তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর ২০২১-২৩ মেয়াদের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেয়েছে। এ প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসান সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্মিলিত পরিষদ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদের মধ্যে ২৪টিতে জয় এসেছে। অন্যদিকে সভাপতি পদে হারলেও বি এম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বে থাকা ফোরাম থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১১ পরিচালক।
কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই রোববার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় বিজিএমইএ নির্বাচন। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। চট্টগ্রামে বিজিএমইএর আঞ্চলিক কার্যালয়েও একই সময়ে ভোট গ্রহণ চলে।
টানা ১০ ঘণ্টার দীর্ঘ নিবাচন শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভোট গণনা শুরু হয়। পরে মধ্যরাতের পরে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের তালিকা প্রকাশ করে সৈয়দ ফরহাত আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন বোর্ড।
নির্বাচনী বোর্ড জানায়, নির্বাচনে ঢাকায় ১ হাজার ৮৫৩ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ হাজার ৬০৪ জন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম নির্বাচন কেন্দ্রে ৪৬১ ভোটের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৯২ জন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ভোট পড়েছে ১ হাজার ৯৯৬টি, যা শতাংশের হিসাবে ৮৬ শতাংশ।
সর্বাধিক ১ হাজার ২০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা ফারুক হাসান। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফোরামের দলনেতা এ বি এম সামছুদ্দিন ৯০৪ ভোট পেয়ে হেরেছেন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ফোরামের প্রার্থী বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি রুবানা হক।
সম্মিলিত পরিষদ নেতা ফারুক হাসান নিজেদের ইশতিহারে পোশাক খাতের উন্নয়নে আগামী দুই বছর নিজেকে উৎসর্গ করার কথা বলেন। বিজয়ী হলে কারখানা সচল রাখা এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নকে অগ্রাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এবার এমন সময় বিজিএমইএ নির্বাচন হলো যখন দেশে করোনা প্রকোপ বাড়ায় সরকারের লকডাউন ঘোষণা করেছে। পোশাকের বড় বাজার ইউরোপ-আমেরিকা করোনাভাইরাসের সংক্রমণে জর্জরিত, যা দেশের রপ্তানি খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। কঠিন এই পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের সংকট মোকাবিলায় নতুন কমিটিকে কাজ করতে হবে।
৩৫ সদস্যের পর্ষদে যারা হলেন পরিচালক
ঢাকায় সম্মিলিত পরিষদের বিজয়ীরা হলেন জায়ান্ট টেক্সটাইলের ফারুক হাসান, সেহা ডিজাইনের এস এম মান্নান (কচি), তুসুকা ফ্যাশন্সের আরশাদ জামাল দিপু, ক্লাসিক ফ্যাশনসের শহীদউল্লাহ আজিম, এনভয় ডিজাইনের শেহরীন সালাম ঐশী, উর্মি গার্মেন্টসের আসিফ আশরাফ, ডেনিম এক্সপার্টের মহিউদ্দিন রুবেল, এনভয় ফ্যাশন্সের তানভীর আহমেদ, নিপা ফ্যাশনসের খসরু চৌধুরী, ব্রাদার্স ফ্যাশনসের আবদুল্লাহ হিল রাকিব, টিআরজেড গার্মেন্টের হারুন অর রশীদ, ইয়াং ফরেভারের রাজীব চৌধুরী, মিসামি গার্মেন্টসের মিরান আলী, ডিজাইন টেক্সট নিটওয়্যারের খন্দকার রফিকুল ইসলাম, লায়লা স্টাইলের ইমরানুর রহমান, সাদমা ফ্যাশন ওয়্যারের নাছির উদ্দিন ও ভিনটেজ ডেনিমের সাজ্জাদুর রহমান মৃধা।
ঢাকায় ফোরামের বিজয়ীরা হলেন এমজি শার্টেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি রুবানা হক, দুলাল ব্রাদার্সের এম এ রহি, রাইজিট অ্যাপারেলসের মাহমুদ হাসান খান, কেইলক নিউএজ বাংলাদেশের আসিফ ইব্রাহিম, সুরমা গার্মেন্টের ফয়সাল সামাদ, এমজি নিট ফ্লেয়ারের নাভিদুল হক, দেশ গার্মেন্টের ভিদিয়া অমৃত খান, অনন্ত গার্মেন্টের এনামুল হক খান, ফেব্রিকা নিট কমপোজিটের মিজানুর রহমান।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে সম্মিলিত পরিষদের বিজয়ীরা হলেন ওয়েল ডিজাইনার্সের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, লেগেসি ফ্যাশন্সের তানভীর হাবিব, এএসআর অ্যাপারেলের এ এম শফিউল করিম খোকন, ফোর এইচ অ্যাপারেলের মো. হাসান জেকি, অ্যামেকো ফেব্রিক্সের এম আহসানুল হক, এইচকেসি অ্যাপারেলের রকিবুল আলম চৌধুরী, এনএলজেড ফ্যাশনসের মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা। আর ফোরামের বিজয়ীরা হলেন ক্লিপটন অ্যাপারেলসের এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও চিটগং এশিয়ান অ্যাপারেলসের মোহাম্মদ আবদুস সালাম।
গত আট বছরে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের পর এবারই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বিজিএমইএতে।
এবারের নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদে দুই প্যানেলের ৭০ প্রার্থী লড়েছেন। বিজয়ী পরিচালকরা ১৬ এপ্রিল পরিচালনা পর্ষদে একজন সভাপতি, একজন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং ছয়জন সহসভাপতি নির্বাচিত করবেন। নতুন কমিটি বিজিএমইএর দায়িত্ব নেয়ার সম্ভাব্য তারিখ ২০ এপ্রিল।