দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বাঁচানো ও আয় বৈষম্য কমাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ধনীদের করহার বাড়াতে অর্থমন্ত্রীর প্রতি পরামর্শ রেখেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
তারা আরও বলেছে, আয়-ধন-সম্পদের বণ্টন হতে হবে ন্যায্য। ধনীদের কাছ থেকে এই সম্পদ প্রবাহিত হতে হবে দরিদ্র, বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত মানুষের হাতে।
পুঁজিবাজার ও বন্ড বাজারে বড় বিনিয়োগের উপর সম্পদ কর আরোপের পরামর্শও এসেছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, দেশে খুব কম সংখ্যক মানুষই ৮০ শতাংশ শেয়ার-বন্ডের মালিক।
বাজেট প্রণয়নে নীতিগত বিষয়াদিতে অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শমূলক সহায়তা দিতে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এসব প্রস্তাবনা অনুমোদন করা হয়।
গতকাল রোববার অর্থমন্ত্রীর কাছে এসব পরামর্শমূলক প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
এতে অর্থমন্ত্রীকে ‘করপোরেট স্বার্থের’ বাজেট দেয়া থেকেও বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী, করোনার সংকট উত্তরণ ও বৈষম্যহীন আলোকিত মানুষ সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে বাস্তবতার নিরিখে কার্যকর বাজেট তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে আয়-সম্পদ-স্বাস্থ্য-শিক্ষা বৈষম্য হ্রাসের যত পথ-পদ্ধতি আছে তার সার্বিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের তাগিদও রাখে অর্থনীতি সমিতি।
সংগঠনের সভাপতি ও বিশিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপকজ ড. আবুল বারকাত কমিটির অনুমোদিত এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, করোনা প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতা বেড়েছে। এগুলো দূরীকরণে কৃষির বিকাশ, দেশজ শিল্পায়ন, অভ্যন্তরীণ বাজার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মানবসম্পদের বিকাশকে ত্বরান্বিত করে যেসব খাত সেসব খাতগুলোয় বাজেট বরাদ্দে অগ্রাধিকার দিতে হবে। করোনার অভিঘাত মোকাবেলায় উন্নয়ন-ভবিষ্যৎ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবনাও বাজেটে থাকতে হবে। আয় ও ব্যয়ের কাঠামোগত রূপান্তরও জরুরি।
বাজেটে তা বিবেচনায় রেখে সরকারের উচিত ‘শোভন সমাজ-শোভন অর্থনীতি বিনির্মাণ’ বিষয়ক পদক্ষেপ নেয়া। এক্ষেত্রে শোভন কর্মসংস্থান তৈরি হলেই সব কিছু শোভন হবে।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনে অতিরিক্ত টাকা ছাপালেও কোনো অসুবিধা হবে না, সেখানে সেখানে ‘ভারসাম্য’ রক্ষা করা যায় বলেও বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়।
রাজস্ব ভাবনা নিয়ে ড. বারকাত বলেন, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত‒ এর ওপর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ অর্থনীতি সমিতি সমর্থন করে না।
‘আমরা মনে করি চাপ প্রয়োগ দরকার ধনিক শ্রেণি-সম্পদশালীদের ওপর। ধনী ও বিত্ত-সম্পদশালী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান, যারা সঠিক কর প্রদান করেন না তারা যেন সঠিক পরিমাণ কর প্রদান করেন তা বিবেচনায় আনা এখন জরুরি।
‘একই সঙ্গে প্রয়োজনানুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর হার নির্ধারণ জরুরি। এছাড়া পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করে জোর দেয়া উচিত। এতে বৈষম্য কমে।’