টানা ছয় দিনের মতো সূচকের উত্থানে শেষ হলো পুঁজিবাজারের লেনদেন। বেড়েছে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর।
মঙ্গলবার গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হাজার কোটি টাকা লেনদেন দেখলেন বিনিয়োগকারীরা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চলমান লকডাউনে হাজার কোটি টাকা লেনদেন নতুন আস্থার পরিচয় দিল পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা এ সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে শেয়ার বিক্রির চেয়ে শেয়ার ক্রয় বা বাজার পর্যবেক্ষণে মনোযোগী ছিলেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে হাজার কোটি টাকার লেনদেনে পৌঁছাল পুঁজিবাজার।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকার। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকার।
উত্থানে সূচক ও লেনদেন
লেনদেন গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। একই সঙ্গে সূচকও পৌঁছেছে ৫ হাজার ৪০০ পয়েন্টে।
এর আগে গত ২৩ মার্চ সূচক ছিল এ পর্যায়ে। তারপর থেকে মূলত কমতে থাকে সূচকের উত্থান। সে সূচক ৪ এপ্রিল নেমে আসে ৫ হাজার পয়েন্টে।
মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে ছিল সূচকের উত্থান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে সূচক বাড়ার হার।
দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭১ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২১ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৭ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩৬ দশমিক ১২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯৩টির, কমেছে ৯৮টির। দর পাল্টায়নি ৬৩টির।
মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬৯৭ কোটি টাকা। ফলে এক দিনের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৬০২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭১৩ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ৭৭টির। দর পাল্টায়নি ৩১টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৭১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকের ভাষ্য
ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লেনদেনে যেহেতু বেড়েছে সেহেতু এটা ভালো সংকেত। এখন যাদের মুনাফা আছে তারা চাইলে শেয়ার বিক্রি করতে পারে।’
এমন বাজারে বিনিয়োগকারীদের লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করতে পরমার্শ এই বিশ্লেষকের।
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেখানে করোনার এই মহামারিতে নাস্তানাবুদ, সেখানে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ছে। রেমিট্যান্স বাড়ছে, রিজার্ভ বাড়ছে। ফলে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।
‘পুঁজিবাজারে যখন পতন হয় তখন বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে পড়ে যান। সূচক পতন বা লেনদেন কমে আসা এটি পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সে সময়টিতে শেয়ার বিক্রি না করলে বাজার স্বাভাবিকভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াবে, যেটি এ সময়টিতে দেখা যাচ্ছে।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাণহীন পুঁজিবাজারে এখন যেভাবে সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে সেটি কত দিন অব্যাহত থাকবে সেটিই দেখার বিষয়।’
হাজার কোটি টাকা লেনদেন দেখিয়ে আবার নতুন বিনিয়োগ করলে সে বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যাবে কি না, তিনি সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে সবকিছুই স্থবির হয়ে আছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা কিছু মুনাফা পেলে সেটিই হবে সবচেয়ে ভালো বিষয়।’