লকডাউন ঘোষণার পর রাজধানীর কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যের বাজার কিছুটা অস্থির হয়ে উঠলেও আবার স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে পাইকারি বাজারে কমে এসেছে বাড়তি দাম। দাম কমার কথা বলছেন খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরাও।
সোমবার লকডাউনের প্রথম সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি সবজি বাজারে অনেকটা স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে বেচাকেনা। লকডাউনের তেমন কোনো প্রভাব নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সবজি নিয়ে বসেছেন পাইকারেরা। তারা জানান, দুই দিন আগের তুলনায় বাজারে দর বেশ কম। এমনকি কিছু সবজির দাম আগের চেয়েও কমেছে।
এ বাজারের পাইকারি টমোটো বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শনিবার বাজারে যে দাম ছিল আজ (সোমবার) তার চেয়ে দাম অনেক কমেছে। এমনকি গত রাতেও যে দাম ছিল সকালে নতুন মাল আসায় দাম কমে গেছে। এক ক্যারেট (প্রতি ক্যারেটে ২৫ থেকে ২৭ কেজি) হিসাবে নিলে প্রতি কেজি টমেটার দাম পড়ছে ৯ থেকে ১০ টাকা। আর পাল্লার (৫ কেজি) দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। দুই দিন আগেও কেজিতে ২ থেকে তিন টাকা বেশি ছিল।’
কারওয়ান বাজারে খুচরায় টমেটোর কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়, বেগুন ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, উচ্ছে ও করলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, চিচিংগা ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, শসা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, পেপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
পাইকারি বিক্রেতা মো. শাহাবুদ্দিন জানান, আগের চেয়ে কমেছে করলা ও উচ্ছের দাম। প্রতি পাল্লা উচ্ছের দাম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, করলা ১৩০ টাকা। সে হিসাবে উচ্ছের কেজি ৩০ টাকা, করলা ২৬ টাকা কেজি। পাল্লায় ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। প্রায় সব সবজির পাইকারি মূল্য আগের চেয়ে কমেছে।
খুচরায় দামের পার্থক্য বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পাইকাররা প্রতিদিন মাল কিনে প্রতিদিন বিক্রি করে। খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের কাছে থাকা মাল বিক্রি না করে নতুন মাল কেনে না। আগের মাল শেষ হলে তারাও দাম কমাবে।’
কারওয়ান বাজারে রোববার পাইকারিতে, প্রতি পাল্লা বেগুন ১১০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিংগা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, শসা ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারে আগের চেয়ে কিছুটা বেশি দাম রয়েছে আলু ও পেঁয়াজের। প্রতি পাল্লা আলু ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, ভারতীয় আমদানির পেঁয়াজ ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। খুচরায় দেশি পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে দুই দিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৪৫ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে।
আলুর পাইকারি বিক্রেতা মো. হোসেন বলেন, ‘তিন দিন আগেও প্রতি পাল্লার দাম ছিল থেকে ৮২ থেকে ৮৫ টাকা। তবে শনিবার তা বেড়ে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা হয়েছিল। এখন আবার কিছুটা কমেছে।
পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম পাল্লায় বেড়েছে ১০ টাকার মতো।’
মরিচ ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে গতকাল (রোববার) প্রতি পাল্লা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকায়। আজ তা ১১০ টাকায় নেমেছে। প্রতি কেজির দাম ৫০ টাকা থেকে কমে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
এদিকে নতুন করে দাম না বাড়লেও আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। খুচরায় প্রতি হালি লেবু ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের লেবু ব্যবসায়ী রহমান জানান, বাজারে লেবুর কমতি নেই, তবে আকারে ছোট। বড় লেবুর দামও তুলনামূলক একটু বেশি। পাইকারিতে প্রতি ১০০ ছোট লেবু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের লেবু ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং বড় লেবু সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কলমিলতা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. সবুজ বলেন, ‘আজ বাজারে পাইকারি দাম অনেক কম। তবে দুই দিন আগের কিছু সবজি রয়ে গেছে। কারওয়ান বাজারে খুচরা মূল্যের চেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি হতে পার, কারণ পরিবহন ভাড়া দিতে হয়, আবার বিক্রিও কম। নতুন পুরোনো মিলে দাম কমেছে।’
এ বাজারে অন্য সবজির মধ্যে শিম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মুলা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঝিঙা ও ধুন্দল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, লতি ৬০ টাকা, সজনে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, আলু ২২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সবজি ছাড়া অন্য নিত্যপণ্যের মধ্যে দাম বেড়েছে রসুনের। দুই দিনে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দেশি রসুনের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দেশি আদা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানির আদা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিনি ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডালের মধ্যে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মুগডাল ১৪০ টাকা হয়েছে। আগের মতোই মসুর ডাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকাতেই রয়েছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, খোলা পাম অয়েল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, সয়াবিনের এক লিটারের বোতল ১৪০ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৬৪০ থেকে ৬৫০ টাকা।