বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোজায় দাম দ্বিগুণ, চাষির ঠকা শত কোটি টাকা

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ১৭:৫৯

তরমুজ চাষে প্রসিদ্ধ বরগুনায় রোজার আগেই লকডাউনে পরিবহন সুবিধা পাওয়া যাবে না-এমন ভয় দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে তরমুজ ক্ষেত কিনেছেন পাইকাররা। এর পর পর রোজায় দোম বেড়ে যে দ্বিগুণ হয়েছে, তার কানাকড়িও কৃষক পাননি। বরং তারা এখন আফসোস করছেন। এক হিসাবে দেখা যায়, এই জেলার চাষিরা ঠকেছেন ১৩৭ কোটি টাকার মতো।

রোজা শুরুর আগে সুপারশপ ডেইলি শপে তরমুজের দাম ছিল ৩৩ টাকা কেজি। শুক্রবার স্পেশাল ডিসকাউন্টে দাম ছিল ৩০ টাকা। তবে রোজার পর প্রথম শুক্রবার ডিসকাউন্টে কেজি প্রতি দাম ছিল ৪২ টাকা। পরে তা বেড়ে হয় হয় ৪৫ টাকা।

অর্থাৎ রোজায় এই সুপার শপে কেজি প্রতি দাম বাড়িয়েছে দ্বিগুণ।

মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারে এখন তরমুজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। রোজার আগে কেনা গেছে ২৫ টাকা কেজিদরেও। অর্থাৎ এই বাজারে রোজা তরমুজের দাম বাড়িয়েছে দ্বিগুণ।

সিংহভাগ পানি থাকে বলে গ্রীষ্মের রোজায় এই ফলটির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। আর বাড়তি দামেও ক্রেতারা কিনছেন ফলটি।

তবে এই দাম বৃদ্ধির সুফল কৃষক পায়নি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।

ফলটি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ বরগুনায় যতজন চাষির সঙ্গে নিউজবাংলা কথা বলেছে, তাদের সিংহভাহই রোজার আগেই ক্ষেত বিক্রি করেছেন পাইকারদের কাছে।

সে সময় আবার লকডাউন আসবে, পরিবহন পাওয়া যাবে না, দাম পড়ে যাবে- এমন কথা বলে অন্য বছরের চেয়ে কম দামে ক্ষেত কিনেছে পাইকাররা।

বহু কৃষক বাজারে দর দেখে আফসোস করছেন। বলছেন, তারা যে দামে বিক্রি করেছেন, এখন বেচলে দ্বিগুণেরও বেশি দাম পেতেন।

রোজায় বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে প্রতি বছর। বেগুন, শশা, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা, লেবু আর এই সময়ের ফল বলে তরমুজ, বেলের চাহিদা এখন তুঙ্গে। কিন্তু এতে চাষির লাভ কতটা হয়েছে, তার খোঁজ করতে বরগুনায় তরমুজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে নিউজবাংলা। আর এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে চাষিদের হতাশার বিষয়টিই জানা গেল।

শহরে তরমুজ কেজিদরে বিক্রি হলেও কৃষক বিক্রি করে ফসলের মাঠ হিসেবে চোখের আন্দাজে। সেখানেও বিক্রির ক্ষেত্রে চাষি স্বাধীন নন। স্থানীয় কিছু দালালের সঙ্গে পাইকারদের আঁতাত থাকে, এই দালালদের বাইরে অন্য কারও কাছে তরমুজ বিক্রি করার সুযোগ নেই।

পাইকাররা একটি ক্ষেতে গিয়ে তরমুজের অবস্থা দেখে দাম বলেন। চাষিদের দামদরের সুযোগ থাকলেও পাইকার ও তার সঙ্গে থাকা দালালের ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর ফলন অনেক বেশি বলে চাষির খুচরা বিক্রি করার সুযোগ নেই। কারণ, অল্প করে বেচতে গেলে ফসল পচে যাবে।

রোজার আগেই অর্ধেক দামে বিক্রি করেছেন চাষি

সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চালিতাতলী এলাকার চাষি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘এই বছর লকডাউনের জইন্যে গাড়ি পাওয়ন যাইবে না এই কথা কইয়া সিন্ডিকেট চক্র মোগো থাইক্যা কম টাহায় তরমুজাগুলা কিইন্যা নিছে। বাজারে এহন যে দামে তরমুজ বেচাকেনা অয়, কৃষক অর্ধেকেরও কম টাহায় তরমুজ বেইচ্যা দিছে।’

রিপন মিয়া, ইব্রাহীম মিয়া, আবদুর রশিদ, কামাল মুন্সি, বাবুল মুন্সিসহ বেশ কয়েকজন চাষিও জানান, তারা সপ্তাহখানেক আগে পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে দিয়েছেন। তখন তাদেরকে বোঝানো হয়েছে, লকডাউনে পরিবহন পাওয়া যাবে না, ক্রেতা নেই, এসব কারণে দাম কম।

