সহিংস হরতালের পর দিন পুঁজিবাজারে ফিরেছেন বিনিয়োগকারীরা। লেনদেন বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ্ সব কটি খাতেই দেখা গেছে ইতিবাচক প্রবণতা। তবে খাতওয়ারী সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ফান্ডের সংখ্যা ৩৭টি। এর মধ্যে একটি ফান্ড দর হারিয়েছে ১০ পয়সা। তিনটি ফান্ডের দর পাল্টায়নি। বাকি সবগুলোরই দাম বেড়েছে। সর্বাধিক দর বাড়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই মিউচ্যুয়াল ফান্ড। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা পুঁজিবাজারে দেখা যায়নি।
২০২০ সালের শেষ দিকে এই খাতে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। বিভিন্ন ফান্ডের দাম ৫০ শতাংশের মতো বেড়ে গিয়েছিল। তবে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পুঁজিবাজার নিম্নগামী হওয়ার পর থেকে ফান্ডগুলোও দর হারাতে থাকে।
চলতি বছর এই ফান্ডগুলো বেশ ভালো মুনাফা করেছে। এখন পর্যন্ত যে দুটি ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তার মধ্যে একটি ফান্ড ইউনিট প্রতি ৭২.৫ পয়সা এবং একটি ফান্ড ১৬ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে এনসিসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট প্রতি এক টাকা ১২ পয়সা আর ভ্যানগার্ড রূপালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড শেয়ার প্রতি এক টাকা ৬৮ পয়সা মুনাফা করেছে।
গত বছর ফান্ড দুটি ফান্ড লোকসান দেয় যথাক্রমে ৪৮ পয়সা ও ১ টাকা ৮০ পয়সা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৭টির লেনদেনের চিত্র
নিয়ম অনুযায়ী মিউচ্যুয়াল ফান্ড যত আয় করতে বার ৭০ পয়সা নগদে বিতরণ করার কথা থাকলেও ভ্যানগার্ড রূপালী ব্যাংক ফান্ড কম লভ্যাংশ দিয়েছে গত বছরের লোকসানের সমন্বয় করার জন্য।
পুঁজিবাজারে যেসব ফান্ড রয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই গত বছর ব্যাপক লোকসান দিয়েছে। কিন্তু চলতি বছর এখন পর্যন্ত আকর্ষণীয় মুনাফা করেছে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডে দর বৃদ্ধিতে সূচকের খুব হেরফের হয় না। তবে এই খাতের সুদিনের দিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বেড়েছে সূচক।
এ নিয়ে চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনই বাজারে দেখা গেল ইতিবাচক প্রবণতা।
নতুন কোম্পানির দুটি শেয়ার হাতবদল
সোমবার থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করেছে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। প্রথম দিন বিমা খাতের এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ। ১০ টাকায় তালিকাভুক্ত শেয়ারটির প্রথম দিন ৫০ শতাংশ দর বৃদ্ধি হতে পারত। হয়েছেও তা।
তবে ১৫ টাকায় হাতবদল হয়েছে কেবল দুটি শেয়ারের। ফলে পরের কার্যদিবসে আরও ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ২২ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ব্যাংক-বিমায় খাতে মিশ্র প্রবণতা
শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা নগদ ও প্রতি ২০০ শেয়ারে একটি বোনাস শেয়ার দেয়ার খবরে ওয়ান ব্যাংক দর হারিয়েছে ২০ পয়সা।
১০ টাকা ৮০ পয়সার শেয়ারে এই লভ্যাংশ আকর্ষণীয় হলেও বিনিয়োগকারীদেরকে তা আকৃষ্ট করতে পারেনি।
এই খাতরে ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে বেশিরভাগই, যে প্রবণতা গত দুই কার্যদিবসের বিপরীতে।
১৩টি ব্যাংকের দর বৃদ্ধির দিন কমেছে ১১টির ও পাল্টায়নি সাতটির দর।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ২০টির লেনদেনের চিত্র
আগের দিন বিমা খাতে যে জোয়ার দেখা গিয়েছিল, সেই থাকেও দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। এই খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৩টির, কমেছে ১৮টির ও দর পাল্টায়নি আটটির।
এছাড়া প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির, দর কমেছে ৫টির আর দর পাল্টায়নি ২০টির।
বাজার বিশ্লেষকের বক্তব্য
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পুঁজিবাজারের সূচক বাড়লে বা লেনদেন বাড়লে এটা অস্বাভাবিক কিছু না। বরং পুঁজিবাজারের সার্বিক যে অবস্থা তাতে সূচক ও লেনদেন আরও বাড়া উচিত।’
ব্যাংক খাতে মহামারিকালে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা হলেও এই খাত নিয়ে খুব বেশি উচ্চাশা না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগাকরীদের মধ্যে ব্যাংক নিয়ে এই আতঙ্ক আছে, যে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো সময় সে কোনো সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এছাড়া খেলাপি ঋণ, অধিক শেয়ারের কারণে ব্যাংক খাতের প্রতি আগ্রহী হন না বিনিয়োগকারীরা।’
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৯ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে।
শরিয়াভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২১ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৪ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬ পয়েন্টে।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের সার্বিক চিত্র
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯২টির, কমেছে ৫৪টির ও পাল্টায়নি ১১২টির।
লেনদেন হয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৮২ কোটি টাকা। ফলে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২৫২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮৭ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৬৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৪টির, কমেছে ৫১টির ও দর পাল্টায়নি ৬২টির। লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৬ লাখ টাকা।