একের পর এক ফ্লাইট বাতিলের পর অবশেষে সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে উড়াল দিল রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম বিশেষ ফ্লাইট। সন্ধ্যা ছয়টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি রওনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিমান।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার গণমাধ্যমকে জানান, ‘বিমানের ফ্লাইট নম্বর বিজি ৪০৩৫ সন্ধ্যা ৬টায় ২৬৫ জন যাত্রী নিয়ে জেদ্দায় উড়াল দিয়েছে।’
এদিকে সকালে সৌদি আরবের আরেক শহর রিয়াদে অবতরণের অনুমতি না পাওয়া ফ্লাইটটিকেও সৌদিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ফ্লাইটটি রাত ৩টায় রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট চালুর সরকারের উদ্যোগ শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে।
শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সৌদি আরবের রিয়াদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ ফ্লাইটটি যাত্রীদের নিয়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ার কারণে বিমান কর্তৃপক্ষ বাতিল করে সৌদি আরবের দাম্মামের একটি ও দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইট।
বিভিন্ন এয়ারলাইনসের দিনের নির্ধারিত ১৪টি বিশেষ ফ্লাইটের মধ্যে সাতটিই নানা কারণে বাতিল হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের উপ মহাপরিচালক তাহেরা খন্দকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোর সাড়ে ছয়টায় রিয়াদগামী ফ্লাইটটির সৌদি আরবে ল্যান্ডিং অনুমতি না পাওয়ায় এটি ঢাকা ছাড়তে পারেনি। সৌদি আরবের নিয়মে প্রতিটি বিশেষ ফ্লাইটের জন্য আলাদা ল্যান্ডিং অনুমতি প্রয়োজন হয়।’
ভোর পর্যন্ত এই ফ্লাইটে চেক ইন করা ২০১ জন যাত্রী প্রত্যেককে হোটেলে রাখা হয়।
এদিকে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল আহসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা দিনে ১২ টি এয়ারলাইন্সের পাঁচটি দেশে ১৪টি বিশেষ ফ্লাইটের স্লট নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নানা কারণে সাতটি ফ্লাইটই বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বিমানের পাঁচটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাজেট এয়ারলাইনসের ফ্লাই দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইট রয়েছে।’
এদিকে সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে ১০৩ জন যাত্রী নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট।
ইউএস বাংলার জনসংযোগ ও বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল পৌনে ১০টায় ওমানের মাস্কাটের উদ্দেশ্যে একটি ফ্লাইট যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এতে যাত্রী হয়েছিল মাত্র ২৩ জন। এ কারণে আমরা ফ্লাইটটি বাতিল করেছি। আগামীকাল বিকেলের ফ্লাইটে তারা মাস্কাট যাবেন।’
ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরাতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে শনিবার থেকে শতাধিক বিশেষ ফ্লাইট অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই পাঁচ দেশ হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানসহ মোট ১২টি দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের যাত্রী পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছে। এগুলো হলো- ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ইতিহাদ, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া আবুধাবি ও ফ্লাই দুবাই।
এরই মধ্যে দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে এই পাঁচ দেশের আট গন্তব্যে বিমান ও চার দেশের চার গন্তব্যে ফ্লাইট ঘোষণা করেছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু থাকায় তা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কাজে আসেনি।
এর মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন। প্রাথমিকভাবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে।
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তবে চিকিৎসা, পণ্যবাহী ও বিশেষ ফ্লাইটকে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত ২০ হাজার প্রবাসী কর্মীর কর্মস্থলে পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বেশি দামে টিকিট কিনেও তারা কাজে যোগ দিতে পারছেন না।