করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের দেয়া বিধিনিষেধে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে নেই ঐতিহ্যবাহী ইফতারের পসরা।
গত পবিত্র রমজানে কিছুটা ছাড় থাকলেও এবার একেবারেই বন্ধ রাখা হয়েছে ইফতারি আয়োজনের বাজার। তাই যে চকবাজার রোজায় সকাল থেকেই জমজমাট থাকে, সেখানে এখন খাঁ খাঁ।
সারা দেশে বুধবার থেকে সাত দিন চলাচল ছাড়াও বেশ কিছু বিষয়ে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে রোজা।
কিন্তু পুরান ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজারে নেই বাহারি রকমের ইফতারির পসরা, কেনাবেচার ব্যস্ততা।
গত বছর ২৫ এপ্রিল প্রথম রমজান শুরু হয়েছিল। তখনও করোনাভাইরাস মহামারিতে সরকার সাধারণ ছুটি দিয়েছিল। তখন বিকেল থেকে ইফতারি পণ্য নিয়ে বসতে পেরেছিল ব্যবসায়ীরা।
এবার চকবাজারের চিত্র পুরোই ভিন্ন। নেই কোনো দোকান, তাই হাঁক ডাক নেই ইফতারি বিক্রেতাদেরও।
চকবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু দোকানে বিক্রি হচ্ছে ইফতারি, তবে নেই আগের মতো বাহারি আয়োজন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
মোগল আমলের স্মৃতির অনেকটাই টের পাওয়া যায় পুরান ঢাকার ইফতারি বাজারে। আস্ত খাসির রোস্ট, আস্ত মুরগির ফ্রাই, জালিকাবাব, সুতিকাবাব, টিকা কাবাব, শাহি কাবাব, কবুতরের রোস্ট, কোয়েলের রোস্ট, ডিম চপ, ডিম কোপ্তা, সাসলিক, ভেজিটেবল রোল, চিকেন রোল, দইবড়া, হালিম, লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, মাঠা, কিমা পরোটা, ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, সমুচা, বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, শাহি জিলাপিসহ প্রায় ৩০ প্রকারের জিলাপি, শতাধিক প্রকারের শরবত, কয়েক প্রকার মাঠাসহ অসংখ্য পদের খাবার পাওয়া যায় চকবাজারে।
চকবাজারের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব বাদল হোসেন জানালেন, তার বুদ্ধির পর এবারই প্রথম দেখছেন চকবাজারে ইফতারির বাজারে এমন নিস্তব্ধতা।
খাজেদেওয়ান লেনের বাসিন্দা ইমাম হোসেন বলেন, প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় চকবাজারে ইফতার বিক্রি করেন তিনি। আগে এই ব্যবসা করতেন তার বাবা হাসান মিয়া। গত বছর একটু সময়ের জন্য খোলা থাকলেও এবারই প্রথম তারা কিছু বিক্রি করতে পারছেন না ইফতারিতে।
তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা দেশের বাইরে থাকেন, শুধু ইফতারি বিক্রি করার জন্য তারা দেশে আসেন। আমরা তাদের নিয়ে আসি খাবার তৈরির জন্য।’
এটা শুধুই ইফতারি হিসেবে না দেখে তিনি এটাকে ঐতিহ্যের মেলা হিসেবেই দেখে আসছেন বলে জানান।
ইমাম হোসেন বলেন, ‘অনেকে আছেন যাদের সারা বছর কোনো কাজ করেন না। এই ইফতারি বাজার থেকেই তারা বছরের ছয় থেকে সাত মাসের চলার মতো রোজগার করেন। তাদের কি দশা হবে তা বলা মুশকিল।’
এমন বিপাকে পড়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের কোনো খোঁজ রাখছেন কি না, এমন প্রশ্নে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম জেলে। এমপি হাজি সেলিম কোথায় আছেন কিছু জানেন না তারা। কেউ তাদের কোনো খোঁজ নেননি।
চকবাজার থানার পরিদর্শক আল মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থানায় এসে গতকালও ব্যবসায়ীরা সীমিত সময়ের জন্য ইফতারি বেচা-বিক্রির অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে একেবারেই না করে দেয়া হয়েছে। সেখানে আমরা কী করে অনুমতি দিতে পারি?’
তিনি জানান, ইফতারি বাজার বসতে দিলেই মানুষের সমাগম হবে। যা এখন পুরোটাই নিষিদ্ধ। ১২ এপ্রিলও অভিযান চালিয়ে চকবাজারের স্বনামধন্য এক বেকারিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জরিমানা করা হয়েছে।
তবে অলিগলির মধ্যে যাদের বাসাবাড়িসংলগ্ন দোকানপাট রয়েছে তাদের প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ইফতারি বিক্রির আয়োজন করতে দেখা গেছে।
ঘুরে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার আশপাশের এলাকা শহীদনগর, বকশীবাজার, আগা সাদেক লেন, ইমামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, বংশাল, নাজিরাবাজার, বাবুপুরা, নবাবগঞ্জ, নিমতলা বা নাজিমুদ্দিন রোড, হোসনী দালান রোড এলাকায় কোনো ইফতারির বাজার বসেনি।