চলছে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন। এর মাঝে নানা নাটকীয়তার মধ্যে শেষ পর্যন্ত চালু রাখা হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। চলমান পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা যেন সহজে নিজ কর্মস্থলে যেতে পারেন, এ জন্য বিএসইসির পক্ষ থেকে বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
এ সময়ে স্বাভাবিক লেনদেন হতে দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। সূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থায় মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৫০ শতাংশের উপস্থিতিতে চলছে ডিএসইর কার্যক্রম। সরকারের সর্বাত্মক লকডাউনে জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যাতায়াতে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন ডিএসইর উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান।
৫ এপ্রিল থেকে প্রথমে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ জারি হলে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করতে ব্রোকারেজ হাউজের কর্মীরা যাতায়াতে কোনো সমস্যায় পড়েননি। সে সময়ে আসলে পুলিশ কাউকে বাধা দেয়নি।
তবে এবার কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কারণে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ ছিল। কারণ, পুলিশের পক্ষ থেকে এই বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকার যে তালিকা দেয়া হয়েছে, তাতে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কথা লেখা ছিল না।
এই অবস্থায় বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হোসেন খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি পুঁজিবাজার চালু থাকবে। বিএসইসি ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এ সময়ে বিএসইসি ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দাপ্তরিক যাতায়াত আরোপিত বিধিনিষেধের আওতামুক্ত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
দর বেড়েছে দামি ও বহুজাতিক কোম্পানির
বৃহস্পতিবার লেনদেনে দর বেড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দামি ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের। এ সময়ে রেকিডবেনকিউজার শেয়ারদর বেড়েছে ৬১ টাকা ১০ পয়সা। লেনদেন হচ্ছে ৪ হাজার ৬৪৮ টাকায়। ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের শেয়ারদর বেড়েছে ১৭ টাকা ২০ পয়সা। লেনদেন হচ্ছে ২ হাজার ৮১৫ টাকায়।
ম্যারিকো লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ২ হাজার ৫৫ টাকায়। বার্জার বাংলাদেশের প্রতিটি শেয়ারের দর বেড়েছে ২৫ টাকা ৮০ পয়সা। রেনাটা লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ২৭ টাকা ৪০ পয়সা। ওয়ালটনের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা।
দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এ সময়ে লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। লেনদেনে সাতটি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ছয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া দুটি হচ্ছে এইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড এবং ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। উভয়ের দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।
এ ছাড়া এ তালিকায় আছে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ানের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
লকডাউনের মধ্যে চলমান লেনদেনে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম।
তিনি বলেন, লকডাউনে মানুষের মধ্যে এমনিতেই আতঙ্ক কাজ করে। এর মধ্যে সরকারের বিভিন্ন বিধিনিষেধ তো আছেই।
তবে পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নাঈম বলেন, বন্ধ থাকলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ পুরোটাই আটকে থাকতো। খোলা থাকায় শেয়ারে মুনাফা থাকলে লাভ ওঠানো যাবে আর লোকসান হলে তা সমন্বয় করার সুযোগ থাকবে।
সূচক ও লেনদেন
লেনদেন শুরুর পৌনে এক ঘণ্টায় ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ১৫ দশমিক ১১ পয়েন্ট। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৩ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০২ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৮ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬ পয়েন্টে।
এ সময়ে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৭ টির, কমেছে ৮৯টির। দর পাল্টায়নি ৫৫টির। লেনদেন হয়েছে মোট ১৩২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৮ দশমিক ৫১ পয়েন্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৪২ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ১৮টির। দর পাল্টায়নি ৬টির। লেনদেন হয়েছে মোট ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
লকডাউন চলা অবস্থায় ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে চলবে পুঁজিবাজারের লেনদেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের কার্যক্রম বেলা ১০টা থেকে ১ টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের লেনদেন আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।