বাবুল মুন্সি বলেন, ‘মোরা খেত দিয়া যেই তরমুজটা ১০০ টাহায় চেছি, হেই তরমুজ হাডে এহন ৪০০ টাহায় বেচাকেনা অয়।’

আবদুল হক নামের একজন পাইকার জানান, এ বছর বরগুনার বালিয়াতলী থেকে ১২ লাখ টাকার তরমুজ ক্রয় করেছেন। এর একাংশ যশোরের রুপসী বাজারের আড়তে বাকিগুলো বরগুনা বাজারে বিক্রি করেছেন।

তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে ক্ষেত থেকে এনে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে তরমুজের দামে ব্যবধান হয় গড়ে ৫০ টাকার মতো। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।

আমতলী পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের চাষি মাহবুব মাতবর বলেন, ‘আমরা যেই দামে তরমুজ বেচছি, এহন বাজারে তার থাইক্যা দাম অনেক বেশি।

‘পাইহাররা লকডাউনের কথা কইয়া মোগো কাছ থাইক্যা কম দামে তরমুজ কিনছে। মুই ১২ লাখ টাহার যে তরমুজ বেচছি, এহন বাজারে হেইয়ার দাম ৩০ লাখ টাহার মতো।’

আরেক চাষি রহমান মিয়া বলেন, ‘সাড়ে ১১ লাখ টাহায় বেচছি। এহন যে দাম, ২৫ লাখ টাহায় বেচতে পারতাম।’

কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী গ্রামের ওহাব মৃধা, বাহাউদ্দিন হাওলাদার ও রাজ্জাক মৃধা যৌথভাবে ৩৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ক্ষেত থেকে ৩১ লাখ টাকায় ফসল বিক্রি করেছেন। কিন্ত বাজারে এর দাম এখন ৭০ লাখ টাকারও বেশি হতো- এই বিষয়টি বলে আফসোস করেন তারাও।

আমতলী বাঁধঘাট চৌরাস্তায় তরমুজ ব্যবসায়ী রিপন চন্দ্র মৌয়ালি ও বাবুল মৃধা জানান, তরমুজের প্রচুর চাহিদা। চাহিদামতো সরবরাহ দিতে পারছেন না।

তিনিও আক্ষেপ করে বলেন, ‘কৃষকরা দাম সুবিধাডা নিতে পারে নাই। কারণ, পাইহাররা শুরুর দিকে কম দামে তরমুজগুলা কিইন্যা লইয়া গ্যাছে। এহন যেই পরিমাণ চাহিদা, হ্যাতে কৃষকরা চাইর গুণ দামে ব্যাচতে পারত।’

টাকার অংকে কৃষক কত ঠকল

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে বরগুনায় চার হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।

এর মধ্যে বরগুনা সদরে দুই হাজার ২০ হেক্টর ও আমতলীতে ১ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

এক হেক্টর জমি আড়াই একরের কিছু কম। এই হিসাবে চলতি বছর চাষ হয়েছে নয় হাজার আটশ একরের কিছু বেশি জমিতে।

কৃষকরা জানিয়েছেন প্রতি একর জমির তরমুজ চলতি মৌসুমে বিক্রি হয়েছে এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকায়। এখন এই পরিমাণ তরমুজের দাম আড়াই লাখ টাকার বেশি।

প্রতি একর জমিতে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা ঠকায় প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে কৃষক কম পেয়েছে ১৩৭ কোটি টাকার মতো।

বরগুনাতেও খুচরা পর্যায়ে দাম বেশি

শুক্রবার বরগুনার স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়ত আর দোকানগুলোতে ফলে ঠাসা।

আড়তের সামনেই বরগুনার তরমুজের মুল বাজার। এখানের খুচরা বিক্রেতা মিলন চন্দ্র রায় জানান, রোজার শুরুতেই চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, বেড়েছে দামও।

লকডাউনের শুরুর তিনদিন তরমুজের চাহিদাও কম ছিল, দামও ছিল অর্ধেক। এখন যে তরমুজটি ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেটি সে সময়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতো।

আনিসুর রহমান ও আবদুল মন্নানও খুচরা বিক্রেতা। এরা আড়ত থেকে তরমুজ কিনে বাজারে বিক্রি করেন। জানান, সর্বোচ্চ আটশ টাকায় তিনি তরমুজ বিক্রি করেছন। মাঝারি আকারের একেকটি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। ছোট আকারেরগুলো পাওয়া যায় ১০০ টাকায়।

লকডাউনের আগে যখন পাইকাররা ক্ষেত কিনছিলেন, তখন দাম অর্ধেকেরও কম ছিল বলে জানালেন খুচরা বিক্রেতারা।

এ বিভাগের আরো খবর