বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকাররা ব্যাংকে যাবেন কী করে

  •    
  • ১৫ এপ্রিল, ২০২১ ২২:৫৯

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তেমন কোনো ব্যবস্থা করেনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জ। কিন্তু বাস করেন ঢাকায়।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিন ব্যাংক খোলা থাকায় সকালে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমেই ধাক্কা খান। দেখেন, রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। এরপর রিকশায় গুলিস্তান, সেখান থেকে আবার রিকশায় পোস্তোগোলা। এরপর আরও দুই দফা রিকশা যাওয়ার পর অফিসে পৌঁছান এক ঘণ্টা দেরিতে, বেলা ১১ টায়।

রিকশা পরিবর্তন আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেক সব মিলিয়ে রাস্তায় চলে গেছে তিন ঘণ্টা। খরচ হয়েছে ৪৪০ টাকা।

আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে প্রতিদিন এভাবে অফিসে আসা-যাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। অফিস যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা করেনি। এভাবে প্রতিদিন যাতায়াত করলে বেতনের একটা বড় অংশ এখানেই খরচ হয়ে যাবে। আর বিড়ম্বনা তো আছেই।’

সকাল সাড়ে সাতটা। মিরপুরের ছাপড়া মসজিদ থেকে পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোডে রূপালি ব্যাংকের শাখায় যাবেন বাদল মিয়া।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মেলেনি ব্যাংকের পরিবহন, তার নিজস্ব কোনো বাহনও নেই।

দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কোনো ব্যবস্থা না করতে পেরে কর্মস্থলের উদ্দেশে রিকশায় ওঠেন। তারপরও পদে পদে বাধা। প্রথমে আগারগাঁও, এরপর বিজয় সরণী, তারপর ফার্মগেটে বাধার সম্মুখীন হন।

এরপর কিছুক্ষণ হেঁটে আবার রিকশা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকায় তার কর্মস্থলে পৌঁছান।

ব্যাংকের কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা স্ব স্ব ব্যাংক করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংকের চিত্র এমনই।

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তেমন কোনো ব্যবস্থা করেনি।

রূপালী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাদল মিয়া বলেন, কোনো যানবহনের ব্যবস্থা না থাকায় অফিসে পৌঁছাতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এভাবে আর কয়েকদিন চলতে থাকলে বেতনের বড় অংশ যাতায়াতেই খরচ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, প্রধান কার্যালয়ে কর্মরতদের যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকলেও শাখা পর্যায়ে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে বাদল মিয়ার মতোই কর্মস্থল যেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশির ভাগ সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা।

অগ্রণী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকের শাখা খোলা সেটা সমস্যা না। তারা সেবা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু লকডাউনে জরুরি সেবাদানকারী ব্যাংকারদের সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধা হিসাবে মর্যাদা ও প্রণোদনা দেয়াসহ নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা জরুরি।’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে নানা নাটকীয়তার পর সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত এলেও সমস্যার শেষ নেই।

কারণ, কোন ব্যাংকের কোন কোন শাখা খোলা থাকবে সে তথ্য গ্রাহকদের জানানো হয়নি। ফলে গ্রাহকরা জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকের সেবা নিতে পারছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই কিলোমিটার এলাকায় কোনো একটি ব্যাংকের কেবল একটি শাখা খোলা থাকবে।

প্রতি ব্যাংকের জেলা শাখা প্রতিদিন খোলা থাকলেও উপজেলা শাখা খোলা হবে এক দিন পর পর।

তবে বন্ধ শাখার গ্রাহকদের গ্রাহক সেবাপ্রাপ্তি বিষয়ে অবহিত করতে ওই শাখার দৃশ্যমান স্থানে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রদর্শন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগেও জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার নির্দেশ দিলে ব্যাংকগুলোর কোন কোন শাখা খোলা থাকবে তা গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বা বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের অবহিত করা হতো। ইদানিং সেটা করা হচ্ছে না। ফলে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

