বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিদেশি বিনিয়োগে অশনিসংকেত

  •    
  • ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০৮:৩১

কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় আগামী দিনগুলোতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতির গবেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা।

করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে চীন থেকে সরে যাওয়া বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আনতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার কোনো প্রভাব পড়েনি।

কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় আগামী দিনগুলোতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতির গবেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম।

২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে ২২২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।

এই আট মাসে নিট এফডিআই কমেছে আরও বেশি; ৩১ দশমিক ২১ শতাংশ। এ সময়ে ৬০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশে। গত বছরের একই সময়ে তা ৮৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছিল।

বিভিন্ন খাতে মোট যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, সেই অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়।

জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) এসেছে, চলে গেছে তার চেয়ে বেশি।

এই আট মাসে পুঁজিবাজারে মোট যে বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে ২০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বেশি দেশে নিয়ে গেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ, নিট এফডিআই দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল পুঁজিবাজারে।

বিদেশি বিনিয়োগের এই নাজুক অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থনীতি গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, এই মহামারিতে সব দেশেই বিনিয়োগে খরা চলছে। সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ লকডাউনের কারণে অনেক দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের মুনাফা কমে গেছে; কেউ কেউ বড় লোকসানের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় কেউ আর অন্য দেশে বিনিয়োগ করছে না। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এ অবস্থা কাটতে সময় লাগবে।’

আহসান মনসুর বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা। সবার মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন করে লকডাউনও ঘোষণা করেছে সরকার। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। এ অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে এফডিআইর জন্য কোনো সুখবর নেই, অশনিসংকেতই বলা যায়।

চীনের সরে যাওয়া বিনিয়োগ বাংলাদেশে নিয়ে আসার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উদ্যোগ নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। কাজ করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়তে হবে। তারা যখন নিশ্চিত হবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাবে তখনই আসবে।

‘তবে, এখন যে কঠিন পরিস্থিতি, এ অবস্থায় উদ্যোগ নিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। অবস্থা স্বাভাবিক না হলে বিদেশি বিনিয়োগ তো দূরে থাক, দেশি বিনিয়োগও হবে না।’

বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের চেম্বার ‘অ্যামচেম’-এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে এফডিআই পরিস্থিতি কখনই সন্তোষজন ছিল না। গ্যাস-বিদ্যুৎ, বন্দরসহ অন্য অবকাঠামো সমস্যার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে বিনিয়োগ করতে তেমন আগ্রহী হতেন না।

তিনি বলেন, ‘এখন এসবের অনেক উন্নতি হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এফডিআই বাড়ার একটা অনুকূল পরিবেশও সৃষ্টি হচ্ছিল। কিন্তু মহামারি সে সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে। এখন এফডিআই না বেড়ে উল্টো কমছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩১৫ কোটি ৭০ লাখ (৩.১৫ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই এসেছিল দেশে।

তার আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) এসেছিল ৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এফডিআই। এর মধ্যে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে জাপানের কোম্পানি জাপান টোব্যাকো। আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কেনা বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল ওই প্রতিষ্ঠানটি।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্থা-আংকটাড গত বছরের শেষের দিকে বিশ্ব বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে যে ধস নেমেছে, তার ধাক্কা উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত– সব দেশের ওপরই পড়েছে। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বিশ্বে এফডিআইপ্রবাহ কমেছে ৪৯ শতাংশ।

ওই ছয় মাসে বাংলাদেশে ১১৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল, যা ছিল গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ কম। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ১৪৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছিল।

আংকটাডের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১৫৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল, যা ছিল আগের ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৩৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। জাপান টোব্যাকোর বিনিয়োগের কারণেই ওই বছরে এফডিআই হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল।

বিনিয়োগ আনার উদ্যোগে সারা নেই

গত বছরের ২৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীন থেকে মুখ ফেরানো বিদেশি বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়মকানুন সহজ করার পাশাপাশি ব্যাংকিং জটিলতা কমাতে বলেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিবের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়: ‘বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অনায়াসে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশ বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়মনীতি সহজীকরণ বা যুগোপযোগী করতে হবে।’

চিঠিতে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের অনেক দেশ, যেমন ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগসংক্রান্ত আইন, বিধিবিধান, করব্যবস্থা এবং ব্যাংকিংপদ্ধতি সহজতর করছে।’

এসব দেশে আইনিকাঠামো, নীতিসহায়তায়, ব্যাংকিং নীতি ও পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারও এসব বিনিয়োগ দেশে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংককেও কিছু নিয়ম সহজ করতে হবে।

‘বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অর্থ-লভ্যাংশ নির্বিঘ্নে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৮ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে সর্বোত্তম ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার ওপরও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের শ্রমবাজার সহজলভ্য। রাজনৈতিক অবস্থাও স্থিতিশীল। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের শিল্প, কৃষি এবং সেবা খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। আমানতের সুদের হার বিদেশি ব্যাংকের তুলনায় বেশি হওয়ায় দেশীয় ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন।

‘কিন্তু অনেক সময় সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ শেষে অর্থ উত্তোলন এবং প্রবাসে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় তারা ব্যাংকের জটিল প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হন, যা অনেক প্রবাসীকে দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে।’

বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট যুগোপযোগী করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি একটি খসড়া তৈরি করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এ আইনে আর কী কী পরিবর্তন আনা দরকার, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুততম সময়ে আইনটি পাস করার ওপর জোর দেওয়া হয় চিঠিতে।

বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ‘যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে’, তা কাজে লাগাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে বিদ্যমান আইনগত, নীতিগত এবং পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল ওই চিঠিতে।

এ বিভাগের আরো খবর