বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রবৃদ্ধি: বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখল বিশ্বব্যাংক

  •    
  • ৩১ মার্চ, ২০২১ ১৫:৩১

জানুয়ারির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে পূর্বানুমান করা হয়েছিল, সেটি দুই মাসের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে সংস্থাটি। দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল ভারত ও মালদ্বীপ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে ধারণা তাদের। তবে ২০২০ সালে তাদের অর্থনীতি ব্যাপক হারে সংকুচিত হয়েছিল।

মহামারির বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে আগের দেয়া পূর্বাভাস থেকে সরে এসেছে বিশ্বব্যাংক। জানুয়ারিতে তাদের ধারণা ছিল চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে দুই মাসের মধ্যে সেই পূর্বাভাস দ্বিগুণ করে এখন তারা বলছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

বুধবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস-২০২১: সাউথ এশিয়া ভ্যাকসিনেটস’ এ এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে।

এই প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভূটান, আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছর এবং আগামী অর্থবছরে বেশি হবে।

তবে করোনার প্রথম বছরে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়ে যাওয়া ভারত ও মালদ্বীপের প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হবে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে পূর্বানুমান করে, তার সঙ্গে অন্য দাতা সংস্থার পূর্বাভাসের পার্থক্য আছে। বিশ্বব্যাংক বরাবরই রক্ষণশীল হিসাব দেয়, যা বছর শেষে চূড়ান্ত হিসাবের সঙ্গে কখনও মেলে না।

গত এক দশক ধরেই এই বিষয়টি হয়ে আসছে।

বিশ্বব্যাংক এবার যে পূর্ভাবাস দিয়েছে, তা সরকারের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

গত বছরের মার্চে করোনা হানা দেয়ার পর সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসার পর গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশ।

দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ফাইল ছবি

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার করোনার টিকা পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করবে ।

তবে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছে তারা। করোনার বছরে গত বছর ব্যাপক হারে প্রবাসী আয় এলেও তাদের পূর্বাভাস এবার সেটি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

অর্থনীতি পুনরুদ্ধাদের হাতিয়ার টিকা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলছে, মূলত টিকাদান কর্মসূচিতে ভর করে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতি পেয়েছে।

টিকার দ্রুত প্রাপ্তি ও পর্যাপ্ততা এবং স্বাস্থ্য খাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধান হাতিয়ার হিসাবে কাজ করবে।

বাংলাদেশ প্রথমেই করোনার গণটিকা কার্যক্রম শুরু করা দেশগুলোর একটি। এরই মধ্যে ৫০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। সরকারের হাতে মজুদ আছে আরও ৫০ লাখের মতো।

ভারত থেকে কেনা তিন কোটি ৪০ লাখ টিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে কেবল ৭০ লাখ। আরও দুই কোটি ৭০ লাখ টিকা আসার অপেক্ষা। যদিও ভারত আপাতত টিকা রপ্তানি করছে না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার বলেন, করোনার কারণে বহু লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় এরই মধ্যে অর্থনৈতিক পুনরূদ্ধার ভালো ভাবে শুরু হলেও করোনা এখনও পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই পুনরুদ্ধার এখনও অনিশ্চিত।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুও খুলে দেয়া হবে ২০২২ সালেই। ফাইল ছবি

বাংলাদেশসহ গোটা অঞ্চলের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে টিকা প্রদান ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করার পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশকে টিকা কেনার অর্থ দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সব মানুষের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যানস টিমার বলেন, ‘করোনার টিকায় যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, টিকা দেয়ার ফলে তার চেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সুফল মিলেছে দক্ষিণ এশিয়ায়।’

তবে এ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সীমিত। এ অঞ্চলের জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়। তাই সীমিত সম্পদ দিয়ে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চলানো কঠিন হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়বে আরও

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আগামী বছরে আরও বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

সংস্থাটির ধারণা ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। পরের বছর তা আরও বেড়ে হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

কোন দেশ নিয়ে কত পূর্বাভাস?

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং পরের বছর ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে।

পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়েও পিছিয়ে থাকবে। এবার পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, যা পরের বছর ২ শতাংশে উন্নীত হবে।

নেপালে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, পরের অর্থবছর ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

বাস্তবায়ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

আফগানিস্তান চলতি বছর ১ শতাংশ, পরের বছর ২ দশমিক ৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় চলতি বছর ৩ দশমিক এবং পরের বছর ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।

ভুটানে চলতি অর্থবছর জিডিপি ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যেতে পারে। তবে দেশটিতে আগামী অর্থবছর তা বেড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

দুই সংকুচিত অর্থনীতির দেশে প্রবৃদ্ধি বেশি হবে

২০২০ সালে করোনা হানা দেয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। সেগুলো এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি সংকুচিত হয় ৮.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১০.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছে সংস্থাটি।

গত বছর অর্থনীতি ৩৮ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার মালদ্বীপও চলতি বছর ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। তারা বলছে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে দেশটির, যা পরের বছর হতে পারে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।

এ বিভাগের আরো খবর