আসছে সাতদিনের ‘কঠোর’ ও ‘সর্বাত্মক’ লকডাউন। বের হওয়া যাবে না ঘর থেকে। এমন অবস্থায় নগদ টাকা তুলে নিতে রোববার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকে ছিল উপচেপড়া ভিড়। বুথগুলোতেও লাইন ধরে টাকা তোলেন গ্রাহকরা।করোনা মহামারির চলমান পরিস্থিতিতে সপ্তাহের প্রথম দিন প্রখর রোদ ও গরমে ব্যাংকে ভিড় করেছেন গ্রাহকরা। কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় জায়গা স্বল্পতার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয়নি।প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেওড়াপাড়া শাখায় দেখা গেছে, ব্যাংক খোলার আগের বাইরে দীর্ঘ লাইন। সবাই নগদ টাকা তোলার জন্য এসেছেন।ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, অন্য দিনের তুলনায় নগদ টাকা তোলার চাপ বেশি। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে গ্রাহকরা উদ্বিগ্ন। এ কারণে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রাখছেন।প্রিমিয়ার ব্যাংকের গ্রাহক মনির জানান, সামনে কঠোর লকডাউন দিবে সরকার। সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ব্যাংক যদি না খোলা থাকে, এজন্য টাকা তুলে রাখছেন।ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী জানান, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কাজ চলছে। দুই জনের বেশি গ্রাহক ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এজন্য বাইরে লম্বা লাইন পড়েছে।
পূবালী ব্যাংকে দেখা গেছে আরও ভয়াবহ অবস্থা৷ ব্যাংকের ভেতরে জায়গা স্বল্পতার কারণে রাস্তার ওপরেই মানুষের লাইন। রোদে, গরমে রাস্তায় লম্বা লাইন দিয়ে টাকা তুলছেন গ্রাহক। কেউবা ক্রেডিট কার্ডের বিল দিচ্ছেন৷ কেউবা দিচ্ছে বিদুৎ, গ্যাসের বিল। আবার কেউ কেউ নগদ টাকা তুলে রাখছেন।তবে ব্যাংকের ভেতরে সামাজিক দুরত্ব মানা হলেও গেটের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনেকে উদাসীন।কর্মকর্তারা জানান, সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত লেনদেন হওয়ার কারণে গ্রাহকদের চাপে তাদের হিমশিম খেতে হয়। অফিসে ঢোকার আগেই দেখা গেছে গ্রাইকের লম্বা লাইন। আর সামনে কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় অনেকের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ফলে সবাই বিভিন্ন বকেয়া শোধসহ লেনদেনের কাজ শেষ করতে চাইছেন।
সিটি ব্যাংক শাখায়ও একই অবস্থা দেখা গেছে।
আমিনুল নামের এক গ্রাহক জানান, শেওড়াপাড়া শাখায় ভিড় দেখে তিনি ১১ নম্বরে টাকা তোলার জন্য গিয়ে দেখেন, সেখানেও ব্যাপক ভিড় । তিনি আবার শেওড়াপাড়া শাখায় এসেছেন।
সিটি ব্যাংক কর্মকর্তা কায়েস জানান, গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করতেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে। ২টার মধ্যে ব্যাংকের অন্য সব কাজ শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তবে ব্যাংকে গ্রাহকের টাকা তোলার চাপ বাড়লেও নগদ টাকার কোনো সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর হাতে ২ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য উদ্বৃত্ত ছিল।
বর্তমানে আমানতের প্রবৃদ্ধির তুলনায় ঋণ বিতরণ কম হওয়ায় ব্যাংকগুলোর হাতে বাড়তি তারল্য জমা থাকছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়ে ১২ লাখ ৮৬ হাজার ২০১ কোটি টাকায় উঠেছে। এত বিপুল আমানত আগে কখনো দেখা যায়নি।
২০২০ সালের জুন শেষে আমানত ছিল ১১ লাখ ৮০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা। এতে দেখা যায়, করোনার মধ্যেই আমানত বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে , সার্বিক ঋণের পরিমাণ গত জানুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ২১৯ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনের শেষে ছিল ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ব্যাংকগুলো মোট ৯৫ হাজার ৭২৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে।
ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকায় স্বল্প সময়ের জন্য অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হচ্ছে কম। এ কারণে বর্তমানে কলমানি (আন্ত:ব্যাংক লেনদেন) গড় সুদহার ১ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে এসেছে।
এপ্রিলের শুরুতে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাফেরা সীমিত করে আনা হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে আরোপ করা হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ।
তবে এই সময়ে ব্যাংকের গ্রাহকরা যেনো প্রয়োজনীয় লেনদেন করতে পারেন এজন্য প্রত্যেক কর্মদিবসে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে।