রোজায় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একইসঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রোববার বিকালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। র্যাব পুলিশ ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা ওয়েবিনারে অংশ নেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোজা এলেই সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে তারতম্যের কারণে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি হয়। অনেক ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য দেশে দেখা যায়, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কমে। আমাদের দেশে বাড়ে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী কী করতে পারেন, তা জানালে তাদের পরামর্শ ও তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দ্রব্যম্ল্যূ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক দক্ষ। ক্রেতারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধের সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। আবার, অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত বছর আয় কমে যাওয়া ও কর্মচ্যুতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ করে এবং সঞ্চয় ভেঙ্গে জীবন নির্বাহ করেছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়লে দরিদ্ররা নিদারুণ কষ্টে পড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
দ্রব্যমূল্য নাগালে রাখতে আমদানীনির্ভর ভোগ্যপণ্য বন্দর থেকে দ্রুত খালাস করা, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিরসন, দক্ষ ও পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং, নিয়মিত ন্যায্য মূল্য তালিকা হালনাগাদ ও তা কার্যকর করার কথা বলেন ডিসিসিআই সভাপতি। পাশাপাশি অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নগদ অর্থ প্রদানের প্রস্তাবও করেন তিনি।
এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে ৯ সদস্যের ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করেছে। তারা শিগগিরই কাজ শুরু করবেন। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রমজান মাসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। লকডাউনের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মাঠ পার্যায়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা বলেন, পাইকারী পর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের মজুদের কোনো ঘাটতি নেই। শুধু ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় সেটা স্থানীয় বাজারে বেড়েছে। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে মুনাফা কত হবে তা নির্ধারণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশে কোনো পণ্যের মজুদের স্বল্পতা নেই এবং রমজানে তাদের সবগুলো টিম সপ্তাহে সাত দিন কাজ করবে। মাংসের দাম নির্ধারণের একটি নির্দেশনা দেওয়ার জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, ঢাকা শহরে সুপারশপের ২০০টি কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনাতুল্লাহ জানান, গরম মসলার মজুদের কোনো স্বল্পতা নেই, তাই এ ধরনের পণ্যের কোনো দাম বৃদ্ধি পাওয়া উচিত নয়। তিনি নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার সীমিত পর্যায়ে খোলা রাখার আহ্বান জানান।
ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যমান নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশ যথাযথ পালন করা হবে।
ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসেন সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানো এবং ব্যবসায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করেন। মুনাফাকে সীমিত পর্যায়ের রাখার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি
র্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, বাজার, ব্যাংকসহ অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তার জন্য র্যাব কাজ করছে এবং বিপণিবিপতনগুলো খোলা রাখার সময় সীমানির্ধারিত থাকলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
ডিএমপির এডিসি মিজানুর রহমান বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযেগিতা প্রদান করা হবে এবং প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কার্যক্রম জোরদার করা হবে। দ্রব্যমূল্যের বিষয়ক সব তথ্য পুলিশকে দেয়ার আহবান জানান তিনি।