বেশ কিছু দিন ধরেই নাগালের বাইরে সব মুরগি দাম। সরকারের লকডাউনের ঘোষণা আসার পর তা আরও চড়া হয়েছে। গত দুই দিনে দাম কিছুটা কমলেও স্থিতিশীল নেই। কোনো দোকানে বেশি দাম, আবার কোনোটায় সহনীয়। একই অবস্থা মাছের বাজারেও।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোমবার সকালে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। ডিম পাড়া লাল ও সাদা লেয়ার মুরগি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা এবং দেশি মুরগির প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজার মসজিদের উল্টো দিকের দোকানের মুরগি ব্যবসায়ী আবদুল ওহাবের দোকানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি ৩১০ টাকা। তবে তার পাশের দোকনেই ব্রয়ালার মুরগি ১৫০ টাকা এবং সোনালি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আবদুল ওহাব জানান, তার দোকানের বেশির ভাগ মুরগি দুই দিন আগে কেনা। তখন প্রতি কেজি মুরগিতে পাইকারি ২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৬০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে।
পাশের দোকানি মো. হোসেন জানান, কারওয়ান বাজারে দুই ধরনের দোকান আছে। কিছু ব্যবসায়ী ঢাকার বাইরে থেকে মুরগি এনে সরাসরি বিক্রি করেন। আবার অনেকে তাদের কাছ থেকে মুরগি কিনে বিক্রি করেন। ফলে দামের পার্থক্য হয়। তবে তা ৫ থেকে ১০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
একই বাজারে একটু দূরে কাঁচা বাজারের পাশেই সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ৩২০ টাকায়। একই মুরগি দুই কিলোমিটার দূরে কলমিলতা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩৩৫ থেকে ৩৪০ টাকায়। এ বাজারের বিক্রেতা রায়হান জানান, ৩৪০ টাকার কমে মুরগি বিক্রি করলে লাভ বেশি থাকে না।
বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকা, ছাগলের মাংস ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়।
মাছ বাজারে দামের পার্থক্য আরও বেশি। আকার ও দোকান ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ১৯০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে আধা কেজি ওজনের রুই (যা নলা মাছ হিসেবে পরিচিত) ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। এক কেজি ওজনের রুই ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা এবং দুই থেকে তিন কেজি ওজনের রুই মাছ ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্য মাছের মধ্যে আকারভেদে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১০০ থেকে ১৬০ টাকা, ছোট পুঁটি মাছ ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাস ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, গ্রাস কাপ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, শিং মাছ ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা, ছোট পাবদা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী মো. সুজন বলেন, মাছের বাজার বেশ কিছুদিন ধরেই চড়া। দুই দিন ধরে দাম আরও বেড়েছে। তবে আজ (সোমবার) দাম একটু কম আছে। সামনে লকডাউন বাড়লে দাম বাড়তে পারে।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মনির উদ্দিন দাম বাড়ার জন্য মাছ ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘কিছু শুনলেই ক্রেতারা আতঙ্কিত হয়ে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এক কেজির জায়গায় চার কেজি কেনেন। ব্যবসায়ীরা যখন দেখেন বেশি মানুষ বাজারে আসছে তখন তারা দাম বাড়িয়ে দেন এটা ঠিক না। বাজারে একই সাইজের মাছের দাম প্রায় একই রকম থাকে।
‘এখন দেশে প্রচুর মাছ চাষ হয়। গত কয়েক মাসের মধ্যে মাছের সংকটও পড়েনি। লকডাউনের কারণে কোনো কিছু বন্ধও নেই। আবার অনেক মাছও এসেছে। তবু দাম বেড়েছে। কিন্তু এ মাছ দেশের পুকুরেই হয়। বাইরে থেকে আনতে হয় না।’
অন্যরা যে তেলাপিয়া মাছ ১৬০ টাকায় বিক্রি করছে, তিনি তা ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন বলেও জানান ব্যবসায়ী মনির।
বাজরে ইলিশ মিললেও দাম বেশ চড়া। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশ বিক্রেতা মো. সুমন জানান, বাজারে এখন ইলিশের জোগান অনেক কম। যা কিছু আসছে বেশির ভাগই আগে ফ্রিজে রাখা। নতুন মাছ ধরার আগ পর্যন্ত দাম বেশি থাকবে। দাম বেশি বলে সব ক্রেতা ইলিশ কিনতেও আসে না।
ক্রেতারা বলছেন, বিভিন্ন জিনিসের বাড়তি দামের কারণে তাদের বাজার খরচ মেলাতে হিমশিম খেতে হয়। কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা আরিফ হোসেন জানান, করোনার কারণে তার ট্রাভেল ব্যবসার অবস্থাও ভালো না। তার ওপর তেল থেকে মাছ সবকিছুর দামই বাড়তি। একবার দাম বাড়লে তা আর কমে না। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য এটা যন্ত্রণার। কারণ, একদিকে খরচ বাড়লে অন্য দিকে খরচ কমাতে হয়।
চাল ও তেলের পর এখন ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির বাড়তি দাম গরিব ও মধ্যবিত্তেদের খরচ বাড়াচ্ছে।