করোনাকালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণোদনা হিসেবে স্বল্পসুদে যে ঋণ দেয়া হচ্ছে, তার কঠিন শর্তের কারণে ঋণগ্রহীতারা বিপাকে পড়েছেন। ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর শর্তের কারণে পিছিয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এ কারণে হবিগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না।
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্যাকেজ-২ এর আওতায় চার শতাংশ সুদে প্রধানমন্ত্রী ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই ঋণ নিয়ে যারা বিপাকে পড়েছেন, তাদের একজন জেলার শায়েস্তাগঞ্জের তরুণ উদ্যোক্তা খলিলুর রহমান সুজন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। প্রতি মাসে পরিশোধ করি ৪৪ হাজার টাকা। মাত্র ৫ লাখ টাকার জন্য প্রতি মাসে ৪৪ হাজার টাকা কিস্তি দেয়া আমার জন্য খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। না বুঝে ঋণ নিয়ে আমি এখন মহাবিপদে পড়েছি।’
হবিগঞ্জ শহরতলীর পোদ্দারবাড়ী এলাকার প্রবাসী উদ্যোক্তা জাকারিয়া চৌধুরী ঋণ নিতে আবেদন করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে ঋণ দিতেও রাজি হয়। কিন্তু ঋণের যেসব শর্ত দেয়া হয়, তা দেখে তিনি নিজেই ঋণ গ্রহণ থেকে পিছিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘এই ঋণ বিনোয়োগবান্ধব নয়। মেয়াদ মাত্র এক বছর। আমি চার লাখ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছিলা। যার জন্য প্রতি মাসে কিস্তি দিতে হবে ৩৫ হাজার দুইশ টাকা। যা খুবই কঠিন।’
এ ঋণের মেয়াদ আরও বাড়ানোর দাবি জানান এই উদ্যোক্তা।
এই দাবির সঙ্গে একমত হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মোতাচ্ছিরুল ইসলামও। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এক বছরের স্থলে দুই বছর মেয়াদ করলে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমার মনে হয়। এ জন্য এই প্রণোদনা নিয়ে পূণঃবিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে।’
তবে সোনালী ব্যাংক হবিগঞ্জ প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঋণটি সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয়ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণে এ বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। তারা আমাদেরকে যে শর্ত দেয় আমরা সেই মোতাবেক কাজ করি।’
আছে ঘুষের অভিযোগও
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামে ‘লন্ডন এগ্রো’র স্বত্বাধিকারী লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি সোনালী ব্যাংকের হবিগঞ্জ শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করলে তার কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে। পরে তিনি ঋণ না নিয়ে শাখার ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
লুৎফুর রহমার মাছ চাষ করেন। পাশাপাশি ফল বাগান আর ডেইরি খামার গড়ে তোলেন। কিন্তু করোনার প্রভাবে তার খামারের দুধ ও ফল বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। নগদ অর্থের সংকটে পড়ে বিক্রি করে দেন আটটি গাভী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনা প্যাকেজের খবর জানতে পেরে আবেদন করি সোনালী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায়। কিন্তু শাখার ম্যানেজার আমার কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দিলে আমাকে ২০ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সোনালী ব্যাংক হবিগঞ্জ প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ যথারীতি বিতরণ হয়েছে এবং কোন অনিয়ম হয়নি। যারা সকল শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণে ঋণ পাননি, তারা এ মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’
সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন জেলায় ৩৫টি ব্যাংক ও দুটি অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে সিএমএসএমই প্রণোদনা প্যাকেজ-এর আওতায় ৬৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। ডিসেম্বরের নির্ধারিত সময়ে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলে মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। অনেক ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে, একাধিক ব্যাংক কোন ঋণই বিতরণ করেনি।