তরমুজে থাপড় দিয়ে ক্রেতাকে ভালো বলে বুঝিয়ে দেন বিক্রেতা। অনেক ক্রেতা খুশি মনে তরমুজ নিয়ে বাসায় যান।
বাসায় ফিরে কেউ দেখেন তরমুজটি সত্যিই মিষ্টি আর সুস্বাদু। তবে আবার কেউ কেউ পান পানসে তরমুজ। বুঝতে পারেন বিক্রেতার কথায় বিশ্বাস করে ঠকেছেন।
তরমুজ পাকা হলে বাড়ি দিলে বা টোকা দিলে ড্যাপ ড্যাপ শব্দ হবে, আর কাঁচা হলে টনটন করবে—এমন ধারণা পোষণ করেন বাজারের বেশির ভাগ বিক্রেতা। বাইরে থেকে তরমুজ দেখে ভালো-মন্দ চেনার জন্য এই পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর বলেও মনে করেন তারা।
তরমুজ বাছাইয়ে বিক্রেতার এই প্রক্রিয়া বছরের পর বছর ধরে দেখে আসছেন ক্রেতারা। আরও অনেক সাধারণ ও বহুল প্রচলিত ধারণা হলো তরমুজে থাপড় দিয়ে বোঝা যায় এটি পাকা কি না। বিক্রেতা এই কৌশলে ক্রেতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন তরমুজ কতখানি সুস্বাদু ও রসে ভরপুর। ক্রেতারা অনেকটা অন্ধ বিশ্বাসে তরমুজ কেনেন।
বাজারে সব ধরনের তরমুজ দেখতে একই রকম। তাই বোঝা মুশকিল কোনটা রসাল, মিষ্টি আর কোনটা পানসে।
কী বলছেন বিক্রেতারা
বিক্রেতারা বলছেন, আসলে তরমুজ কেমন হবে, তা নির্ভর করে ভাগ্যের ওপর। তারা সবসময় চান ক্রেতাদের হাতে ভালো তরমুজটি তুলে দিতে। এ জন্য প্রচলিত পদ্ধতির ওপর নির্ভর করেন। হাতে থাপড় দিয়ে দেখেন তরমুজ কেমন শব্দ করে।
রাজধানীর মৌচাক এলাকার তরমুজ বিক্রেতা আবদুল গণি বলেন, ‘হাতে থাপড়া দিলে বোঝা যায় তরমুজ ফাঁপা আছে কি না। ফাঁপা থাকলে এক ধরনের শব্দ হয় আর যদি ফাঁপা না থাকে তবে আরেক ধরনের শব্দ হয়।
তরমুজের একটা অংশে হলুদাভ রং এলে সেটিকে বেশি মিষ্টি বা পরিপক্ব বলা হয়‘ক্রেতা যখন আমাদের জিজ্ঞাসা করেন, তখন আমরা কয়েকটাতে বাড়ি দিয়ে দেখে যেটা একটা ভরাট মনে হয়, সেটাই নিতে বলি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। অনেক ক্রেতাই ইদানীং রং দেখে কিনতে চাই। আমরা তখন আর কিছু বলি না। দোকানে সব ভালোগুলাই আনি। তারপরেও কিছু মিষ্টি বা পানি কম থাকে।’
তরমুজ বিক্রেতা রাশেদ বলেন, ‘পাকা হলে সেই তরমুজে বাড়ি দিলে ড্যাপ ড্যাপ শব্দ হবে। আর কাঁচা হলে টনটন। তরমুজ চেনার জন্য এটা আমাদের অনেক পুরাতন একটা কৌশল।’
কৃষিবিদরা যা বলেন
তরমুজ বাইরে থেকে কখনোই বোঝা যাবে না সেটি পুরোপুরি মিষ্টি হবে কি না। তবে তরমুজের ভালো-মন্দ নির্ভর করে পরিপক্বতার ওপর। যদি কোনো ক্রেতা বুঝতে পারেন, তরমুজটি পরিপক্ব হয়েছে, তবেই তিনি সেটা কিনে লাভ করতে পারবেন।
কীভাবে পরিপক্বতা বোঝা যায় তা জানিয়েছেন সাতক্ষীরা কৃষি অধিদপ্তরের কৃষিবিদ জসীম উদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ তরমুজ ম্যাচিউর হয়ে গেলে সেটা স্বাদে ভালো হবে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ম্যাচিউর হওয়ার আগেই তরমুজ বাজারে চলে আসে।
‘ম্যাচিউর বোঝার উপায় তরমুজের আকার থেকে জানা যাবে। যে তরমুজ দেখতে ডিম্বাকৃতির বা গোলাকার সেটি ম্যাচিউর।’
অনেক ক্ষেত্রে তরমুজের একটা অংশে হলুদাভ রং এলে সেটিকে বেশি মিষ্টি বা পরিপক্ব বলা হয়। এটাকে ব্যাখ্যা করে জসীম উদ্দীন বলেন, এটাকেই ম্যাচিউরিটি বলা হয়। মাটিতে বেশি দিন থাকার ফলে একটা দাগ হয়ে যাবে। এই ধারণা সঠিক।
গোপালগঞ্জের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল কাদের সরদার বলেন, তুলনামূলক একটু হালকা তরমুজ ভালো ও মিষ্টি বেশি হবে।
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অপরিপক্ব তরমুজ বেশি ভারী হয়ে থাকে। যে তরমুজ পরিপক্ব হয় সেটা তুলনামূলক হালকা। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো ক্রেতা দুটি তরমুজ হাতে নিয়ে পরখ করেন, তবে অপেক্ষাকৃত হালকা তরমুজটি তিনি কিনবেন।
ময়মনসিংহের কৃষিবিদ মো. ওবায়েদুল হক রেজা বলেন, হাতে নিয়ে যদি ভেতরটা ফাঁপা মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে তরমুজ এখনও কাঁচা রয়েছে। যদি তরমুজের বোঁটা বেশি শুকনো থাকে তবে সেটি পাকা।
সাধারণত দোকানিরা ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তরমুজে একটা বাড়ি দিয়ে থাকেন। এই বাড়ি দিয়ে মূলত ফাঁপা বা পুষ্ট পরখ করা হয়ে থাকে। তাই ক্রেতা যদি তরমুজের গায়ে টোকা দিয়ে বুঝতে পারেন অতিরিক্ত ভারী আওয়াজ, তবে সেটি পাকা তরমুজ।