করোনা নিয়ন্ত্রণে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। যেখানে বন্ধ থাকবে ব্যাংকসহ পুঁজিবাজার। এ অবস্থায় আতঙ্ক নয় বরং স্বাভাবিক লেনদেন চলছে পুঁজিবাজারে। বন্ধের আগের দিন মঙ্গলবার শেয়ার বিক্রির চাপ কম থাকায় উত্থানে পুঁজিবাজারের সূচক।
লেনদেনে এক ঘণ্টায় ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৯ পয়েন্টের বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর।
পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন আতঙ্কে শেয়ার বিক্রির চাপে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। ভবিষ্যতে শেয়ারদর আরও কমে যাবে এমন চিন্তাও থাকে। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে লোকসান কমাতে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে জমা রাখেন পোর্টফোলিওতে। আবার যখন পুঁজিবাজার চালু হবে তখন নতুন করে বিনিয়োগ করবে।
এমন মানসিকতা থেকে বেড়ে যায় শেয়ার বিক্রির চাপ। কিন্তু সাত দিন বন্ধের আগের দিন সে প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের।
আগ্রহ বিমায়
মঙ্গলবার লেনদেনের এক ঘণ্টায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে বিমায়। ৫০টি কোম্পানির মধ্যে এ সময়ে দর বেড়েছে ৪১টির। কমেছে ৭টির। দর পাল্টায়নি ২টির।
এ সময়ে দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ৯টি ছিল বিমা খাতের। এর মধ্যে দিনের সর্বোচ্চ দর বেড়েছে ২টি বিমা কোম্পানির। ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
তবে ব্যাংক খাতের শেয়ারে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর পাল্টায়নি। এ সময়ে ব্যাংক খাতের ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির। আর কমেছে ৫টির। বাকি ১১টির দর পাল্টায়নি।
নন ব্যাংক আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১২টির। কমেছে ৩টির। দর পাল্টায়নি ৫টির। আর ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে ৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
বিশ্লেষকের বক্তব্য
পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ হচ্ছে সাত দিনের জন্য। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকার আগের দিন মঙ্গলবারের লেনদেন সম্পর্কে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। তবে প্রথমবার যখন লকডাউনের কারণে পুঁজিবাজার বন্ধ ছিল তার পরের লেনদেনে কিন্তু খুবই ভালো হয়েছিল।
তিনি বলেন, সে প্রত্যাশায় শেয়ার বিক্রি থেকে বিরত আছেন বিনিয়োগকারীরা। হঠাৎ করে বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে না দিলে বাজার হয়তো আরও ভালো থাকত। সে কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া হয়েছে সেগুলোর দর কমায় সূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম সোমবার রাতে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, সাত দিনের জন্য পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূলত, এই সাত দিনে যারা শেয়ার কিনত তারা এখন কিনবে। আর যাদের এ সময়ে বিক্রি করার প্রয়োজন ছিল তারা বিক্রি করবে। তবে শেয়ার বিক্রির চেয়ে শেয়ার কেনার প্রবণতা বেশি থাকবে।
লেনদেনের এ সময়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত লেনদেন ভালো। বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিক আচরণ করছেন। শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দেখা যাক, কী হয়।
সূচক ও লেনদেন
মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে সূচক কিছুটা নেতিবাচক হলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্থানে ফিরে আসে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চেয়ে কেনার মানসিকতার কারণে এ সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৯ দশমিক ০১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১৭ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৯ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৮০ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৯টির, কমেছে ৭৮টির; পাল্টায়নি ৬৮টির। এ সময়ে মোট লেনদেন হয়েছে ১৮৬ কোটি টাকার।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২২ দশমিক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩১ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ৪১টির। দর পাল্টায়নি ২৩টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি টাকা।