দেশব্যাপী করোনার ব্যাপক বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ কার্যকর হচ্ছে বুধবার থেকে। পাশাপাশি শুরু হচ্ছে রোজা। এর আগের দিন মঙ্গলবার চাপ পড়েছে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে। অন্তত সপ্তাহ থেকে দশ দিনের নিত্যপণ্য জোগাতে ক্রেতারা বাজারে ছুটছেন। বিক্রির চাপ বেশি থাকলেও খুব বেশি হেরফের হয়নি পণ্যমূল্যে।
শুধু সাধারণ ক্রেতা নয়, লকডাউনে পণ্য সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন খুচরা বিক্রেতারাও পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি পণ্য কেনার চেষ্টা করছেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মঙ্গলবার ভোর থেকেই ঢল নামে সাধারণ ক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা বা পাইকারি ক্রেতাদের। এ বাজার থেকেই পণ্য কিনে রাজধানীর আশপাশের বাজারে বিক্রি করেন অনেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে খুচরা ক্রেতাও।
খুচরা ক্রেতাদেরই মুখে মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ছিল প্রায় অসম্ভব। ভিড়ের মধ্যে গাদাগাদি করেই দরদাম ও কেনাকাটা করছেন সবাই।
কারওয়ান বাজারে আসা ফকিন্নি বাজারের খুচরা বিক্রেতা আসগর বলেন, ‘কাল থেকে লকডাউন। গাড়ি চলবে না, মালপত্র ঠিক মতো পাওয়া যায় কিনা ঠিক নেই। এজন্য অন্য দিনের চেয়ে বাড়তি মাল কিনেছি। যাতে অন্তত এক সপ্তাহ বেচা যায়।’
বেগুনের দাম একই রয়েছে। তবে সামান্য বেড়েছে টমেটো ও শশার দাম, মরিচ আগের মতোই রয়েছে। এর মধ্যে লম্বা বেগুন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। খুচরায় ৫ টাকা বেড়েছে টমেটোর দামও। ভালো টমেটার কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায়। আর কাঁচা মরিচের কেজি ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। শসার কেজি ৩৮ থেকে ৪৫।
পাইাকারিতে লম্বা বেগুনের পাল্লা (৫ কেজি) ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায়, গোল বেগুনের পাল্লা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, মরিচের পাল্লা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, (কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা) চ্যাপ্টা টমেটার পাল্লা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, লম্বা টমেটার পাল্লা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি পাল্লা শসা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
সবজি বিক্রেতা কাউসার বলেন, ‘রোজায় সবজির ব্যবহার খুব কম হয়। তাছাড়া সবজি রেখে দিলে নষ্ট হয়ে যায়। কিছু জিনিস রেখে দিলে পরে বিক্রি করা যায়। সবজির বেলায় তা হয় না। তাছাড়া কাল থেকে লকডাউন। আজ বাজারে অনেক খুচরা ক্রেতা আসেন। যারা বেশি করে সবজি কিনছেন। কিন্তু কাল কার কাছে বিক্রি করব। রেখে দিলে নষ্ট হবে। তাই বিক্রেতারা সবজি ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। তবে লকডাউনে সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়তে পারে।’
এদিকে খুচরা বাজারে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে করলা বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। উচ্ছেরও একই দাম। এছাড়া ঢ্যাঁড়শ ৩৮ থেকে ৪০, শিম ৪০ থেকে ৪৫, বরবটি ৫৫ থেকে ৬০, চিচিঙ্গা ৩২ থেকে ৩৫, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫, পটোল ৪০ থেকে ৪৫, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা ও ধুন্দল ৪৫ থেকে ৫০, মুলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, আলু খুচরায় ২০ থেকে ২২ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রথম লক ডাউনের আগেই অনেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এতে দাম বেড়ে গিয়েছিল। তখন মাসের শুরুতে সবার কাছে টাকাও ছিল বেশি। অনেক ক্রেতারই বাজার করা হয়ে গেছে। তখন যারা কেনেন নি তারা এখন কিনছেন। তবে গত দুই তিন দিনেও অনেকে বাজার করেছেন।
আগে থেকেই চড়া চালের বাজারে নতুন করে দাম বাড়েনি। এর মধ্যে কেজিপ্রতি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ২৮ চাল ৫৫-৫৬ টাকা, মাঝারি মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, ভাল মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় এবং ভাল নাজির ৬৬-৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মুদিপণ্যের মধ্যে আগের সপ্তাহে বেড়েছিল রসুন ও আদার দাম। ছোলা খুচরা বাজারে ৫ টাকা বেড়েছে। প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। ডালের মধ্যে আমদানি করা মাঝারি আকারের মসুর ডাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ৫ টাকা কমে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা, মুগডাল ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি রসুনের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, দেশি আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা আদা ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, প্যাকেট আটার কেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, চিনি ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, কোম্পানি ও মান ভেদে লবণ ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মসলার মধ্যে জিরা ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, মান ভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে ছোট এলাচ ২৪০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আগের মতোই প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৫ থেকে ১৩০, খোলা পাম অয়েল ১১০ থেকে ১১৫, সয়াবিনের এক লিটারের বোতল ১৪০, পাঁচ লিটারের বোতল ৬৪০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বাজারে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে দাম কিছুটা কমলেও বাড়তি বিক্রির চাপে বেড়েছে মুরগি ও পেঁয়াজের দাম। মুরগরি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা এবং পেঁয়াজে বেড়েছে ৫ টাকার মতো। খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪২ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সাপ্তাহেও দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয়। দাম বেড়েছে পাইকারি বাজারেও। প্রতি পাল্লায় ১০ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
পাইকারি বিক্রেতা মো. রাসেল জানান, দুই-তিন দিন ধরেই পাইকারি ক্রেতার সঙ্গে খুচরা ক্রেতারাও পেঁয়াজ বেশি কিনছেন। তাই অনেক ক্রেতাই এক বা দুই পাল্লা করে পেঁয়াজ কিনেছেন। দাম কেজিতে ২ টাকার মতো বেড়েছে।
মুরগির বাজারে দেখা যায়, প্রতিটি দোকনের সামনেই ভিড়। মাঝে কিছুটা কমলেও আবার বেড়েছে মুরগির দাম। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং ২০ টাকা বেড়ে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। ডিম পাড়া লাল ও সাদা লেয়ার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকায় এবং দেশি মুরগির প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়।
মুরগি বিক্রেতা মো. হোসনে বলেন, গত কয়েক দিনে মুরগির চাহিদা বেড়েছে। সকাল থেকেই বিক্রি চাপ খুবই বেশি। রোজায় সবাই ভালো খেতে চায়। তাই অনেকেই এক হালি দুই হালি করে কিনছেন। একটি বা দুটি করে কিনছেন খুবই কম।
মাংসের মধ্যে গরু ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বকরি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসি ৮২০ থেকে ৮৫০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।