অনলাইনে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু পেজ যে প্রতারণা করে, সেটি জেনেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও। ক্রেতাকে ঠকানোর এই প্রবণতা এই খাতের বিপুল সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছে বলে আফসোসও করেছেন তিনি।
ই-কমার্সের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, ‘এ আগ্রহকে ধরে রাখতে হলে ক্রেতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।’
সকালে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন ও হার্ডওয়ার প্রযুক্তি পণ্যের প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক উদ্যোক্তা ই-কমার্সের নামে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করছে। অনলাইনে এক ধরণের পণ্য প্রদর্শন করে ডেলিভারি দিচ্ছে নিম্নমানের বা অন্য পণ্য। অনেক সময় অর্ডার নিয়ে পেমেন্ট পাওয়ার পর পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়।
‘ফলে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে এবং অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহ হারাচ্ছে। মুষ্ঠিমেয় কিছু অসাধু লোকের প্রতারণার জন্য যাতে ই-কমার্সের মতো একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাতের প্রসার কোনোভাবেই থেমে না যায় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করতে হবে।’
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবার প্রয়োজনকে নতুন আঙ্গিকে উপলব্ধি করতে পারার কথাও জানান রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবে যখন স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হবার উপক্রম তখন তথ্যপ্রযুক্তিই হয়ে ওঠে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবার একমাত্র নির্ভরশীল মাধ্যম।
‘দেশের শিক্ষা কার্যক্রম, বিচারিক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং সেবা ইত্যাদি হয়ে পড়ে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। চলমান মহামারির সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির স্থানীয় বাজার অকল্পনীয় প্রসার লাভ করেছে। এই মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।’
সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তাগিদ
অনলাইন জগতকে ব্যবহার করে সামাজিক অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টার বিষয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে সাইবার ক্রাইমের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিক অস্থিরতাও দেখা দেয়।
‘তাই সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আমি আশা করি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
প্রযুক্তি দেখাচ্ছে সম্ভাবনা
ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদেরকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি ও সাহস যোগাচ্ছে বলেও মনে করে রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এখন তৈরি করছে রোবোটসহ নানাবিধ সমগ্রী। বাংলাদেশের তরুণরা আন্তর্জাতিক রোবোটিকস ও ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে সম্মানজনক ফলাফল অর্জন করছে।
‘এসব মেধাবী তরুণদের কাজে লাগিয়ে স্থানীয় টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রসার এবং ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আমরা পৃথিবীর বুকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মডেল হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’
তথ্য প্রযুক্তিখাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের নানা পদক্ষেপও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি বলেন, ‘সরকার আইসিটি খাতে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্টার্টআপ ও উদ্ভাবনের জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা।
“স্টার্টআপ ও উদ্ভাবনী কালচারকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি ‘স্টার্ট আপ বাংলাদেশ’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমি আশা করি, এ সকল উদ্যোগের ফলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থাপনার কারণে দেশের মানুষ ছয়শরও বেশি সেবা অনলাইনে পাচ্ছে। এ বছরের মধ্যে আরও এক হাজার দুইশ সেবার ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে।
‘সরকারি অফিসসমূহে প্রায় ৯০ হাজারেরও অধিক কর্মকর্তা ই-নথি ব্যবহার করছে। সরকার দেশে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে ই-কমার্সের প্রসার ঘটেছে।
‘সারাদেশে চার হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসহ পৌরসভা, ওয়ার্ড ও অন্যান্য মিলে মোট ছয় হাজার ৬৮১টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে দেশের মানুষকে তথ্য ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
‘মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হওয়ায় নাগরিকগণ ডিজিটাল সেন্টার থেকে একাউন্ট খোলা, টাকা পাঠানো, সঞ্চয় করা, ঋণ গ্রহণ, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স উত্তোলন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা উত্তোলন, বিভিন্ন ধরনের ফি প্রদান ইত্যাদি আর্থিক কর্মকাণ্ডের সুবিধা পাচ্ছে।’