করোনার সংক্রমণ বিস্তার রোধে সাত দিনের লকডাউনের প্রথম দিনে সোমবার রাজধানীর ব্যাংক পাড়া মতিঝিলে গ্রাহকের চাপ ছিল বেশি।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টার লেনদেনের সময় ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ভিড় দেখা যায়। টাকা তোলা, জমা দেয়া ছাড়াও অন্য সেবা নিতে ব্যাংকমুখী হন গ্রাহকরা।
ব্যাংকে প্রবেশের ক্ষেত্রে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মাস্ক ছাড়া কোনো গ্রাহককে ব্যাংকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পাশাপাশি সরবরাহ করা হয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
কোনো কোনো ব্যাংকে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে মাপা হয় শরীরের তাপমাত্রা।
করোনা মোকাবিলায় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেশ সতর্ক। মুখে মাস্ক ও কেউ কেউ হাতে গ্লাভস পরে অফিস করছেন।
কয়েকটি ব্যাংকের মধ্যে মাইকিং করেও সতর্ক করা হয়।
তবে, ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশের পর দূরত্ব মেনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক গ্রাহকই ছিলেন উদাসীন।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিচতলায় লোকাল অফিসে লেনদেন শুরুর পরই গ্রাহকদের চাপ বাড়তে থাকে।
গ্রাহকরা জানান, মাসের শুরুতে নানা চাহিদা মেটাতে টাকা প্রয়োজন। এজন্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও ব্যাংকে আসতে হয়েছে। তারা জানান, বাসাভাড়া দেয়া, মাসের বাজার, অন্যান্য বিল পরিশোধের জন্য টাকা দরকার।
সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোর্শেদুল কবীর বলেন, ‘সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সেবা দিচ্ছে ব্যাংক। মাস্ক ছাড়া কোনো গ্রাহককে ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না’।
তিনি বলেন, ‘সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মীরাও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। সকাল থেকে ব্যাংকে গ্রাহকের দীর্ঘ লাইন। তবে টাকা জমা দেয়ার চেয়ে তোলার পরিমাণ বেশি।’
জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের মতো দীর্ঘ লকডাউনের কবলে পড়ার আশঙ্কা থেকেই গ্রাহকরা জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য টাকা তুলে নিচ্ছেন। এ ছাড়া রমজানের কেনাকাটার বিষয়ও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রাহক সেবা দেয়া হচ্ছে।’
মতিঝিলের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
কয়েকটি সরকারি ব্যাংকে প্রবেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে গ্রাহকদের লাইন। ব্যাংকের মধ্যে ভিড় এড়িয়ে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হয়।
অনেক গ্রাহক মনে করছেন লকডাউন আরও বাড়লে নগদ টাকা কোথায় পাবেন। এ শঙ্কায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও বিভিন্ন আমানত স্কিমের টাকা উত্তোলনে গ্রাহকদের চাপ বেশি।
তবে সরকারি ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা বেশি থাকলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক উপস্থিতি ছিল কম। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ব্যাংকে আসেননি।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মতিঝিল শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকাল (রোববার) লকডাউনের খবরে গ্রাহকের নগদ টাকা তোলার অনেক চাপ ছিল। কিন্তু আজ (সোমবার) সকাল থেকে গ্রাহকদের উপস্থিতি কম। টাকা তোলা ও জমা ছাড়া অন্য কোনো কাজে গ্রাহকরা তেমন আসেনিন।’
ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা সাঈদুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে গ্রাহক উপস্থিতি অন্য সময়ের তুলনায় কম। মাস্ক ছাড়া কাউকে ব্যাংকের শাখায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।’
দেশে প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের লকডাউনে ব্যাংকগুলোতে লেনদেন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চালু থাকবে। অফিস চলবে ২টা পর্যন্ত।