লকডাউনের কারণে আয় কমে যাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভিড় করছে সরকারি সংস্থা টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলে। সেখানে সব পণ্যের দাম বাজার দরের চেয়ে কম।
এমনিতেই টিসিবির পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হয়। লকডাউনে দুই দিনে লাইন আরও বড় হয়েছে। ক্রেতার লাইন বিকেল শেষে সন্ধ্যার পরও শেষ হয় না।
চাহিদা বাড়ায় পণ্য সরবরাহও বাড়িয়ে দিয়েছে টিসিবি।
টিসিবি তেল, মসুর ডাল, ছোলা, চিনি পেঁয়াজ এ পাঁচটি নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে। রমজানের শুরুতে খেজুর বিক্রি শুরু করবে। বাজারমূল্যের সঙ্গে টিসিবির মূল্যের বেশ ফারাকও থাকে। তাই মানুষের আগ্রহও বেশি টিসিবির পণ্য নিয়ে।
বাজারে ১৪০ টাকায় তেল বিক্রি হলেও টিসিবিতে দাম ১০০ টাকা, ৪০ টাকার পেঁয়াজ ২০ টাকা, ৮০ টাকার মসুর ডাল ও ছোলা ৫৫ টাকা, ৭০ টাকার চিনিও ৫৫ টাকা এবং খেজুর বিক্রি হয় ৮০ টাকায় যার সাধারণ দাম প্রায় ২০০ টাকা।
তবে টিসিবিতে আগে দাম আরও কিছুটা কম ছিল সম্প্রতি তেলের দাম ১০ টাকা, ডাল ও চিনির দাম পাঁচ টাকা করে বেড়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার ছাড়ে ছয়টার দিকেও ফার্মগেট ও বিজয়সরণির মাঝে থাকা টিসিবির ট্রাকের সামনে লম্বা লাইন দেখা গেল।
লকডাউনে কাজ কমে যাওয়ায় আয় কমেছে শ্রমজীবীদের। কম দামে পণ্য তাদের জন্য সুবিধাজনক
লাইনে থাকা ক্রেতা শ্যামল সরকার বলেন, ‘টিসিবিতে লম্বা লাইন ধরতে হয়। কিন্তু এক-আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও কিছু টাকা সাশ্রয় হয়। সব পাণ্য বাজর থেকে নিলে প্রায় ২০০ টাকা বেশি দিতে হয়। তাই অফিস থেকে ফেরার পথে কিছু পণ্য কিনে নিচ্ছি।’
অপর ক্রেতা আলেয়া বেগম জানান, তিনটি বসায় রান্নার কাজ করে মাসে ৭ হাজার টাকা বেতন পান। বাজারে যে দাম তা দিয়ে চলা কষ্টকর। তাই টিসিবির ট্রাক থাকলে যতই সময় লাগুক ট্রাক থেকেই পণ্য কিনেন। একশ টাকা বাঁচলেও অনেক।
টিসিবির পণ্যের মধ্যে তেল ও চিনি ও ডালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এগুলো আগে শেষ হয়ে যায়। তাই অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও সব পণ্য না পেয়ে ফিরে যান অনেকে।
বিক্রেতারা যা বলছেন
কর্মীরা জানান, ট্রাক সেলে বিক্রি শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯ টায়। কিন্তু পণ্য সংগ্রহ করে স্পটে পৌঁছতে কিছুটা সময় লাগে। আজ স্পটে পৌঁছতে ১২টা বেজে গেছে। ট্রাক আসার আগেই শতাধিক মানুষের লাইন পড়ে যায়। তাই বিক্রি করতেও সময় বেশি লাগছে। এতে বিকাল পর্যন্ত ট্রাকে কিছু পণ্য রয়ে গেছে।
বিতরণ কর্মী কাওসার খান বলেন, ‘আগের চেয়ে বেশি মানুষ এখন টিসিবিতে পণ্য কিনতে আসেন। তিনজন মানুষ মিলে তাদের পণ্য মেপে দিয়েও পারা যাচ্ছে না।’
পণ্য অনুপাতে মানুষ বেশি হওয়ায় নির্ধারিত পরিমাণের কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছেন। যাতে বেশি মানুষ পেতে পারেন। প্রতিজন ক্রেতা সর্বোচ্চ তিন কেজি পেঁয়াজ, তিন কেজি চিনি, তিন কেজি ডাল, দুই কেজি ছোলা ও চার লিটার তেল কিনতে পারছেন।
ট্রাকে ৩০০ কেজি পেঁয়াজ, ৫০০ কেজি ছোলা, ৮০০ কেজি ছোলা, ৬০০ কেজি ডাল ও ১২০০ লিটার তেল পেয়েছেন। চাহিদার তুলনায় এটি কিছুই না।
দাম বাড়ছেই
শুধু পণ্য বিতরণই নয় নিয়মিত বাজারদর ও পর্যবেক্ষণ করে টিসিবি। সংস্থাটির হিসাবে গত এক সপ্তাহে প্রায় ডজন খানেক পণ্যের দাম বেড়েছে।
এর মধ্যে চালে ২.৪৬ থেকে ৫.৬৬ শতাংশ, খোলা ময়দায় ১.৩৯ শতাংশ। সয়াবিন তেলে ৩.৮০ শতাশ, পাম অয়েলে ১.৩৫ থেকে ৩.৩০ শতাংশ, মসুর ডারে ২.২২ থেকে ৬.২৫ শতাংশ, অ্যাংকর ডালে ৮.৪৩ শতাংশ, আলুতে ১৭.৬৫ শতাংশ, পেঁয়াজে ১২ শতাংশ, রসুনে ৪০ শতাংশ, শুকনা মরিচে ৯ শতাংশ, আমদানির আদায় ৩১ শতাংশ, খেজুরে ৪২ শতাংশ দাম বেড়েছে।
মানুষের চাহিদার প্রেক্ষিতে বরাদ্দও বাড়িয়েছে টিসিবি। টিসিবি ডিলাররা জানান, তারা আগে প্রতিদিন এক টন তেল বরাদ্দ পেতেন। লকডাউনের পরে তা ২০০ কেজি বেড়েছে। এছাড়া ১০০ কেজি বেড়ে ৮০০ কেজি করে চিনি বরাদ্দ পাচ্ছেন তারা। আর ৬০০ কেজি ডাল ও ৪০০ কেজি ছোলা পাচ্ছেন।
বর্তমানে টিসিবির ৫০০টি ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি হচ্ছে সারাদেশে । এর মধ্যে রাজধানীতে পণ্য বিক্রি হচ্ছে ১০০ ট্রাকে। এসব পণ্য ১ এপ্রিল থেকে ই-কমার্সের মাধ্যমেও বিক্রি শুরু হয়েছে।