রয়েছে।

মিল মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, উচ্চ হারে কর থাকায় বেশি দামে ভোজ্যতেল কিনে খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এ ছাড়া বহু স্তরে কর আদায়ের কারণে এটির প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এই জটিলতা নিরসনে ভোজ্যতেলে এক স্তর কর কাঠামো প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছে তারা।

কিন্তু এনবিআর মনে করে, এক স্তরে কর আরোপ করা হলে তা হবে বিদ্যমান ভ্যাট আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, আইনে একাধিক স্তরে ভ্যাট আদায় এবং রেয়াত বা ফেরত দেয়ার নিয়ম আছে।

এনবিআরের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মিল মালিকেরা তেল উৎপাদন করে বাজারজাত করার সময় যে মূল্য নির্ধারণ করে, তাতে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকে। আবার ডিলাররা প্রযোজ্য হারে ভ্যাট পরিশোধ করেই খুচরা পর্যায়ে তেল সরবরাহ করে থাকে। কাজেই উচ্চ কর হারের কারণে বেশি দামে তেল খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের- এ অভিযোগ ঠিক নয়।

এ বিভাগের আরো খবর