রমজানকে ঘিরে দেশে প্রতিবছর ব্যাপক খেজুর আমদানি হয়। সেই ধারাবাহিকতা আছে এবারও। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যে, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ খেজুর দেশে এসেছে।
কিন্তু দেশজুড়ে চলা লকডাউনের কারণে খেজুর বিক্রি একেবারেই কম বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার খেজুরের দামও কমেছে।
চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী বিছমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক লোকমান হোসেন জানান, গত বছরের চেয়ে প্রকারভেদে কেজি প্রতি দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে।
’আমদানি বেড়েছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী ক্রেতা বাড়েনি। এ জন্য খেজুরের দাম গত রমজানেরও তুলনায় উল্টো কমে গেছে।’
মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে বাংলাদেশে খেজুর আসে। বেশিরভাগই আসে সমুদ্রপথে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। কার্গো বিমানেও কিছু খেজুর আমদানি হয়।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কেমন চলছে তার একটি ধারণা পাওয়া যায় চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার চিত্র দিয়ে।
এই বন্দর দিযে দেশের মোট আমদানির ৮২ শতাংশ আসে, আর রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশই যায় এ পথ দিয়ে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) খেজুর আমদানি হয়েছে ৭৬ হাজার ৮৩৯ টন। গত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এসেছিল ৩৯ হাজার ৭৮৯ টন খেজুর।
বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক নাছির উদ্দিন বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় এই অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে খেজুর আমদানি বেড়েছে।
চট্টগ্রামের পাইকারি রেয়াজউদ্দিন বাজারের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে খেজুরের রাজা আজোয়া ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা, মেরজুন খেজুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মরিয়ম খেজুর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাবরুর খেজুর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মামরুন খেজুর ৪৫০ টাকা, কালমি ৫০০ টাকা ও লুলু বরই ২২০ থেকে ২৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর যেই মরিয়ম ৭০০ টাকা ছিল, এবার সেটা ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আজোয়া খেজুর ভালো মানেরটা গত বছর ১২০০ টাকা ছিল, এবার আজোয়ার সাধারণটা ৭০০ টাকা ও সবচেয়ে ভালোটা এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাবরুর খেজুর গত বছর ছিল এক হাজার টাকা, এ বছর দাম ৮০০ টাকা।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর অন্তত ৪০টি দেশে খেজুর উৎপাদন হয়। এসব দেশে ২০১৯ সালে ৯২ লাখ টন খেজুর উৎপাদিত হয়েছে। মিসর উৎপাদনের দিক থেকে সেরা। এর পরে রয়েছে সৌদি আরব, ইরান, আলজেরিয়া এবং ইরাক।
বিশ্বব্যাপী খেজুরের উৎপাদন বেড়ে যাওয়া ও দাম অনেক কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে এখন বিপুল পরিমাণে খেজুর আমদানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। তবে দেশের বাজারে এবার দাম কমে যাওয়ায় তারা হতাশ।
চট্টগ্রামে আমদানি হওয়া খেজুর প্রথমে যায় খেজুরপট্টি খ্যাত আছাদগঞ্জে। সেখান থেকে যায় সারা দেশে।
আছাদগঞ্জ খেজুরপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, আড়তের মালিক-কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। আড়তে ১০ কেজি প্যাকেটের দাবাস খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকায়, মাগরুম সাড়ে ৩ হাজার টাকা, নাগাল এক হাজার ৩০০ টাকা, ছায়ান ৯৫০ টাকা, পাঁচ কেজির প্যাকেটে তিউনেশিয়া ১ হাজার ৫০ টাকা, ম্যাকজেল ৪ হাজার ২০০ টাকা, মরিয়ম ৩ হাজার ১০০ টাকা ও আজোয়া ৪ হাজার ৮০০ টাকা।
আছাদগঞ্জে খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছিদ্দিক অ্যান্ড সন্সের মালিক ওমর ফারুক ছিদ্দিকী বলেন, এবার আমরা তিউনেশিয়া থেকে খেজুর আমদানি করেছি। গত বার আলজেরিয়া থেকে আমদানি করেছিলাম। তবে গতবার লকডাউন থাকলেও দাম পেয়েছি। এবার ক্ষতির মুখে পড়ব। দাম একদম কম।
গেল ১২ এপ্রিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর তেল, চিনি, ডালসহ ছয় পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। সেখানে দেয়া তথ্যে, রমজান মাসে দেশে ৫০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে।