বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফ্লোর প্রাইসে হাত নয়, লেনদেন বাড়ানোর চেষ্টায় বিএসইসি

  •    
  • ২ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:১১

করোনা মহামারির নতুন পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ আমাদের নেই। লেনদেন বন্ধ করারও কোনো পরিকল্পনা নেই। বরং এমন অবস্থার মধ্যেও লেনদেন কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে কমিশন: বিএসইসি চেয়ারম্যান

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর পুঁজিবাজারে শেয়ারদরে ধস ঠেকাতে প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়ার যে উদ্যোগ ২০২০ সালে নেয়া হয়েছিল, সেটি নতুন করে এবার আর হচ্ছে না।

দেশে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকার কারণে সরকার জনসমাগমে বিধিনিষেধ দেয়ার পর এবারও পুঁজিবাজারে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। এমনকি ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংকের শেয়ারও দর থরে রাখতে পারছে না।

এই পরিস্থিতিতে আবার শেয়ারগুলোর সর্বনিম্ন দাম বেধে দেয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে সরাসরি ‘না’ করে দেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ আমাদের নেই।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। বিএসইসি যেভাবে ফ্লোর প্রাইস পরিবর্তনের নির্দেশনা জরি করেছে সেভাবেই হতে পারে।’

তবে বোনাস ও রাইট ইস্যুর মাধ্যমে দর সমন্বয় হয়ে ফ্লোর প্রাইস পরিবর্তন হবে বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তে একমত হতে পারেননি পুঁজিবাজারের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগাকরী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম।

তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস যে উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছিল, তা পরিবর্তন করা হলে সেই উদ্দেশ্যটি আর থাকে না।’

তাই রাইট বা বোসান শেয়ার দিলেও ফ্লোর প্রাইস পরিবর্তন না করে যেভাবে আছে সেভবেই রাখার পক্ষে তিনি।

করোনা মহামারিতেও বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি বেশ ভালো। প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে বিশ্বে এগিয়ে থাকা দেশগুলোরই একটি। উৎপাদন খাত চালু, ব্যাংকের ‍মুনাফাও এবার বিস্ময়করভাবে আগের বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে।

এখন পর্যন্ত যে ১১টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে কেবল দুটির মুনাফা গত বছরের চেয়ে কমেছে। আর লভ্যাংশ কমিয়েছে কেবল দুটি ব্যাংক। একটি ব্যাংক কখনও লভ্যাংশ দেয়নি, এবারও দেয়নি। বাকি সবগুলো গত বছরের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে।

এর মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির কারণ, গত বছরের মতো লেনদেন স্থগিতের গুজব। যদিও বিএসইসি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, ব্যাংক চালু থাকলে চালু থাকবে পুঁজিবাজারের লেনদেনও, তার পরেও এ নিয়ে ‍গুজব এখনও জোরাল।

পুঁজিবাজারে লেনদেন স্থগিত হলে বিপাকে পড়েন বিশেষ করে যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছেন। শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ থাকলেও ঋণের সুদ ঠিকই যোগ হয়।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘করোনা মহামারিতে লেনদেন বন্ধ করারও কোনো পরিকল্পনা নেই। বরং এমন অবস্থার মধ্যেও লেনদেন কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে কমিশন।’

ফ্লোর প্রাইস কেন?

২০২০ সালে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ঘোষণা করা হয় ফ্লোর প্রাইস। তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির ক্ষেত্রেই এই দাম বেঁধে দেয়া আছে। বলা হয়েছে, এর নিচে কোনো অবস্থাতেই শেয়ারের দাম যাবে না।

ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির মৌলভিত্তি বিবেচনায় না নিয়ে বাজার মূল্যকেই বিবেচনা করা হয়। ২০২০ সালের ২২ মার্চের আগের পাঁচ দিনের গড় মূল্য ফ্লোর প্রাইস হিসেবে ধরা হয়।

ফ্লোর প্রাইসে জটিলতা

পুঁজিবাজারে বর্তমানে ৮০টির বেশি কোম্পানি আছে সেগুলোর শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ফ্লোর প্রাইসে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী – প্রতিটি কোম্পানির শেয়ার দরে সার্কিট ব্রেকার দেয়া আছে। অর্থাৎ শেয়ারের দর অনুযায়ী একটি কোম্পানি দিনের সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ম সীমা পর্যান্ত দর উঠা-নামা করতে পারে।

কিন্ত ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোম্পানিগুলো শেয়ার দর সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরে উঠতে পারবে কিন্ত দর কমতে পারবে না।

কোনো কোম্পানি যখন তার শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে বা রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করে তখন নিয়ম অনুযায়ী সে কোম্পানির শেয়ার দর সমন্বয় হয়ে থাকে।

কিন্ত ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিএসইসির বেধে দেয়া ফ্লোর প্রাইসে নিচে সমন্বয় দর যাওয়ার পরও তা সমন্বয় হয়নি।

গত বছরের ২২ মার্চ মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা হয় ৭৯৪ টাকা। এরপর কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে।

কোনো কোম্পানির দর রেকর্ড ডেটে যে টাকায় থাকে, তার পরে যত শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়, তত পরিমাণ কমে।

স্বাভাবিক নিয়মে কোম্পানিটির সমন্বয় করা দাম হওয়ার কথা ছিল ৭২০ টাকা। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস এখনও আগের দরেই আছে। প্রকৌশল খাতের ন্যাশনাল পলিমারের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।

এই কোম্পানির প্রতি একটি শেয়ারের বিপরীতে একটি করে রাইট শেয়ার পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত ৬ জানুয়ারি রাইট শেয়ারের জন্য ক্লোজিং ডেতে এর দাম ছিল ৭১ টাকা ৬০ পয়সা। প্রতি ১০ শেয়ারে পাঁচ টাকা প্রিমিয়াম নেয়া হয়েছে। ফলে রাইট শেয়ার যোগ হওয়ার পর মূল্য সমন্বয় হওয়ার কথা ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা।

কিন্তু এই শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা আছে ৫৬ টাকা ৬০ পয়সা। আর এর নিচে দাম নামতে পারছে না।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রধান

জটিলতা নিরসনে বিএসইসির উদ্যোগ

এমন অবস্থায় কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের সর্বনিম্ম দরে পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় দেখা দেয়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস পরিবর্তনের নির্দেশনা জারি করে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএসইসি ৭৬১তম সভায় ফ্লোর প্রাইসসংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বলা হয়, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত বোনাস বা রাইট শেয়ারের রেকর্ড ডেটের পরবর্তী সর্বনিম্ন দরকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সংশোধিত ফ্লোর প্রাইস হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

পরবর্তীতে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই নির্দেশনার আগে যে সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস পরিবর্তন করা হয়নি সেগুলো আর বিবেচনা করা হবে না। এ নির্দেশনার পর যে সব কোম্পানি বোনাস ও রাইট ইস্যু করবে তাদের নিয়মানুযায়ী ফ্লোর প্রাইস পরিবর্তন করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর