করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো ব্যাংকারের মৃত্যু হলে তার পরিবারকে ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে দেশের সব তফসিলী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারানো সব ব্যাংকারের পরিবারই এ ক্ষতিপূরণ পাবে।
গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও সীমিত পরিসরে খোলা ছিল ব্যাংক। গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরুর পরও বন্ধ হয়নি ব্যাংক।
গত বছর করোনা সংক্রমণের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছিল, এই পরিস্থিতিতে অফিস করলে ব্যাংকাররা প্রতি দিন তিন হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাতা পাবে। তবে এই অর্থ বেশির ভাগ ব্যাংকই দেয়নি বলে অভিযোগ আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী/স্বামী/সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/মা ক্ষতিপূরণের অর্থ পাবেন।’
এ নির্দেশনা গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
অর্থাৎ গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত যেসব ব্যাংকার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের পরিবার এ সার্কুলারের আওতায় ক্ষতিপূরণ পাবে।
কাদের জন্য কত ক্ষতিপূরণ
প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, সিনিয়র অফিসার, প্রবেশনারি অফিসার, ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার বা সমমান হতে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তা মারা গেলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা পাবেন।
ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার বা সমমানের পদমর্যাদার কর্মকর্তারা পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। স্টাফ ও সাব-স্টাফের (যেকোনো প্রক্রিয়ায় নিয়োগ/নিয়োজিত) ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাবেন ২৫ লাখ টাকা।
কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যাংকে তার অন্য কোনো দায়-দেনা ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে সমন্বয় করা যাবে না। এ ক্ষতিপূরণ বর্তমানে প্রচলিত অন্য যেকোনো প্রজ্ঞাপন/আদেশ/নীতিমালায় বর্ণিত কর্মকালীন মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা/অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অত বছরের ১৫ এপ্রিল জারি করা বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-১৮ এর ৩(গ) এবং ৪ ক্রমিকে বর্ণিত নির্দেশনার কার্যকারিতা রহিত করা হয়েছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো বলে সার্কুলারে বলা হয়েছে।
ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৪২টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক ও নয়টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি।
করোনাভাইরাসের কারণে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু আছে। এ কারণে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ব্যাংকে গিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। তাদের ঝুঁকি বিবেচনায় এবং দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ এ নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি-বেসরকারি সবাইকেই এ নির্দেশনা মানতে হবে।
মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরতদের আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। গত ১৫ দিনে পাঁচ শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী সংক্রমিত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ ব্যাংকার ও একটি ব্যাংকের গাড়িচালক। এছাড়া উপসর্গ দেখা দিয়েছে সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর শরীরে।
গত বছর করোনা সংক্রমণের পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও এমন একটি প্রণোদনা ঘোষিত হয়। যখন চিকিৎসকরা হাসপাতালে রোগী দেখা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন, সে সময় সরকার ঘোষণা দেয়, সরকারি চাকুরেদের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবে আর কেউ মারা গেলে তার পরিবার পাবে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
পরে অবশ্য আক্রান্ত হলেই টাকা দেয়ার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।