একদিকে করোনার প্রভাব, অন্যদিকে রোজার মাস। লেবুর চাহিদা এখন তুঙ্গে। বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কম, এমন অজুহাতে খুচরা বাজারে লেবু বিক্রি হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দামে। কিন্তু উৎপাদনকারীসহ পাইকাররা পাচ্ছেন না আসল দাম।
মূলত ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরেই লেবুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক চাষির তুলনায় বেশি মুনাফা পাচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। রাজধানীর লেবুর বাজারে বড় অংশ জোগান দিয়ে থাকেন মানিকগঞ্জের চাষিরা। তারা বলছেন এ বছর লেবুর উৎপাদন কম হওয়ার কারণে অনেকটাই লোকসানের মুখোমুখি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় ১৯৭ দশমিক ৩৪ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাটুরিয়া, সদর, সিংগাইর এবং ঘিওরে লেবু বেশি চাষ হয়েছে। মানিকগঞ্জে গোল লেবু, এলাচি, কলম্বো ও কাগজি লেবু আবাদ হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এলাচি লেবুর হালি ২০ টাকা, কলম্বোর হালি ৩০ টাকা, গোল লেবুর হালি ৪০-৪৫ টাকা এবং কাগজি লেবুর হালি ৫০ টাকা।
পাইকার আতাউর রহমান জানান, সাটুরিয়ার লেবু দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু। এ কারণে দেশের বিভিন্ন শহরে এই লেবুর চাহিদা বেশি। ব্যবসায়ীরা সাত হাজার লেবুর একটি খাঁচি পাইকারিভাবে কেনেন ৪০-৪২ হাজার টাকায়। শ্রমিক ও গাড়ির ভাড়া মিলিয়ে ৪৫ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে যায়। সাধারণত হালিপ্রতি দুই টাকা লাভ ধরে ২৪-২৬ টাকা দরে তারা বিক্রি করেন আড়ৎদারদের কাছে। এরপর খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দামে লেবু বিক্রি করতে থাকেন।
পাইকার ইসমাইল হোসেন জানান, গতবারের বন্যায় লেবুবাগানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছ মরে গেছে, লেবুও কম ধরেছে। এখন লেবুর মৌসুমে গাছে লেবু কম ও অপরিপক্ব। চাহিদার কারণে ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ব লেবু তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন। করোনা ও রোজার কারণে এখন লেবুর চাহিদা আছে। লেবুর বেশি দামে লাভবান হচ্ছেন আড়ৎদার ও খুচরা বিক্রেতারা। কিন্তু লোকসান গুনছেন উৎপাদনকারী ও পাইকাররা।
ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন মনু বলেন, ‘কামলা নিয়া ক্ষ্যাত থেকে লেবু ছিঁড়া আইনা প্যাকেট করি। তারপরে গাড়িতে কইরা ঢাকায় বিক্রি। রাজধানী ছাড়াও গাজীপুর, টঙ্গী, চন্দ্রা, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে লেবুর চাহিদা বেশি। তবে শ্রমিক ও যাতায়াত খরচ দিয়ে লেবুর দামে পোষায় কম।’
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, ‘স্বাদে ও গন্ধে মানিকগঞ্জের লেবুর সুনাম রয়েছে। তবে এবারের বন্যায় লেবুচাষিদের লোকসান হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর লেবুর ফলন অনেক কম হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে লেবুর চাহিদা আছে। তার মধ্যে এখন তো রোজার মাস, এই মাসে লেবুর চাহিদা আরও বেশি।’