করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি সামলে উঠতে পারবে এবং এর প্রভাবে অর্থনীতি কোনো চাপে পড়বে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় করোনা পরিস্থিতি, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন, প্রণোদনা প্যাকেজসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী ।
মুস্তফা কামাল মনে করেন বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে আভাস দিয়েছে, ‘সেটা অনেকটাই অনুমাননির্ভর। এর কারণ ব্যাখা করে তিনি বলেন, তারা যেসব তথ্য–উপাত্ত দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে মিল থাকে না। এ জন্য তাদের হিসাবের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান থাকে।
‘আমরা জিডিপির হিসাব করি বছরে একবার। আর বিশ্বব্যাংক করে প্রতি তিন মাস অন্তর। আমি মনে করি, এই পার্থক্য সাময়িক। চূড়ান্ত হিসাবে ব্যবধান আরও কমে আসবে।’
বুধবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস-২০২১: সাউথ এশিয়া ভ্যাকসিনেটস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের–জিডিপি হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্ভাবাস দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অর্থনীতি কোনো চাপে পড়বে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে কোনো চাপ আসবে না। করোনা প্রতিরোধে আমাদের সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে আশা করছি, নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে কোনো সমস্যা হবে না।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের ক্রেতারা যদি করোনার কারণে অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে। অচিরেই করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আশা করছি, কোনা সমস্যা হবে না।’
অর্থমন্ত্রী জানান, ‘অর্থনীতির দুটি উৎস। একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ এবং অপরটি আন্তর্জাতিক। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিশ্ব-অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে নয়। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এর প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়বে।’
তবে অর্থমন্ত্রীর প্রত্যাশা, করোনা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ ব্যাখা করে বলেন, প্রত্যেক দেশে টিকা দেয়া শরু হয়েছে। এই কার্যক্রম শেষ হলে করোনার সংক্রমণ কমে আসবে। যেসব দেশে টিকা দেয়া হয়েছে, সেখানে করোনা কমেছে বলে জানান তিনি।
সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে তাতে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাপ সামলে উঠতে পারবে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব-অর্থনীতি বিপদে না পড়লে আমরাও পড়ব না।’
দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় আবার লকডাউন দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে সরসারি কোনো উত্তর দেননি অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত আছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে করোনা সংক্রমণ রোধে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘এগুলো সঠিকভাবে প্রতিপালন করলে আশা করছি শিগগিরই করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
সেরামের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা নেই
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া নিয়ে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা নেই এবং টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কর্মসূচি যথাসময়ে চলবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একটু আগে আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ছিলেন। সরকার ইতিমধ্যে ভারতের কোম্পানিকে টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। তাই টিকা না পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’