বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরিবহন শ্রমিকেরা কীভাবে বাঁচবেন?

  •    
  • ১২ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:০৬

গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, বাসের চাকা বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হেলপার, সুপারভাইজার, ড্রাইভার, কাউন্টার মাস্টার ও মেকানিক। এছাড়া গাড়ি চলাচল না করায় কাজ হারিয়েছে গাড়ি ধুয়েমুছে পরিষ্কারের কাজ করা শিশু-কিশোররা।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর গত বছর টানা ৬৬ দিন বন্ধ ছিল গণপরিবহন। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবারও অনিশ্চয়তায় কয়েক লাখ পরিবহন শ্রমিক।

রাজধানীর ভেতরে যানবাহন চললেও গত ৫ এপ্রিল থেকেই আন্তঃজেলা যান চলাচল বন্ধ আছে। ফলে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর দিন দশেক আগে থেকেই কর্মহীন দূরপাল্লার বাসের শ্রমিকেরা। তাদের একটি অংশ কর্মস্থল ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে গেছেন। বাকিরা বাস টার্মিনালে অলস সময় পার করছেন– কখন ডাক পড়ে।

রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, বাসের চাকা বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়াদের মধ্যে আছেন হেলপার, সুপারভাইজার, ড্রাইভার, কাউন্টার মাস্টার ও মেকানিক। এ ছাড়া গাড়ি চলাচল না করায় কাজ হারিয়েছে টার্মিনালে গাড়ি ধুয়েমুছে পরিষ্কারের কাজ করা শিশু-কিশোরেরা।

পরিবহন শ্রমিকেরা জানান, দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি দেয়ার কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেই বন্ধ হয়ে যায় উপার্জন। গত বছর টানা দুই মাসের বেশি গাড়ি বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শ্রমিককে ধারদেনা করে চলতে হয়েছে। গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ার পর আয় থেকে তারা সেই ধার পরিশোধ করেছেন। এবার আবার গাড়ি বন্ধ হওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা।

শ্রমিকদের অভিযোগ, দুঃসময়ে অধিকাংশ মালিক বা শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকের পাশে থাকে না। দেয়া হয় না কোনো সাহায্য। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের তহবিল গঠনের নামে দিনের পর দিন যে চাঁদা উঠানো হয়, তা কোথায় যায়- সেই প্রশ্ন তাদের।

শ্রমিকদের এ প্রশ্নের উত্তর নেই পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের কাছে।

দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সোমবার ভরদুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনালে বসে লুডো খেলছিলেন সাজু ও নাজমুল নামে দুজন হেলপার। গাড়ি চললে এক দিনের আপ-ডাউনে নয় শ টাকা পেতেন। এখন দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ, তাই রোজগারও বন্ধ। তবে সার্বক্ষণিক গাড়ির সঙ্গে থাকার কারণে ‘রোজি’ হিসেবে দিনে ২০০ টাকা করে পাচ্ছেন একেক জন, যা দিয়ে কোনোরকম তিনবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে চলাচল করা লালন শাহ পরিবহনের হেলপার সাজু বলেন, ‘যতদিন গাড়ি বন্ধ থাকবে, ততদিন আমাদের কোনো আয় থাকবে না। বাড়িতেও কোনো টাকা দিতে পারি না। আমরা যারা গাড়ির সঙ্গে থাকি, তারা কিছু টাকা পাই, যা দিয়ে খাওয়ার খরচটা কোনোমতে হয়। আর যারা বাড়িতে চলে গেছে, তারা কোনো টাকাই পাচ্ছে না।’

গাড়ি বন্ধ থাকায় প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে যারা লোক উঠাচ্ছেন, তাদের সহায়তা করতে দেখা যায় সৌখিন পরিবহনের সুপারভাইজার রঞ্জু মিয়াকে। তিনি জানান, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল গাড়ি চলবে এই খবরে তিনি খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছেন। এসে জানলেন, আন্তঃজেলা গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। তাই রাতে আবার বাড়িতে ফিরে যাবেন।

বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা । ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে গাড়িতে কাজ করি। গত বছরের মতো সমস্যায় আর পড়ি নাই। দুই মাস গাড়ি বন্ধ ছিল। খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাইছি। এখন আবার বন্ধ। কতদিন চলে জানি না। সংসার কেমনে চালাব?’

একই অবস্থা এম আর পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘গাড়ির চাকা ঘুরলেই আমাদের টাকা আসে। ট্রিপ বন্ধ হলে টাকা বন্ধ। কিন্তু বাড়িওয়ালার ভাড়া তো বন্ধ থাকে না। ক্ষুধা লাগলে খাওয়া তো বন্ধ করা যায় না। গাড়ি বন্ধ থাকলে ভাই জীবন চলে না।’

এদিকে পরিবহন মালিকেরা বলছেন, মালিক না বাঁচলে শ্রমিক কীভাবে বাঁচবে? গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদেরই মরি মরি অবস্থা।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আবু রায়হান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গাড়িগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিনি। গাড়ির চাকা ঘুরলে টাকা আসে। আর সেই টাকা থেকে ঋণ পরিশোধ করি, শ্রমিকদের মজুরি দেই। এখন তো আমাদের অবস্থাই খারাপ। এরপরও আমাদের সঙ্গে শ্রমিকদের সুসম্পর্ক সবসময় থাকে। সেই জায়গা থেকে আমরা সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করে থাকি। ভবিষ্যতেও সেটা অব্যাহত থাকবে।’

এ বিভাগের আরো খবর