শাখা খোলা নিয়ে বিভ্রান্তিতে গ্রাহক

দিলকুশা জনতা ব্যাংকে নগদ টাকা তুলতে আসা রফিক জানান, ২টি শাখা বন্ধ পেয়ে দিলকুশা এসেছেন। কিন্তু কোনো শাখার সামনে পাশ্ববর্তী কোন শাখা খোলা সে বিষয়েও কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি।

বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিধিনিষেধের এ সময়ে শাখা খোলা বা বন্ধের বিষয়ে অধিকাংশ ব্যাংকই তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি।

রাষ্ট্র মালিকানার ব্যাংক ছাড়াও বেসরকারি ব্যাংকও রয়েছে এ তালিকায়।

তবে সিটি ব্যাংকে চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য আসা মতিন নামে এক ব্যক্তি জানান, সিটি ব্যাংক কোন কোন শাখা এ সময়ে খোলা থাকবে সে বিষয়ে তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

গ্রাহক উপস্থিতি কম :

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, পল্টনসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকের উপস্থিতি কম। ব্যাংকাররা অলস সময় পার করছেন।

বিশেষ প্র‌য়োজন ছাড়া কেউ ব্যাংকে আস‌ছেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংক বন্ধ থাকার খব‌রে গত তিন‌দিন গ্রাহক বেশি বেশি করে টাকা উত্তোলন করেছেন। এ ছাড়া বিধিনিষেধের কার‌ণে গণপ‌রিবহন বন্ধ থাকায় অনে‌কে বের হ‌তে পার‌ছেন না। এসব কার‌ণে গ্রাহ‌কের চাপ কম।

ম‌তি‌ঝিলে সোনালী, রূপালী, জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসে গি‌য়ে দেখা যায়, ক্যাশ কাউন্টারে প্র‌তি‌দিনের সেই চি‌রচেনা রূপ নেই। অনেক কাউন্টা‌র গ্রাহকশূন্য। গ্রাহককে কোনো লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না।

একদিকে ঢিলেঢালা ব্যাংকিং অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং সিস্টেমে কারিগরি জটিলতা—সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার বেশ বিরক্তই ছিলেন বেশির ভাগ কর্মকর্তা।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সার্ভার জটিলতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও আগামী রোববার পুনরায় এ সংক্রান্ত সেবা দেয়া যাবে।

ব্যাংক কার্যক্রম চলছে যেভাবে

ব্যাংকের মোট জনবলের মধ্যে পালা করে কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।

অন্তঃসত্ত্বা ও বয়স্কদের বাসা থেকে কাজের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

যেসব সেবা চালু

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধিনিষেধ চলাকালে গ্রাহকদের হিসাবে সব ধরনের জমা ও উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট/পে-অর্ডার ইস্যু ও জমা নেয়া, ট্রেজারি চালান নেয়া, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতা/অনুদান বিতরণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃশাখা অর্থ স্থানান্তর, এনআরবি বন্ডে এবং বিভিন্ন প্রকার জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেটের মেয়াদপুর্তিতে নগদায়ন ও কুপনের অর্থ পরিশোধ, ইউটিলিটি বিল (গ্যাস/পানি/বিদ্যুৎ/টেলিফোন) নেয়াসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেম/ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা চালু থাকবে।

কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু নগদ টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে কাজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি সমস্যার কারণে অনলাইন সেবা, আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারিং, ইএফটিএন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

অনেকে সোমবার চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য জমা দিলেও এখনও কাজ হয়নি। আর ক্লিয়ারিং জটিলতা থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের বেতন দিতে পারবে না। এমনকি বিভিন্ন চালান জমা দিলেও ক্লিয়ারিং পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

এমন ভোগান্তি সব শাখাতেই রয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, সংকট সারা দেশেই। আমরা ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকিং করছি। গ্রাহকরা যাতে দৈনন্দিন ব্যাংকিং করতে পারেন সে জন্য ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কল সেন্টার, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড এবং এটিএম সেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংকের লেনদেন হবে। লেনদেন-পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।

এ বিভাগের আরো খবর