রমজানে ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানিকৃত অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামওয়েল তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু এতে ভোক্তা পর্যায়ে দামে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই অগ্রিম কর প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। বর্তমানে অগ্রিম কর দিতে হচ্ছে ৫ শতাংশ হারে।
ব্যবসার স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে কোনো পণ্যের ওপর কর প্রত্যাহার হলে তার সুফল বাজারপর্যায়ে ভোক্তার মূল্যের ওপর পড়ার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে বাজারে তেলের দাম কমবে না।
বর্তমানে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি পর্যায়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে। উৎপাদন পর্যায়েও মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।
আগে এক স্তরে শুধু আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিলেই চলত। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ৩০ জুন, ২০১৯ পর্যন্ত এ সুযোগ বহাল ছিল। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্তে সেটি তুলে নেয়া হয়।
কর ছাড় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল উৎপাদক ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে জানান, অগ্রিম কর প্রত্যাহার হলেও এতে উৎপাদক ও আমদানি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের করের ভার কমবে না। ফলে তাতে মূল্য সংশোধনেরও সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামতেলে উৎপাদক ও আমদানি পর্যায়ে সরকারকে অগ্রিম কর দিতে হয়। যা বছর শেষে সার্বিক করের হিসাব সমন্বয় করা হয়। এখন এই আদেশের ফলে সেই আগাম করটি এখন আগাম দিতে হবে না। কিন্তু বছর শেষে ঠিকই সমন্বয় করতে হবে।’
সিটি গ্রুপের এই কর্মকর্তার জানান, যদি এটা বাজারে অগ্রিম কর না হয়ে অন্যান্য কর প্রত্যাহার হতো তাহলে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমতো। এখন সেই সুযোগ আছে কি না তা নির্ভর করবে সংশোধিত সিদ্ধান্ত অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড নামে এনবিআরের সংরক্ষিত যে সফটওয়্যার আছে সেখানে কী নির্দেশনা রয়েছে তার ওপর। সেটা পরিষ্কার হতে আরও সময় লাগবে বলে।
অন্যদিকে মৌলভীবাজার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মাওলা নিউজবাংলাকে বলেন, কর প্রত্যাহার হলে তো দাম কিছু কিছু কমবেই। কিন্তু দেখতে হবে সেটা কোন কর। ব্যবসায় লেনদেনের স্থিতি বুঝে প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা অগ্রিম কর সরকারকে আগাম দিয়ে আসছে। বছর শেষে সেটা কম হলে আরও দিতে হয়। আর বেশি হলে সরকার তার অন্যান্য করের সঙ্গে সমন্বয় করে অথবা নিজ অ্যাকাউন্ডে ফেরত দেয়। তাই এ কর প্রত্যাহারে বাজার ভোক্তা পর্যায়ে দাম কতটা কমবে সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তাহলে এই কর প্রত্যাহারে লাভ কী হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লাভ আছে অন্য জায়গায়। এতে ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থের সংকট কিছুটা হলেও দূর করবে। আগাম কর হিসেবে সরকারকে যে টাকা আগাম দিতে হতো, এখন সেটা আগাম পরিশোধ না করে এই টাকা ব্যবসার অন্যখাতে খরচ করতে পারবেন। সুবিধা বলতে এইটুকুই।’
এর আগে রোজার মধ্যে ভোজ্য তেলের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একমত জানিয়ে মন্ত্রী পরিশোধের বৈঠকে আমদানিতে কর ছাড় চেয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আর বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বিবেচনা করবে।
কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের ওই বৈঠকে কর কমানোর প্রস্তাব করে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা এখন অনেক বেশি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়বাজারে ভোজ্যতেল আমদানিতে যে কর রয়েছে তা একটু কমানো হোক। তাহলে বাজারে দামটাও কম থাকবে।
এর আগে রোজার মধ্যে ভোজ্য তেলের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সহংতি জানিয়ে মন্ত্রী পরিশোধের বৈঠকে আমদানিতে কর ছাড় চেয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আর বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বিবেচনা করবে।
কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের ওই বৈঠকে কর কমানোর প্রস্তাব করে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা এখন অনেক বেশি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়বাজারে ভোজ্যতেল আমদানিতে যে কর রয়েছে তা একটু কমানো হোক। তাহলে বাজারে দামটাও কম থাকবে।