কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ যত সময় লেনদেন চলেছে, আগামী এক সপ্তাহ তার চেয়ে আধা ঘণ্টা বেশি লেনদেন চলবে।
ব্যাংক খোলা রাখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুরোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে লেনদেন। তবে ব্যাংকের আনুষঙ্গিক কাজ চলবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। যদিও আগের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছিল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
যদিও এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছিল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত লেনদেন চলবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে সেটি তাদের প্রজ্ঞাপন ছিল না। তাদের প্রস্তাবের একটি চিঠির ওপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে এ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘দ্রুতই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি আসছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়।
আগের দিন সরকার ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল জরুরি সেবা ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধেরও নির্দেশনা দেয়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বন্দর এলাকার ব্যাংক ছাড়া বাকি শাখাগুলো বন্ধ থাকবে।
তবে এই সিদ্ধান্ত আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদেরকে চমকে দেয়। কারণ ব্যাংকিংকে জরুরি সেবা হিসেবেই ধরা হয়। আর এর আগে কখনও এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক বন্ধ থাকেনি। এতে মানুষের নগদ অর্থে টান পড়বে বলেই আশঙ্কা তৈরি হয়।
গত বছর করোনা সংক্রমণের পর ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির মধ্যেও ব্যাংক বন্ধ থাকেনি। এবারও ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধের মধ্যে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চালু থাকে লেনদেন।
গত শুক্রবার যখন সরকার ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেয়ার ঘোষণা দেয়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ব্যাংক খোলা রাখতে হবে।
সেদিন তিনি বলেন ‘মানুষ ব্যাংকিং লেনদেন না করতে পারলে অন্যান্য সংকটে পড়বে। চিকিৎসার জন্যও ব্যাংকের টাকা দরকার। সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে, কোন কৌশলে ব্যাংকিং সেবা দেয়া যায় সেটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তবে সোমবার সরকার বিধি নিষেধ নিয়ে যে প্রজ্ঞাপন দেয়, তাতে জানানো হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারে জানায়, আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে কেবল বন্দর এলাকার ব্যাংকগুলো চালু থাকবে।
ব্যাংক বন্ধের এই সিদ্ধান্তে চমকে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহের জন্য ব্যাংক এভাবে আগে কখনও বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু ব্যাংক সেবা একবারে বন্ধ করে দেয়ায় বড় সংখ্যাক মানুষ সমস্যায় পড়বে।
‘অন্যান্য বিষয় বাদ দিলাম, চিকিৎসা করতেও মানুষের টাকার প্রয়োজন হবে।’
ব্যাংক বন্ধ থাকায় এটিএম বুথে ভিড় বাড়বে বলে মনে করেন সাবেক এই গভর্নর। বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু নগদ টাকা তোলা ও জমা এ দুইটি সেবা চালু রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে পারত। কারণ, এটিএম বুথে টাকা তোলাতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ, সেখানে বাটন স্পর্শে টাকা তুলতে হয়।’
‘সেক্ষেত্রে সকাল ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত শুধু নগদ লেনদেন চালু রাখা সম্ভব ছিল। আর ব্যাংক একটা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারত’ -বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আবার এটিএম বুথ কেবল শহরাঞ্চলে আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সুবিধা নেই। সেখানকার মানুষ নগদ টাকার প্রয়োজন কীভাবে মেটাবে, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।
ব্যাংক বন্ধ থাকায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে চাপ পড়বে। কিন্তু সেখানেও ভোগান্তি তৈরি হবে।
সালেহউদ্দিন বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রেও তো টাকা লাগবে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় সেই টাকা এজেন্টরা কোথা থেকে তুলবে?’
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্ত ব্যবসা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সীমিত পরিসরে চালু রাখা উচিত ছিল। সাধারণ মানুষের টাকা দরকার হলে কীভাবে পাবে? সবার তো এটিএম কার্ড নেই। আর এটিএম বুথে যদি পর্যাপ্ত টাকা না থাকে তখন তো মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। আবার সব ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং সেবাও নেই।’